
কৃষ্ণপক্ষের রাত। ক্রমাগত বেড়েই চলছে আঁধারের তীব্রতা। আরেকটু এগুলেই শীতলক্ষ্যা নদী। ওপারে মিলিটারি ক্যাম্প। স্রোতোবহা নদীতে কোনরকমে এগিয়ে চলছে ওদের ডিঙি নৌকাটা। নিশু ভাইকে অবিরাম আকাশপটে তাকিয়ে থাকতে দেখে ও জিজ্ঞেস করে, ” কি দেখেন ভাইজান?” “পোলাডারে।” ” আসমানে?” ” হ। মানুষ মরলে নাকি তারা অইয়্যা যায়। ঐযে নিঃসঙ্গ একটা তারা। ছোড তারা। মিটমিট জ্বলে, ঐডাই আমার পোলা।” ও চুপ করে থাকে, কিছু বলে না। ” ডরাইলি?” ” কিসের ডর ভাইজান?” “আন্ধাইর দেকলে না ডরাইতি! এখন ডর লাগে না?” ” না ভাইজান। যেদিন থেকে সিদ্ধান্ত নিছি দেশের জন্য যুদ্ধ করমু, সেদিন থেকে ডর পলায় গেছে। ডরাইলে কি দেশ স্বাধীন করা যায়?” নিশু ভাই বিস্মিত হয়ে ভাবে, দেশপ্রেমের শক্তি মানুষের অভ্যাসের চাইতেও বড় হয়। মাংস ছাড়া যেই পোলাডা ভাত মুখে তুলতো না, হেই পোলাডা এহন আলুর ভত্তা খাইতেও সংকোচ বোধ করে না। রাজার হালে বড় অওয়া পোলাডা এখন পেকের মধ্যে ঘুমায়। ছোডবেলা থেকে কুত্তারে ভয় পাওয়া পোলাডা আজ পাকিস্তানি হায়নাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামেছে। এইডাই বুঝি দেশপ্রেম!
প্রকাণ্ড একটা ঢেউ নৌকায় লাগতেই পুনরায় সতর্ক হয়ে পড়ে নিশু ভাই। ও ঠিকমত নৌকা বাইতে পারে না। তাই রাতে নৌকা চালানোর দায়িত্ব নিশু ভাইয়ের। এক মাস হলো মারা গেছে নয়ন। নিশু ভাইয়ের একমাত্র ছেলে। পাকিস্তানিরা দেওভোগ গ্রামের অর্ধেক মানুষকেই মেরে ফেলেছে। শিশু, বৃদ্ধ, নারী, যুবক কাউকেই ছাড়েনি। জুম্মাবারের মধ্যরাতে হামলা চালিয়েছিল গ্রামে। কাপুরুষ ছাড়া কি ঘুমন্ত নিরস্ত্র মানুষের উপর কেউ হামলা চালাতে পারে!
ওরা মুক্তিযোদ্ধা। চর ধলেশ্বরী থেকে শীতলক্ষ্যা পর্যন্ত এখন ওদের দখলে। নিশু ভাইয়ের শশুরবাড়ি দেওভোগ গ্রামে। মাস খানেক আগে নয়নকে রেখে এসেছিল নানীর কাছে। কিন্তু কপালের লিখন যায় না খণ্ডন। অন্ধকার এ রাতে ও অবশ্য পাকিস্তানিদের কপালের কথাই ভাবছে। ও স্বপ্ন দেখে একদিন স্বাধীন হবে এদেশ। সফল হবেই ওদের অপারেশন। সেদিন কি কাপুরুষদের পালাতে দেয়া হবে? মোটেই না। ও শক্তি পায়। স্রোতের সাথে সাথে জঙ্গলের পথ ধরে এগুতে থাকে ওদের নৌকা।
চলবে……
[…] কল্পকাহিনি ফিকশন সৃজনশীল গল্প […]
[…] রক্তনিশান পর্ব ০১ পড়ুন এখানে […]