অঙ্গার

60173589._UY630_SR1200,630_

লেখিকা : সায়ীদা নুহা

সাদি, জমিদার বংশের ছেলে। পারিবারিক ভাবে আয়েশার সাথে তার বিয়ে হয়। কোন এক কারনে তারা জমিদার বাড়ি ছেড়ে শহরে থাকতে শুরু করে। মূল ঘটনা তখন থেকেই শুরু। আয়েশার সাথে একের পর এক বাজে ঘটনা ঘটতে শুরু করে। একাধিক বার হসপিটালে ভর্তি করানো হয় তাকে। হসপিটালের ডাক্তারের কথায় তারা অন্য ধারায় চিকিৎসা শুরু করে। কী ঘটেছিল আয়েশার সাথে? শেষ পযর্ন্ত তার কী হয়েছিল? জানতে হলে আপনাকে ‘অঙ্গার’ পড়তে হবে।

প্রথমেই আসি ভালো লাগায়, বইয়ের প্রচ্ছদ আমার দারুণ লেগেছে। ‘অঙ্গার’ নাম এবং বইয়ের বিষয় বস্তুর সাথে প্রচ্ছদের দারুণ মিল। বইয়ের বাইন্ডিং এবং পেইজ কোয়ালিটি উন্নত। সবচেয়ে যে বিষয়টি ভালো লেগেছে সেটি হচ্ছে বানান। বইয়ে বানান ভুল নেই বললেই চলে। দুই একটা যা আছে তা টাইপিং মিসটেক।

এবার অন্য কথায় আসি, গল্প এবং উপন্যাসে পার্থক্য কোথায়? পার্থক্য দুটো জায়গায়। এক আকারগত দুই বিষয়বস্তুরগত। ৭৮ পৃষ্টার বইকে আকারগত দিক থেকে গল্প বলা বেমানান। উপন্যাসও বলা চলে না। একে নভেলা বললে পারফেক্ট হবে। তবে বিষয়বস্তু বা চরিত্রগত দিক থেকে এই বইকে আমার নভেলা বলতে একটু কষ্ট হবে। তার কারন হলো বইয়ের বিষয়বস্তু গল্পের মতো সংক্ষিপ্ত। কিছু চরিত্র বিন্যাসে লেখিকা দক্ষতা দেখাতে পারেনি। যেমন আফরা চরিত্র। এই চরিত্র কে এবং সাদিদের কেমন আত্নীয়, এসব প্রশ্নের উত্তর নেই। গল্পে এই চরিত্র কেন আনা হয়েছে সেটা আমার কাছে পরিষ্কার নয়।

কিছু লেখক লেখাকে টেনে রাবারের মতো লম্বা করে। অঙ্গার বইয়ে এমনটা না থাকলেও গল্প দ্রুত এগিয়েছে। এতই দ্রুত যে এক পৃষ্ঠাতেই তিন বার দৃশ্য বদল হয়েছে। এর বাইরে কিছু দৃশ্য আমার কাছে অবাঞ্চিত মনে হয়েছে। যেমন ৯ নাম্বার পৃষ্ঠার প্রথম দৃশ্য। লেখিকা চাইলে পুরোটা শেষ করতে পারত অথবা না দিলেও পারত।

বইয়ে অনেকগুলো অসঙ্গতি আছে। সেগুলো নিয়ে একটু বলি। শুরুতেই বলি ফ্ল্যপ নিয়ে। ৬৮ পৃষ্টার লেখা ফ্ল্যপে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, আয়েশা পাত্তা না দিয়ে ঘুমাতে চেষ্টা করে। মানে ঘুমায়নি। অথচ এক লাইন পড়েই বলা হয়েছে আয়েশার ঘুম ভেঙ্গে যায়। যে ঘুমায়নি তার ঘুম কীভাবে ভাঙ্গে?

লেখার অন্যতম বিষয় হচ্ছে রিয়েলস্টিক হতে হবে। অঙ্গার যেহেতু সাই-ফাই বা ফ্যান্টাসি জনরার না সুতরাং রিয়েলস্টিক লেখা আশা করা অন্যয় কিছু নয়। রাতে আয়েশাকে কেউ ডাকছে। কিন্তু আয়েশা পাত্তা দিচ্ছে না। উল্টো কানে আঙ্গুল গুঁজে ঘুমানোর চেষ্টা করেছে। অথচ কয়েক দিন ধরে তার সাথে অতিপ্রাকৃত ঘটনা ঘটছে। এরকম অবস্থায় ভয় পাওয়া কিংবা লাফ দিয়ে উঠে বসার কথা ছিল।

৭ নাম্বার পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, ধাত্রীকে নিয়ে সবার কৌতূহল। অথচ কিছু সময় বাদেই জমিদার বাড়ির সবাই তার কথা ভুলে গেল!

১৬ নাম্বার পৃষ্টায় আছে, সাদি শিক্ষকতার সাথে বেশি দিন হলো যুক্ত হয়নি। অথচ চার বছর ধরে সে শিক্ষকতা করছে!

এছাড়া লিয়াকত আলীকে প্রিতম, কাপড়কে কাগজ বলা হয়েছে। সব জায়গায় আছে সাদি আর আয়েশার বিয়ের চার বছর হয়েছে। চার বছরই সঠিক। কারন আয়েশার তির বার গর্ভপাত হয়েছে। অথচ ৩৮ পৃষ্ঠায় ২ বছর উল্লেখ আছে।

দুই একটা বাক্য অসম্পূর্ণ। উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি ৭১ পৃষ্টার লেখা। ‘মুচকি হাসি হেসে ধুরন্ধর নমনীয় গলার স্বর তার।’ এই লাইন আমার কাছে ঘোলাটে।

সঠিক উপমা লেখাকে সুন্দর করে তুলে। অঙ্গারে কিছু ভুল উপমা সাথে ভুল তথ্য ও ভুল সম্বোধন পরিলক্ষিত হয়।

যেমন মধ্যবয়স্ক নারীকে ললনা, রমনী বলা।

হাসপাতালে ঝকঝকে সাদা নিয়ন আলোর কথা উল্লেখ আছে। আসলে আমরা বাসা বাড়িতে যেসব বাল্ব ব্যবহার করি তা বেশিরভাগ আর্গন গ্যাস দিয়ে তৈরি। নিয়ন গ্যাসের আলো ডিম লাইটে ব্যবহার হয়। যদিও এর মধ্যে বিভিন্ন গ্যাস মিশিয়ে বিভিন্ন রংয়ের করা যায়।

দুটো উপমার কথা বলি, “সব কিছু সুন্দর চলছিল। তুরুপের তাসের মতো স্বপ্ন খেই হারিয়ে ফেলল।”

কথা হচ্ছে, তুরুপের তাস ইংরেজিতে যেটাকে ট্রাম্প কার্ড বলা হয় যেটি কী? আমার মতো যাদের হালকা কার্ডের নেশা আছে তারা বিষয়টি ভালো বুঝবে। তুরুপ হচ্ছে এমন একটি কার্ড যা পুরো খেলাকে ঘুরিয়ে দিতে পারে। হেরে যাওয়া ম্যাচ জিতে যাওয়া যায়। বস্তুত খেই হারিয়ে ফেলা খেলাকে নিজের করে পেতে তুরুপের ব্যবহার। অথচ লেখিকা পুরো উল্টো ক্ষেত্রে উপমা দিয়েছে।

“মৃগীরোগীর মতো হাঁপাচ্ছে।” মৃগীরোগী হাঁপায় না। তাদের খিচুনী হয়। এটিও একটি ভুল উপমা।

(!) চিহ্ন কারনে অকারনে অযথা অত্যধিক ব্যবহার হয়েছে। (…) তিনটি ডট দিয়ে কথা থেমে যাওয়া বুঝায়। অঙ্গার বইয়ে এটির ব্যবহারও অত্যধিক। কিছু ক্ষেত্রে অযথা। যা আমার কাছে বিরক্তিকর লেগেছে।

অঙ্গার মূলত জমিদার কেন্দ্রীক গল্প। আমার মনে হয়েছে লেখিকা সেই সময়কার পরিবেশ লেখায় সৃষ্টি করতে পারেনি। ঘোড়ার গাড়ি, বিলেত ফেরত ডাক্তার দিয়ে কিছুটা তৈরি করতে পারলেও কিছু ক্ষেত্রে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। যেমন টেলিফোনের অত্যধিক ব্যবহার। সবার ঘরে ঘরে টেলিফোন। অথচ ১৯৫০ সালের আশেপাশের সময়ে উপমহাদেশ থেকে জমিদারি সম্পূর্ণ উঠে গেছে। তখন এত টেলিফোনের ব্যবহার কী করে হলো? এছাড়া নভেলার ক্ষেত্রে ঘটনার যেমন বিস্তৃত, গভীরতা থাকা দরকার তেমনটি আছে বলে আমার মনে হয়নি।

সাদি এবং আয়েশা জুটি আমার কাছে দারুণ লেগেছে। স্বামী এবং স্ত্রীর মধ্যকার ভালোবাসা কেমন হওয়া উচিত তা সুন্দর ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সুবাহ চরিত্রও ভালো লাগেছে। অল্প বয়সে যারা পৃথিবীর অনেকটা দেখে ফেলে তাদের মুখ থেকে যেমন গম্ভীর কথা বের হয়।সুবাহ চরিত্রও সেভাবে এগিয়েছে।

ইমেজঃ সংগৃহীত

মন্তব্য করুন