অগ্নিরথ

kjhglf

লেখক: সমরেশ মজুমদার

কলকাতার একান্নবর্তী পরিবারের ছেলে সায়ন। লিউকেমিয়া রোগে আক্রান্ত। চিকিৎসার জন্য আসে নিরাময়ে। ‘নিরাময়’, পাহাড়ের বুকে সমতলদের তৈরি একটি ছোট্ট হাসপাতাল। মূলত যারা লিউকেমিয়াতে আক্রান্ত তাদের একটি সতেজ পরিবেশ, প্রকৃতির মাঝে রেখে চিকিৎসা প্রদানের জন্যই পাহাড়ে এই হাসপাতালটি গড়ে তোলেন ডক্টর আঙ্কেল। এই নিরাময় আর সায়নকে ঘিরেই মূল গল্প আবর্তিত। প্রাণ প্রাচুর্যে পরিপূর্ণ একটি ছেলে সায়ন। সে জানে সে বেশিদিন বাঁচবে না তারপরেও এরই মধ্যে যতটা পারে, যেভাবে পারে মানুষের উপকার করতে চায়। সেবাই পরম ধর্ম তা মানে। সমতল আর পাহাড়ের মানুষের লড়াই চিরদিনের। সেই

সমতল আর পাহাড়ের মধ্যে সায়ান একটা যোগসূত্র হয়ে ধরা দেয়। তাকে ঘিরে রটতে থাকে বিভিন্ন গুজব। পাহাড়ের প্রায় সবাই সনাতন ধর্মাবলম্বী সায়নের মাঝে দেখতে পায় যিশুর রূপ। কেন?

অন্যদিকে কলকাতায় সায়নের পরিবার, রায়বাড়ি।রায়বাড়ির কথা বলতে হলে,প্রথমেই বলতে হয় রায় বাড়ির ঐতিহ্য সম্পর্কে। ঐতিহ্যের মধ্যে পড়ে শত বছরের পুরাতন কুসংস্কার যা আকড়ে ধরে বেঁচে আছে কতগুলো পরিবার। যেখানে প্রতিটি নারী চরিত্র বেঁচে আছে শুধু নারী হিসেবে মানুষ হিসেবে নয়। আর এই ঐতিহ্য টিকিয়ে রেখেছেন ‘বড় মা’। বাড়ির সকল পুরাতন কুসংস্কারের বিপক্ষে হেনা, নন্দীনী, ছোট কাকা, সায়ন। তারা নিরবে লড়তে থাকেন নিজেদের লড়াই। গল্পের অনেকখানি জুড়ে আছে রায় বাড়ির কথা।

আর আছে একজন বিদেশিনীর কথা যে অনেক বছর আগে দেখেছিল মিস্টার ব্রাউনকে। জীবনের পরন্ত বেলাতে এসে সে খোঁজ করে মিস্টার ব্রাউনকে। তার মতে মিস্টার ব্রাউনের মত পুরুষ সে সারাজীবনে আর দ্বিতীয়টি দেখে নি। তাই তার সঙ্গে দেখা করতে আসে পাহাড়ে আর এসেই ওখানকার মানুষের দুঃখ দূর্দশার সাথে জড়িয়ে পড়ে আর তার সাথে এক হয়ে কাজ করে সায়ন।

পাঠ প্রতিক্রিয়া: প্রায় সম্পূর্ণ বইটাই ভাল লেগেছে। বইটি নিয়ে লেখার ছিল অনেককিছু অথচ শেষটা তা হতে দিল না। ব্যক্তিগতভাবে এই বইয়ের শেষটা আমার ভাল লাগেনি।

হ্যাঁ, এটা ঠিক যে যেরকম পরিণতি দেখানো হয়েছে এতে করে বইয়ের নামকরণটা সার্থক হয়েছে।

শেষটা যদি আরেকটু অন্যরকম হতো! একটা মাস্টারপিস বই হতে পারতো।

আমরা সবাই কোনো না কোনোভাবে লেখা থেকে বা যেকোনো জায়গা থেকে একটা পজিটিভ ভাইব চাই। এই বইয়ের প্রায় সম্পূ্র্ণটা জুড়ে এরকম ছিল। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা নির্বিশেষে সবকিছুর উর্ধ্বে ছিল মানবিকতা।

কিন্তু শেষের পরিণতিটা এমনভাবে দেখানো হয়েছে যে কিছুক্ষণের জন্য পাঠক স্তব্ধ হয়ে যাবে । হ্যাঁ, বাস্তব জীবনে দূর্ঘটনা হঠাৎ করেই আসে। কিন্তু গল্প উপন্যাসে আমরা সিকোয়েন্স অনুযায়ী কোন কিছু ঘটাকেই পছন্দ করি।

আবার এমনও হতে পারতো যে হঠাৎ করেই দূর্ঘটনা ঘটলো কিন্তু সেই দূর্ঘটনার কোনো বিচার বা এই নিয়ে কথা, এসব যদি উল্লেখ থাকতো! ওখানেই ওভাবে শেষ করাটা আমার ভাল লাগেনি। কোনো খারাপের জয় এভাবে মানা যায় না। তাই বলা যায় শেষটা ছাড়া বাকি সবকিছু মনের মত ছিল।

ইমেজঃ সংগৃহীত

মন্তব্য করুন