হাতির মাথা সিঁড়ি

Hatimatha

প্রায় ৩শ ফুট দীর্ঘ এই ‘হাতির মাথা সিঁড়ি’ খাগড়াছড়ির সদর উপজেলার পেরাছড়া ইউনিয়নে অবস্থিত। পাহাড়িরা এটাকে মায়ুং কপাল বা হাতিমুড়া নামেও ডেকে থাকে। তবে সেখানকার স্থানীয়দের কাছে এই হাতির মাথা সিঁড়ি সেখানকার চাকমা নাম ‘এদো সিরে মো’। আবার কিছু কিছু মানুষের কাছে এটা স্বর্গের সিড়ি হিসাবেও পরিচিত। অনেক অনেক পর্যটকদের আসা যাওয়া হয় এখানে, চারদিকের সৌন্দর্যে যেন পর্যটকরা মুগ্ধ হয়ে যায়।  

পাহাড়ের গায়ে এই সিঁড়ি মাটিরাঙ্গা উপজেলার বহু গ্রামের আদিবাসীদের জেলা সদরে আসা–যাওয়া সহজ ব্রিজ হিসেবে ব্যাবহৃত হয়েছে এবং নির্মাণে অবদান রেখেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। ২০১৫ সালের ১৩ই জুন মোট ১২ লাখ টাকার বেশি ব্যায়ে নির্মাণকৃত এই সিডি দ্বারা মাটিরাঙ্গা উপজেলার গুমতি ইউনিয়ন ও খাগড়াছড়ির পেরাছড়া ইউনিয়নের ১ ও ২ নং ওয়ার্ডের সীমান্তবর্তী এলাকার ভাঙ্গামুড়া, বাদলছড়া, মাখন তৈসা, কিনাপাপাড়া, হাজাপাড়া, কেশ মহাজনপাড়া, সাধুপাড়া, নতুনপাড়া, কাপতলা, হাতির মাথাসহ ১৫টি গ্রামের প্রায় ৮ হাজার মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার সঙ্গযোজন ঘটে।

তবে সিঁড়ি দেখতে হলে আপনাকে দেড় ঘণ্টার হাঁটা পথের প্রস্তুতি নিতে হবে। খাগড়াছড়ির পেরাছড়া দিয়ে চেঙ্গী নদী পাড় হয়ে পাক্কা দেড় ঘণ্টার হাঁটা পথ। আঁকা-বাঁকা, উচুঁ-নিচু রাস্তা, সবুজ পাহাড় পেরিয়ে যেতে হবে গন্তব্যে। প্রথম দিকে খুব সহজে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে পারলেও এক তৃতীয়াংশ অতিক্রম করার পর খাঁড়া পাহাড়ের কাছাকাছি গেলে নিশ্চিত আপনার শরীর কাঁপবে। তবে সিঁড়ির উপরের অংশে দাঁড়ালে যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজ পাহাড়ের সারি দেখা যাবে। যা নিমিষে আপনার ক্লান্তি দূর করবে।

কিভাবে যাবেন?

হাতিমুড়া বা হাতিমাথা পাহাড়ে যেতে চাইলে প্রথমে খাগড়াছড়ি সদরে আসতে হবে। খাগড়াছড়ি হতে পানছড়ি যাওয়ার পথে জামতলীর যাত্রী ছাউনির সামনে নেমে বাম দিকের রাস্তা ধরে চেঙ্গী নদী পেরিয়ে পল্টনজয় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে একটি দোকান দেখতে পাবেন। সবচেয়ে ভাল হয় এখান থেকে গাইড নিয়ে নেওয়া। কারণ প্রথমবার হাতিমাথা পাহাড় যাওয়ার ক্ষেত্রে এই রাস্তা বিভ্রান্তিতে ফেলে দিতে পারে। দোকানের ডান দিকের রাস্তা দিয়ে এগিয়ে দুটি বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে যাওয়ার পর কিছুটা দূরে ডানদিকে ছড়ার পাশ দিয়ে এগিয়ে আরো একটি বাঁশ-গাছের সাঁকো পার হতে হবে। এরপর পথ ধরে যেতে থাকলে একটি পাড়া (বগড়া পাড়া বা লারমা পাড়া) দেখতে পাবেন। আরো সামনে এগিয়ে ছড়া ও একটি বড় টিলা অতিক্রম করে কাপতলা এলাকায় পৌঁছাবেন। কাপতলা থেকে বেরিয়ে ডান দিকে নিচু পথ ধরে এগিয়ে আরো একটি মোড় পাবেন সেই মোড়ের ডান দিকে কিছুটা এগুলেই অসাধারণ হাতিমাথা পাহাড় দেখতে পাবেন। জামতলীস্থ যাত্রী ছাউনি থেকে হাতিমাথা পাহাড় পৌঁছাতে ঘন্টা দেড়েক ট্রেকিং করতে হয়।

কোথায় থাকবেন?

খাগড়াছড়ি শহরে রাত্রি যাপনের জন্য বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। হোটেল ভেদে এক রাত অবস্থানের জন্য আপনাকে ৬০০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকা প্রদান করতে হবে। খাগড়াছড়ি শহরে ভালো মানের আবাসিক হোটেলের মধ্যে রয়েছে –

হোটেল হিল প্যারাডিসঃ খাগড়াছড়ি শহরে অবস্থিত এসি, নন এসি, ভিআইপি এসি ও গ্রুপ রুমের সুবিধা সহ শ্রেণী অনুযায়ী ভাড়া ১২০০ থেকে ৫০০০ টাকা।

হোটেল গাইরিংঃ খাগড়াছড়ি শহরে অবস্থিত এসি, নন এসি, ভিআইপি এসি ও গ্রুপ রুমের সুবিধা সহ শ্রেণী অনুযায়ী ভাড়া ১২০০ থেকে ৫০০০ টাকা।

অরন্য বিলাসঃ শহরের নারিকেল বাগানে অবস্থিত এই হোটেলে টুইন বেড এসি ৩০০০ টাকা, কাপল এসি ২০০০ টাকা, টুইন নন এসি ২৫০০ টাকা এবং কাপল নন এসি ১৫০০ টাকা ভাড়া।

যদি খুবই কম খরচে থাকতে চান তাহলে নারিকেল বাগানের গাংচিল আবাসিক হোটেলে থাকতে পারেন।  এই হোটেলটিতে ৬০০-১০০০ টাকায় থাকতে পারবেন।

কোথায় খাবেন?

খাগড়াছড়ি শহরের শাপলা চত্বর এবং বাস স্ট্যান্ড এলাকায় বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এছাড়া পানথাই পাড়ায় অবস্থিত ‘সিস্টেম রেস্তোরা’ তে কফি, হাসের কালাভূনা, বাশকুড়ুল এবং ঐতিহ্যবাহী পাহাড়ি খাবারের স্বাদ নিতে পারেন।

ইমেজঃ সংগৃহীত

মন্তব্য করুন