রক্তনিশান (শেষ পর্ব)- মোঃ ফাহাদ হোসেন ফাহিম

Rokto-Nishan-03

শিমুল ভাই সবাইকে প্রস্তুতি নিতে বলে। আজ রাতেই অপারেশন জয়বাংলার চূড়ান্ত আক্রমণ হবে। এক নং ক্যাম্প বনের খুব ভেতরে। চারদিকে খাইল্যার ঝোপঝাড়। আখের মত দেখতে এক ধরনের বন্য শক্ত গাছের নাম খাইল্যা। আকাশের অবস্থা দেখে ওরা আঁচ করতে পারে আজকে হয়তো কৃষ্ণপক্ষের শেষ রাত। রাতে ওরা তিন দিক থেকে আক্রমণ করবে মিলিটারি ক্যাম্পে। আর অন্যদিক থেকে স্থলে আক্রমণ করবে মুক্তিবাহিনীর দল। 

যামিনীর চাদর ধরার বুকে লুটিয়ে পড়তেই ডিঙি নৌকা রেখে ওরা উঠে পড়ে কমান্ডার শিমুল ভাইয়ের  বড় একটা বজরাতে। সেখান থেকে ওদের দুজনকে উঠতে হয় আরেকটা ডিঙি নৌকাতে। আগের চেয়ে অনেক ভালো অস্ত্র চালানো শিখে গেছে ও। এর আগের একটা অপারেশনে তিনজন পাকিস্তানি মিলিটারিকে খতম করেছিল। এবারও ভালো কিছু করার প্রত্যয় নিয়ে শুরু হয় ওর যাত্রা। 

রক্তনিশান পর্ব ০১ পড়ুন এখানে

রক্তনিশান পর্ব ০২ পড়ুন এখানে

মধ্যরাতের শেষভাগে শুরু হয় আক্রমণ। অপারেশন জয়বাংলা। ওপাশ থেকে বোম মারা হলে ওরা গুলি চালাতে চালাতে এগিয়ে যেতে থাকে। শুরু হয় যুদ্ধের দামামা। ইতোমধ্যে শহর থেকে অনেক মিলিটারিও চলে এসেছিল ক্যাম্পে। নিশু ভাই একে একে দশটা গুলি ছুড়ে মারে। দশজন সৈনিক বেহুশ। লুটিয়ে পড়ে সাথেসাথে। মিলিটারিদের লক্ষ্য করে গুলি চালাতে থাকে ও। পাঁচজন মিলিটারি বেহুশ। লুটিয়ে পড়ছে নদীতে। তীব্র স্রোতে সাথেসাথে বিলীন হয়ে যায় লাশ। হায়নাদের রক্তের লাল চাপা পড়ে যায় কৃষ্ণপক্ষের কালোতে। এক পর্যায়ে বুকে গুলি লাগতেই লুটিয়ে পড়ে ও। যুদ্ধ একেবারে শেষের দিকে। তড়িঘড়ি করে একটা জলজ ঝোপের আড়ালে গিয়ে নিশু ভাই ওর বুকে হাত দিয়ে দেখে রক্ত। মুমূর্ষু অবস্থায় ও বলতে থাকে, “বুক থেইকা পতাকাডা বের করেন নিশু ভাই। আমার হাতে দেন। আমি বিদ্ধ হইছি সমস্যা নাই, আমার পতাকার যেনো কিছু না হয়। পতাকাডা আমার মায়েরে দিয়েন। আমার রক্ত মাখা আছে এইনে। স্বাধীনতার রক্তনিশান।”

এদিকে যৌথ বাহিনীর আক্রমণে ফজরের আগেই মিলিটারিরা খতম। ও ঝোপের আড়াল থেকে শুনতে পায় জয় বাংলা ধ্বনি। ওর বুঝতে কষ্ট হয় না যে, সফল হয়েছে ওদের অপারেশন। অপারেশন জয়বাংলার সাথে সাথে বুঝি স্বাধীন হয়ে গেছে পুরো দেশটা। নিশু ভাই কাঁদতে কাঁদতে ওর বুক থেকে পতাকাটা বের করে হাতে দেয়। দিঘল পতাকাটা খামচে ধরে ও অনুভব করতে লাগে মুক্তির স্বাদ। এর নামই বুঝি স্বাধীনতা। সফল হয়েছে ও। সফল হয়েছে অপারেশন। স্বাধীন হয়েছে দেশটা। ও হাসতে হাসতে বলতে থাকে, ” পতাকাডা মায়েরে দিয়া কইয়েন আমি পারছি, আমি পারছি…” এদিকে কেটে গেছে কৃষ্ণপক্ষের অন্ধকার। ভোরের আলো পৃথিবীকে যতই আছন্ন করতে থাকে, ততই নিঃশেষ হতে থাকে ওর প্রাণ বায়ু।

মন্তব্য করুন