রক্তনিশান (পর্ব ০২)- মোঃ ফাহাদ হোসেন ফাহিম

Rokto-Nishan-02

এক মাসে ওরা সফল হয়ে গেছে অনেকটা। ওদের কাজ ভোর হবার আগেই এক নং মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে পিস্তল গোলাবারুদ পৌঁছে দেয়া। অপারেশন জয়বাংলা পরিচালিত হয়েছে বন্দরের এক নং মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প থেকেই। শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম পাড়ে সদর, পূর্বপাড়ে বন্দর। বন্দর আর সদরকে আলাদা করেছে শীতলক্ষ্যা নদী। আর সামান্য বাঁয়ে বন্দর ঘেঁষে চর ধলেশ্বরী পর্যন্ত মেঘনা নদীর বিস্তার। বন্দর এখন শত্রুমুক্ত। নারায়ণগঞ্জ সদরকে শত্রুমুক্ত করতেই অপারেশন জয়বাংলা। তিনমাস হয়েছে ও মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যুক্ত হয়েছে। ও শহরের ছেলে। ডাকনাম কাজল। ঢাকা কলেজে ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে উঠেছে এবার। ওর দাদু বাড়ি বন্দরে, নানী বাড়ি গেন্ডারিয়া। বাবা মা ভাইবোন সবাই যেদিন  চলে গিয়েছিল ভারতে, ও দেখতে এসেছিল দাদুকে। 

কিন্তু ওর সামনেই হানাদারদের গুলিতে শহিদ হয় আদরের দাদু। চাইলে অন্য সবার মতো পালিয়ে নিজেও ভারতে চলে যেতে পারত ও। বাঁচাতে পারতো নিজের জীবন। কিন্তু কিসের টান যেন আঁটকে রেখেছে ওকে। ওর কাছে জীবনের চেয়ে মা বড়ো, মায়ের চেয়ে দেশমাতৃকা। 

রক্তনিশান পর্ব ০১ পড়ুন

ঠিক এক মাস আগের কাঁটা পায়ের রক্ত দেখে ভীত হওয়া ছেলেটা আজকে গণকবরের পাশে রাত কাটাতেও ভয় করে না। ও বিশ্বাস করে গণকবরের মানুষ মরে না। মুক্তিযোদ্ধারা মরে না। এখানে অন্য সব শহীদদের সাথে শায়িত আছে ওর দাদুও। মায়ের কথা মনে পড়লে ওর চোখে জল ঝরে। কিন্তু আশেপাশে রক্তের নদীতে লীন হয়ে পড়ে ওর চোখের জল। মনেমনে ভাবে, দেশকে স্বাধীন করতেই হবে। সফল করতে হবে অপারেশন জয়বাংলা। ও অপেক্ষায় থাকে, দেশ স্বাধীন করে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনবে বাবা মা ভাইবোন সবাইকে। 

সকাল হবার আগেই ওরা মিলিত হয় এক নং মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে। কমান্ডার শিমুল ভাই ওদেরকে জানিয়েছে, শীঘ্রই সফল হবে অপারেশন জয়বাংলা। ইতোমধ্যে সদরের কয়েকটা গ্রামও মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে চলে এসেছে। অবশ্য নারায়ণগঞ্জ ঢাকার খুব কাছাকাছি হওয়ায় শহর থেকে মিলিটারি চলে আসার আশংকাও রয়েছে। তবে ভয় পায় না ওরা।শীতলক্ষ্যা নদী ঘেঁষে মেঘনা নদী মিলিত হয়েছে মুন্সীগঞ্জের সাথে। মুন্সীগঞ্জ থেকে নৌপথে পিস্তল গোলাবারুদ এসেছে চর ধলেশ্বরীতে। পাঠিয়েছে মুন্সীগঞ্জ গেরিলা বাহিনী। আর সেই অস্ত্রসস্ত্র মূল ক্যাম্পে পৌঁছে দেওয়াই ছিল ওদের দু’জনের দায়িত্ব। অবশ্য ওরা সফলভাবে পালন করেছে সে দায়িত্ব। এবার আক্রমণের পালা। রেডিওতে ওরা শুনেছে ইতোমধ্যে যশোর নাকি হানাদার মুক্ত হয়ে গেছে। খুশিতে আত্মহারা হয়ে নিশু ভাই বলে উঠে, ” আমরাও পারমু। আর তো কয়ডা দিন। পতাকা উড়াইয়া উড়াইয়া হেইদিন কমু – জয় বাংলা, বাংলার জয়।” নিশু ভাইয়ের দেখাদেখি জোর গলায় ও বলে উঠে, ” জয় বাংলা।” 

চলবে…

মন্তব্য করুন