রিজনস টু স্টে এলাইভ

Reasons to stay alive

লেখক: ম্যাট হেইগ

অনুবাদ: হাসান আযীয, এম এস আই সোহান

ডিপ্রেশন ব্যাপারটা আসলে সেভাবে দেখানোর মতো কিছু না, অন্যান্য রোগের ক্ষেত্রে যেমন বিভিন্ন কারণ থাকে, এখানে সেরকম স্পেসিফিকভাবে কোনো কারণ দেখানো যায় না। আমার কাছে যেটা আমার ডিপ্রেসড হওয়ার কারণ, আরেকজনের কাছে তা একেবারেই কিছু মনে না হতে পারে। তার মনে হতেই পারে যে, ‘আরে এতে আবার এত ভাবনার কী আছে, দুঃশ্চিন্তার তো কিছু দেখি না। দিব্যি ভালো আছো, খাচ্ছো, দাচ্ছো, ঘুমাচ্ছো, এর থেকে আরো কত খারাপ অবস্থানে আছে মানুষ।’ ব্যাপারটা আসলে আরেকজন কী অবস্থায় আছে সেটার উপর ডিপেন্ড করে না, আমি কী অবস্থায় আছি, আমাকে কীসে পেইন দিচ্ছে তখন শুধু এটাই ম্যাটার করে। একটা মানুষের সবকিছু থাকা সত্ত্বেও সে ডিপ্রেসড হতে পারে। বাইরে থেকে দেখতে ঠিকঠাক, আড্ডাবাজ, সবাইকে নিয়ে হেসে খেলে বেড়াচ্ছে দিনশেষে সেই মানুষটাও ডিপ্রেশনে ভুগতে পারে। মনে হতে পারে, এই জীবনের কোনো মানে নেই।

“যদি ভেবে থাকেন ডিপ্রেশনে আক্রান্তরা সুখ চায়, ভুল ভাবছেন। সুখের বিলাসিতার স্বাদ পাওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই। ডিপ্রেশনে আক্রান্তরা কেবল মুক্তি চায়। আক্রান্ত ব্যক্তি চায় মন থেকে পালাতে। স্বাভাবিক হতে। অথবা, যেহেতু স্বাভাবিক হওয়া অসম্ভব, সেহেতু শূন্য হতে। আর শূন্য হওয়ার একমাত্র পথ মৃত্যু।”

‘দিনশেষে আত্মহত্যার চেয়ে বেঁচে থাকতেই বেশি সাহস লাগে।’ (আলবেয়ার কাম্যু)

আর এই সাহসটাই মানুষ শেষপর্যন্ত দেখাতে পারে না। একটা সময় এসে ভেঙে পড়ে।

এত খারাপ একটা সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম, যা বলার মতো না। সেই মুহূর্তে একজন এই বইটি সাজেস্ট করেছিল। মেন্টাল হেলথ বিষয়ক বায়োগ্রাফি ‘রিজনস টু স্টে এলাইভ’ । ম্যাট হেইগের লেখা। তার নিজের জীবনের ডিপ্রেশনের অভিজ্ঞতার আলোকে লেখা এই বইটিতে তিনি ডিপ্রেশনে আক্রান্ত থাকাকালীন তার অনুভূতি কেমন হয়েছিল, এর ফলে তিনি কী কী করার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন এবং কীভাবে এ পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠেছিলেন, সেসব বিষয় সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন।

ডিপ্রেশন, প্যানিক অ্যাটাক এগুলো যে কতটা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে শুধু যার এগুলো হয় সেই বুঝতে পারে। এই বইয়ে এর কিছু বর্ণনা দেওয়া আছে। বইটি পড়ার পর মনে হয়েছে আগের থেকে একটু হলেও ভালো আছি। আসলে একই ধরনের কথা আমাদেরকে ভালো ফিল দেয়। আমারই মতো একজন কিংবা কয়েকজন একই সিচুয়েশনের মধ্য দিয়ে গেছে, আমার মতো করেই তারা ভেবেছে, এরকম পরিস্থিতি পার করেও তারা অনেক ভালো ভালো কাজ করেছে, সফল হয়েছে। এই কথাগুলো আবারো বেঁচে থাকতে অনুপ্রেরণা জোগায়।

মেন্টাল হেলথ বিষয়ে আমাদের দেশে বই খুব কম, এই নিয়ে মানুষজন কথাও খুব কম বলে। কিন্তু এটা যে কতটা জরুরি!

বইটি অনুবাদ করেছে টিম ট্রান্সলেটর। টিম ট্রান্সলেটরের অনুবাদ আমার বরাবরই ভালো লাগে। এটাও ভালো লেগেছে, তবে দু-একটা জায়গায় একটু অন্যরকম মনে হয়েছে। এছাড়া এই বইটাতে বেশ কিছু বানান ভুল পেয়েছি, যেমন: কেউকে, পায়চারী, বৈকি, যাবত, পেলেছি।

শেষে শুধু এটুকুই বলবো, বইটি পড়ে দেখতে পারেন। আপনার যদি কখনো মনে হয় যে, আপনি ডিপ্রেশনে আছেন,(যদিও বেশিরভাগ মানুষই প্রথমে বুঝতে পারে না যে সে ডিপ্রেসড হয়ে পড়ছে) বইটি পড়লে একটু হলেও নিজের মাঝে স্বস্তি ফিল হবে। মনে হবে যে আপনার কথাগুলোই এখানে বলা হয়েছে। কিংবা বইটি পড়তে পারেন, সচেতনতার জন্য বা আপনার আশপাশের কোনো মানুষের জন্য, সে সময়ে তার অনুভূতি কেমন হয়, কী অবস্থার মধ্য দিয়ে দিনপাত করে, সেগুলো সম্পর্কে একটু হলেও ধারণা পাবেন।

ইমেজঃ সংগৃহীত

মন্তব্য করুন