
গিলি আইল্যান্ডস (Gili Islands) হচ্ছে ইন্দোনেশিয়ার লি দ্বীপের পূর্বদিকে অবস্থিত লম্বক দ্বীপপুঞ্জের সবচেয়ে জনপ্রিয় জায়গার নাম। গিলি আইল্যান্ডের সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করা বেশ কঠিন। স্বচ্ছ নীল জলের সাগর, সুনীল আকাশ, নেশা ধরানো সূর্যাস্তের সাথে বিভিন্ন ক্লাব ও বারের লাইভ মিউজিকের মাদকতা আপনাকে যে অনুভূতি দিবে তা সারাজীবন মনে রাখার জন্য যথেষ্ট। ঘোড়ার গাড়ি এবং সাইকেল ছাড়া গিলিতে কোন যানবাহন নেই। তাই ঘন্টা হিসাবে সাইকেল ভাড়া নিয়ে সুন্দর এই দ্বীপটি ঘুরে দেখতে পারবেন।
সাসাক ভাষা থেকে আগত গিলি শব্দের অর্থ ছোট। গিলি আইল্যান্ডস মূলত গিলি ত্রাওয়াংগান বা গিলি টি (Gili Trawangan), গিলি মেনো (Gili Meno) এবং গিলি এয়ার (Gili Air) নামের তিনটি ছোট দ্বীপ নিয়েই গঠিত হয়েছে। গিলি আইল্যন্ডে ২০ থেকে ৫০ ডলারে উপভোগ করা যায় স্কুবা ড্রাইভিং, স্নোরকেলিং, আন্ডার ওয়াটার ওয়াকিং, আইল্যাণ্ড হপিং, গ্লাস বটম বোট ভ্রমণের মত বেশকিছু রোমাঞ্চকর এক্টিভিটি।
স্নোরকেলিং করতে জনপ্রতি দেড় লাখ রুপিইয়া খরচ হবে। ৪ ঘন্টার স্নোরকেলিং-এ গিলি মেনো, গিলি এয়ার, টার্টেল রিফ, ফিশ রিফ আর কোরাল আইল্যান্ড স্পিড বোটে ঘুরতে পারবেন। সেই সাথে সমুদ্রের পানির নিচের অসাধারণ জীববৈচিত্র দেখতে পারবেন।
গিলি আইল্যান্ডে ফাইভ স্টার থেকে শুরু করে যেকোন হোটেল বা রেস্টুরেন্টের সামনে পেতে রাখা চেয়ার, হ্যামক কিংবা ছাতার নীচে যতক্ষণ ইচ্ছা বসে থাকতে পারবেন। কেউ কিছু বলবে না এবং এর জন্য হোটেল বা রেন্টুরেন্টের কোন সেবা নেয়ার বাধ্যকতা নেই। এছাড়াও ড্রেস চেঞ্জ কিংবা গোসলের জন্য যেকোন হোটেল ও রিসোর্টের বাথরুম ব্যবহার করতে পারবেন।
আপনাকে প্রথমে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে যেতে হবে। ঢাকা থেকে যাওয়ার সরাসরি কোন ফ্লাইট নেই। মালেশিয়া অথবা সিঙ্গাপুরে ট্রানজিট হয়ে যেতে হয়। কুয়ালামপুরে ট্রানজিটসহ বালি পৌঁছাতে ৬ ঘন্টা সময় লাগে। ইন্দোনেশিয়ার সাথে বাংলাদেশের সময়ের ব্যবধান ২ ঘন্টা
বালি ভ্রমণে যেতে বাংলাদেশীদের কোন ভিসা লাগেনা। ৩০ দিনের জন্য এক্সেমশন ভিসা দেয়া হয়। হোটেল বুকিং আর রিটার্ন এয়ার টিকেটের আইটিনারির প্রিন্ট কপি ইমিগ্রেশনে দেখালেই ভিসা ফি বা ছবি ইত্যাদি কোন কিছুরই প্রয়োজন হয় না। তবে ঘুরতে গিয়ে ৩০ দিনের বেশি ভিসার মেয়াদ বাড়ানো সম্ভব না।
এয়ার টিকেটের দাম সাধারণত যাত্রার তারিখে কতদিন আগে থেকে কেনা হচ্ছে তার উপর নির্ভর করে। মাস দুই আগে বালির টিকেট কাটলে ২৫ থেকে ৩৫ হাজার টাকা লাগে। আবার সেই টিকেটাই এক-দুইদিন আগে কাটতে গেলে ৪০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা লাগে। বাংলাদেশ থেকে মালিন্দো এয়ার, এয়ার এশিয়া, স্কুট ইত্যাদি এয়ারলাইন্স বালি রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে।
এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্ট ট্যাক্সি সার্ভিস ব্যবহার না করে বাইরের ব্লু বার্ড ট্যাক্সিগুলোতে মিটারে চড়ে আপনার গন্তব্যে যান। বালিতে মিটারে ট্যাক্সিতে যেকোন স্থানে গেলে ৩০ থেকে ৪০ হাজার রুপিয়া বা বাংলাদেশি টাকায় ১৮০ থেকে ২৫০ টাকার মত খরচ হয়। আর যদি এয়ারপোর্ট থেকে ট্যাক্সি সার্ভিস নেন তবে একই দুরত্বে যেতে আপনাকে ৭৫ হাজার থেকে দেড় লক্ষ রুপি গুনতে হবে।
বালি থেকে গিলি যেতে হলে ফাস্ট বোট সার্ভিসের টিকেট কাটতে হয়। রিটার্ন টিকেট সহ জনপ্রতি টিকেট কাটতে ৫ লক্ষ রুপিয়া বা প্রায় ৩০০০ বাংলাদেশী টাকা খরচ পরবে। বালির বিভিন্ন স্থান এবং কুটাতে অনেক ইনফরমেশন বুথ আছে। সেসব জায়গা থেকে গিলি আইল্যান্ডে যাওয়ার আপনার পছন্দমত প্যাকেজ নিতে পারবেন। হোটেল পিকআপ এন্ড ড্রপ সহ টিকেট কাটলে যাদের কাছ থেকে টিকেট বুক করবেন তারাই হোটেল হতে পাদাং বাই জেটি/পাদাম হারবারে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করবে। গাড়িতে চড়ে জেটিতে যেতে প্রায় দেড় থেকে দুই ঘন্টা সময় লাগে। আর জেটি থেকে বোটে গিলি যেতে আরো প্রায় দেড় থেকে দুই ঘন্টা সময় লাগে। অনলাইনেও ফাস্ট-বোট সার্ভিসের টিকেট কাটা যায় তবে দাম তুলনামূলক বেশি।
গিলি ত্রাওয়াংগানের রিসোর্টগুলোতে এক রাত থাকতে ২০০০ থেকে ৬০০০ বাংলাদেশী টাকা খরচ হবে। তবে বিচ ভিউ রিসোর্টগুলোতে থাকতে হলে ৪০০০ থেকে ৭০০০ হাজার টাকা খরচ করতে হবে।