পাথারিয়া পাহাড়

patharia-pahar

পাথারিয়া পাহাড় অবস্থিত সিলেট সদর থেকে ৭২ কিলোমিটার, মৌ লভীবাজার জেলা থেকে ৭০ কিলোমিটার, কুলাউড়া রেলওয়ে জংশন থেকে ৩২ কিলোমিটার এবং কাঁঠালতলী থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে। এটি সাধারণত মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলায় অবস্থিত। এই পাহাড় এর পূর্বনাম ছিলো আদম আইল। এই পাহাড়ের উপর থেকে পতিত পানিতেই সৃষ্টি হয়েছে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত।
পাথারিয়া পাহাড়ে আছে ঝেরঝেরি, কাখড়া ছড়ি, ফুল ঢালনি ঝেরঝেরি আর ইটাউরি ফুলবাগিচা ঝর্ণা। ঝর্ণাগুলোর এমন আহলাদি নাম দিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। শুধুনামকরণেই আলাদা টান নেই। ঝর্ণাগুলো পাথারিয়া পাহাড়কে সাজিয়েছে অন্যরকম সৌন্দর্য্য। উঁচু-নিচুটিলা সবুজ বৃক্ষরাজিতে ছাওয়া পাহাড়ের বুক চিরে বেরিয়ে আসা প্রবাহমান পানি ছড়া দিয়ে সমতলে নেমে আসছে। ছড়ার পানি ছোট-বড় পাথরের ওপর দিয়ে বয়ে চলছে। দুর্গম এই ছড়া দিয়ে হেঁটে ঝরনার কাছে যেতে যত বিপত্তি ক্লান্তি আসুক না কেন, ছড়ার স্বচ্ছ শীতল পানি, চারদিকের সবুজ প্রকৃতি, বনফুল, শাসনি লেবুর সুবাস, পাখি ও ঝিঁঝিঁপোকার কলতান সমস্ত ক্লান্তি দূর করে দেয়। প্রায় এক হাজার বছর আগে এই অঞ্চলটি গভীর অরণ্য দ্বারা পূর্ণছিলো এবং এখানে পাথরি নামক নাগা জনগোষ্ঠীর একটি উপশাখার অধিবাসীরা বসবাস করত।
কালক্রমে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর নামের সাথে মিল থেকে এই অরণ্য অঞ্চলের নাম ‘পাথারিয়া’ হয়। এই পাহাড়টি ২৪ কিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত। এটি বাংলাদেশের সাথে ভারতের পূর্বদিকের সীমান্তবর্তী খাসিয়া-জয়ন্তীয়া উচ্চভূমির একটি বর্ধিত অংশ যার অপর অংশ ভারতের আসামে বিস্তৃত। পাথারিয়ার উঁচ্চচূড়া থেকে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের করিমগঞ্জ জেলা দেখা যায়। এখানে পূর্বেপ্রচুর কমলা লেবুর গাছ থা কলেও বর্তমানে তার সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। এই বনাঞ্চলটি আগর-আতর কাঠ গাছের জন্য বিখ্যাত।
বর্তমানে এখানে  যেসব প্রাকৃতিক উদ্ধিদ দেখা যায় তার মধ্যে রয়েছেঃ নাগকেশর, পালান, বাঁশ, বেত, কালাকস্তুরী বা মুশকদানা ও বনঢ্যাড়শ। খনিজসম্পদের মধ্যে পাথারিয়া পাহাড়ে আছে একটি তেলকূপ। ১৯৩৩ সালে তৎকালীন সরকার বার্মা ওয়েল কোম্পানিকে (বিওসি) দিয়ে তেল উত্তোলনের ব্যবস্থা করে। পরবর্তীকালে তেলের পা ইপ ফেটে যায় এবং স্থানীয় পুরো এলাকা তেলের জোয়ারে ভাসতে থাকে তিনদিন। এই তেলকূপ বর্তমানে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকলে ও এখনও এর ভেতর তেলের মজুদ আছে। বন্ধ করে রাখা কূপের ঢাকনার ওপর কান পাতলে শোনা যায় মাটির নিচে তেলের গম গম শব্দ।

কিভাবে যাবেন: 
ঢাকা থেকে ট্রেনে এবং বাসে দুই মাধ্যমেই যাওয়া যায়। ট্রেনে যেতে চাইলে কমলাপুর থেকে সিলেটগামী আন্তঃনগর ট্রেনে কুলাউড়ায় নেমে তারপর বাসে অথবা সিএনজি নিয়ে বড়লেখায় নেমে ডিমাই হয়ে পাথারিয়ায় (Patharia Pahar) যেতে হবে। আর বাস সার্ভিসে যেতে হলে  ঢাকা থেকে হানিফ, এনা, শ্যামলী অথবা সিলেট এক্সপ্রেস বাসে কাঁঠালতলী বাজার নামতে হবে। কাঁঠালতলী থেকে সিএনজি চালিত অটোরিকশা বা চান্দের গাড়ি নিয়ে ডিমাই হয়েও পাথারিয়া পাহাড়ে যেতে পারবেন।

কোথায় থাকবেন:
এখানে জেলা পরিষদের ২টি বাংলো ও ২টি আবাসিক হোটেল রয়েছে। তাছাড়া আপনি চাইলে সিলেট কিংবা মৌলভীবাজার শহরের হোটেলেও থাকতে পারেন।তবে যাতায়াতের সুবিধার্থে মৌলভীবাজার বা শ্রীমঙ্গলে রাত্রিযাপন সবচেয়ে ভালো। শ্রীমঙ্গলের উল্লেখযোগ্য হোটেল ও রিসোর্টের মধ্যে হোটেল
মেরিনা, টি হাউজ রেস্ট হাউজ, প্যারাডাইস লজ, হোটেল মহসিন প্লাজা, নভেম ইকো রিসোর্ট, নিসর্গ ইকো কটেজ, শ্রীমঙ্গল টি রিসোর্ট, লেমন গার্ডেন রিসোর্ট, আমাজন ফরেস্ট রিসোর্ট, গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট ও শান্তি বাড়ি অন্যতম।

কোথায় খাবেন:
মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের কাছে ও বড়লেখা উপজেলায় বেশকিছু রেস্তোরাঁরয়েছে। এছাড়া সুযোগ করে শ্রীমঙ্গলের নীলকণ্ঠ টি কেবিনের জনপ্রিয় সেভেন লেয়ার চায়ের স্বাদ নিতে ভুলবেন না।
ইমেজ- সংগৃহীত

মন্তব্য করুন