গোয়া ভ্রমণ বৃত্তান্ত

Goa

গোয়া, ভারতের পশ্চিম দিকে আরব সাগরের তীরে অবস্থিত এই ছোট্ট রাজ্যটি পৃথিবী বিখ্যাত। গোয়া শুধু একটা ঘুরতে যাওয়ার জায়গা না, স্বাধীনতার অন্য আরেক নাম। গোয়া হল সেই স্বাধীনতা যা আপনাকে নিত্যকর্ম থেকে এক লাফে নিয়ে আসতে পারে অসীমের সামনে। অসীম যা নাকি অতুল মনির সন্ধানে, সমুদ্রের মাঝে গিয়ে ঝাঁপ দেয় এক মারিয়ানা খাতে। আচ্ছা না হয় মানলাম মারিয়ানা খাত অনেক দূরের কথা, আরব সমুদ্রের কোন খাত ই বটে।

সপ্তাহের শেষে গোয়ার আশেপাশের বড় শহর গুলি, এই যেমন ধরুন বোম্বে বা ব্যাঙ্গালোর, যেখানে একবিংশ শতাব্দীর মিলেনিয়াল ভারতীয়দের হিপহপ কর্মক্ষেত্র, সেখান থেকে ন্যাশনাল হাইওয়ে ৬৬ ধরে বেরিয়ে আসে অনেকগুলি চারচাকা। আর যদি সেই সপ্তাহ শেষের দুদিনের ছুটির সাথে আর একটা ছুটি যোগ করে নেয়া যায় তাহলে তো সোনায় সোহাগা।

তিনদিন ধরে সমুদ্রের ধারে নুনমাখা জলে চান আর সুজিতে ডোবানো পমফ্রেট ভাজা- এর আরেক নাম জীবন। হ্যাঁ তার সাথে অবশ্যই গোয়ার বিখ্যাত বিয়ার বোতল একটি চেয়ে নেবেন। আপনি যদি একটু সাহসী হোন তাহলে বিয়ার ছেড়ে গোয়ার নিজস্ব জিআই চিহ্নিত দেশী মদ ফেনী পান করে দেখতে পারেন। কাজু পচিয়ে তৈরি হয় ফেনী। ৫০০ গ্রাম বোতলের দাম মোটামুটি ২০০ টাকা থেকে শুরু। নিউটন নামে সুপার মার্কেটে আসল জিনিস বিক্রি হয়।

গোয়ার তুমুল জনপ্রিয়তার জন্য, ইন্ডিয়ান রেলওয়ের কৃতিত্ব কিছু কম নয়। মারগাও আর ভাস্কোডাগামা এই দুটি বড় স্টেশন ভারতের সমস্ত প্রান্তের সাথে গোয়ার সরাসরি যোগাযোগ তৈরি করেছে। ব্যাঙ্গালোর থেকে তো গোয়া যাওয়ার জন্য আমার সবথেকে প্রিয় উপায় হল রাতের ট্রেন। ধীরে ধীরে সেই ট্রেন পশ্চিমঘাট পর্বতের গা বেয়ে উঠে যায় এক মেঘমালাপুর। মাঝে মাঝে, বিশেষত বৃষ্টির সময়, পশ্চিমঘাট পর্বতকে দেখে মনে হয় দার্জিলিংয়ের হারিয়ে যাওয়া ভাই। ঘনসবুজ গাছ যার দিকে তাকালেও নাকে আসে বৃষ্টির গন্ধ, তার মধ্যে খেলা করে মেঘ। মাঝে একবার হঠাৎ করে দেখা দেয় দুধসাগর ঝরনা। বিশাল সেই ঝরনা বর্ষাকালে বিরাট আকার ধারণ করে।

বর্ষা না থাকলে একদিন চলে আসুন না সাউথ গোয়া। সারাদিন ধরে ট্রেকিং করে উঠে চলুন দুধসাগর ঝরনার প্রান্তে। সাঁতারে ফটো হলে ঝাঁপ দিয়ে দিন প্রকৃতির কোলে তৈরি সুন্দর জলাধার গুলিতে।

আর যদি সময় কম থাকে তাহলে একটা প্লেনের টিকিট কেটে ফেলুন ডাবোলিম এয়ারপোর্টের জন্য। এটি একটি আর্মি এয়ারপোর্ট। ছবি তোলা এখানে নিষিদ্ধ। ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইট আসে না এখানে। তবে হ্যা, আপনি যদি রাশিয়া থেকে চার্টার্ড প্লেন নিয়ে আসতে চান, ডাবোলিমের দরজা যা আপনার জন্য খোলা। এয়ারপোর্ট এর বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে কদম্ব বাস। এসি বাস। ১০০ টাকায় পৌঁছে দেবে পানাজি বা ক্যালাঙ্গুটে। সাথে যদি অনেক বেশি পোটলা থাকে আর অনেকগুলি বন্ধু, তাহলে ২০0০ টাকা দিয়ে একটি গাড়িও বুক করে নিতে পারেন।

এখানে ওলা বা উবার চলে না, তবে গোয়ামাইলস অ্যাপটি ডাউনলোড করে দেখতে পারেন। উবারের মত এত সুন্দর সার্ভিস নয় তবে সকাল বিকেলে গাড়ি পাওয়া সম্ভব। নেট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে আগে থেকেই টাকা দিয়ে দিতে পারবেন।

যাই হোক আজকে আমি গোয়ার গল্প বলতে এসেছি। গোয়া আমি গেছি প্রায় ছ-বার। ছুটে বেড়িয়েছি গোয়ার উত্তর থেকে দক্ষিণে সবকটি সমুদ্র সৈকতে। কিন্তু শুধু সমুদ্র সৈকত না, গোয়ার পাতায় পাতায় লেখা আছে সাড়ে চারশ বছর পুরনো পর্তুগিজ ঐতিহ্যের বিভিন্ন গল্প। মান্ডবী নদীর উপরে যে দ্বীপগুলি অবস্থিত তার গল্প তো প্রায় অজানা। কিছুদিন আমি থেকে এসেছি এরকমই একটি দ্বীপ, দীভর নামে।

মন্তব্য করুন