
অনন্ত জলিলের ১০০ কোটির “দিন দ্য ডে” সিনেমা কতটা ভালো বা কতটা খারাপ!!!
সিনেমার নামঃ “দিন দ্য ডে”
পরিচালকঃ মুর্তজা আতাশ জমজম এবং অনন্ত জলিল
অভিনয়েঃ অনন্ত জলিল, বর্ষা, মিশা সওদাগর, খোরশেদ আলম খশরুসহ প্রমুখ।
এ.জে.(অনন্ত জলিল) বাংলাদেশের সনামধন্য সোয়াট টিমের একজন স্পেশাল অফিসার। এ.জে. কে বাংলাদেশ থেকে একটি আন্তর্জাতিক মাদক পাচার গ্যাং কে ধরতে মিশনে পাঠানো হয়। মিশনের উদ্দেশ্য ছিলো যারা মাদক পাচারের সাথে জড়িত আছে তাদের খুজে বের করা!!!
অভিনয়ঃ
অনন্ত জলিল ও বর্ষার অভিনয়, এক্সপ্রশন ও ডায়লগ ডেলিভারি অনেক দূর্বল।অনন্ত জলিল কিছুটা চেষ্টা করেছেন ভালো করার।কিন্তু তার ডায়লগ ডেলিভারি খুবই স্লো ও একসেন্ট দূর্বল এবং বডি ল্যাংগুয়েজ হিরোর মতো না।আর বর্ষা বাস্তবজীবনে ও সিনেমায় দুই জায়গাতেই বিরক্তিবোধ করছেন এমন ভাব প্রকাশ করেন,এরকমটা কেন?তার সব এক্সপ্রেশন বাজে বিশেষ করে তার চোখে পানি ছাড়া কান্না আমার কাছে অস্বাভাবিক লাগে।তাকে এই সিনেমাতে বর্ষাই লেগেছে।অনন্ত ও বর্ষা ছাড়া বাকি অভিনেতা,অভিনেত্রীদের অভিনয় ভালো লেগেছে।বিদেশী অভিনেতা অভিনেত্রীেদেরকে অভিনয় দেখানোর জন্য যথেষ্ট স্পেস দেওয়া হয়েছে।খলনায়ক আবু খালিদ চরিত্রে থাকা লোকটির অভিনয়ে মুগ্ধ হয়েছি।ক্রাইম রিপোর্টার মেয়েটিও ভালো ছিলো।
পজিটিভ দিকঃ
ইরানি ডিরেক্টরের (মর্তজা আতাশ জমজম) ডিরেকশন, সিনেমার মেকিং ও ক্যামেরার কাজ এবং ডায়লগ।
সিনেমার কালারগ্রেডিং ও সিনেমাগ্রাফি অনেক উন্নত/স্বচ্ছ।ব্যকগ্রাউন্ড মিউজিকও ভালো ছিলো।
তুর্কি, আফগানিস্থান, ইরানের মতো লোকেশনে সিনেমাটির দৃশ্যয়ন চোখে আরাম দিয়েছে। সিনেমাটিতে হলিউড হলিউড টাইপের ফিল পাওয়া যায়।
সিনেমায় লার্জ স্কেলে এরেন্জমেন্ট ছিলো যা সচারাচর বাংলা সিনেমায় আগে দেখা যায়নি (হেলিকপ্টার, গাড়ি, ইয়োট, স্পিড বোট, কন্টিনার লরি, মিসাইল, মরুভূমিতে কার চেজিংয়ের সিনগুলো)
একশন সিকোয়েন্স গুলোতে নতুনত্ব, একশন সিনগুলো বেশ যত্নের সাথে নেওয়া হয়েছে(বেশিরভাগ একশন অনন্তই করেছিলো স্টান্ট ডাবল ব্যবহার করেনি লেগেছে)
সিনেমার ৩টি গান “বর্ষা চোখে”, “প্রিয়তমা”, “শুধু তোমাকেই চাই” গানগুলোর লিরিক্স ও সুন্দর লোকেশনে শুট করা শুনতে ও দেখতে ভালো লেগেছে।
অনন্ত ও বর্ষা বাদে বাকি কলাকুশলীদের অভিনয়। হলিউড, ইরান থেকে নেওয়া অভিনেতা ও অভিনেত্রীদের অভিনয় অনেক ভালো লেগেছে।মুগ্ধ করেছে খলনায়ক আবু খালিদ চরিত্রে অভিনয় করা লোকটি।
নেগেটিভ দিকঃ
১০০ কোটি বাজেটের একটি সিনেমা অথচ গল্প ও চিত্রনাট্যে নতুনত্ব নেই।গল্প সেই চেনা পরিচিত শুধুমাত্র লার্জ স্কেলে নিমার্ণ।গল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একটু পর পর একশন, ফায়ারিং ও গাড়ি, বোম ব্লাস্ট বিরক্তিকর ছিলো।
সিনেমার স্ক্রিনপ্লে যথেষ্ট অগোছালো ও এডিটিং বাজে হয়েছে। গল্পের সাথে রিলেট করতে পারছিলাম না (একবার তু্র্কি, একবার আফগানিস্তান আবার এর মাঝে ফেমিলি ড্রামা ঢুকানো আর সিরিয়াস সিচুয়েশনে বর্ষা চোখে, প্রিয়তমা গান দুটির প্লেসমেন্ট)
সিনেমাটি তে থ্রিলার ও সাসপেন্স এর খোঁজ আমি পাইনি এবং শরীরে গুজবাম্প দেওয়ার মতো কোনো সিকোয়েন্সও ছিলো না।
বাংলাদেশী স্ট্যান্ডার্ডে ভিএফএক্স ভালো বললেও;আবার ১০০ কোটি বাজেটের সিনেমার ভিএফএক্স হিসেবে খারাপ (গান ফায়ারিং, বোম ব্লাস্ট, গাড়ি ব্লাস্টের সিনগুলোতে ভালো করে খেয়াল করলে বুঝবেন) তবে ট্রেলারে যেমনটা ছিলো তা সংশোধন করা হয়েছে।
সিনেমার অন্যতম নেগেটিভ দিক অনন্ত জলিল ও বর্ষার দূর্বল অভিনয়, এক্সপ্রেশন ও বিরক্তিকর ডায়লগ ডেলিভারি।বিশেষ করে রোমান্টিক গানগুলোতে তাদের অদ্ভুত কস্টিউমের সাথে রোবটিক কেমিস্ট্রি দৃষ্টিকটু লেগেছে।
বিদেশী অভিনয়শিল্পীদের নিজেদের ভাষায় বলা সংলাপগুলোকে বাংলায় ডাবিং করার কারণে কিছুটা বিরক্তি চলে আসে।
সিনেমার নাম দিন দ্য ডে রাখা হয়েছে কেন পুরো মুভি দেখে শেষ করার পরও বুঝলাম না।
সিনেমার প্রথম হাফ বোরিং হলেও সেকেন্ড হাফ ভালো ছিলো। সিনেমার সাউন্ড অনেক লাউড ছিলো।গুলাগুলি, বোম ব্লাস্ট এগুলোর সাউন্ডে মাথা ব্যাথা করছিলো।মনে হচ্ছিলো কানের পর্দা ফেটে যাবে।
উড়ে উড়ে অনন্ত জলিলের মেয়েটিকে বাঁচানো ও বর্ষার পরকীয়া নিয়ে স্পিচ টি ছিলো বিরক্তিকর। সাথে একটু একটু পর পর অনন্তর আলগা চুল লাগিয়ে নাচ-গান ও একশন করা আরও বিরক্তিকর
দিন দ্য ডে’র বাজেট বলা হয়েছে ১০০ কোটি। বিশাল এরেন্জমেন্ট,ইরানি ডিরেক্টর ও বিদেশী কাস্ট হায়ার সাথে তুর্কি,ইরান,আফগানিস্তান এর মতো লোকেশন শুট করতে ও প্রচারণার কাজে বেশ বড় অংকের টাকাই খরচ হয়েছে তবে তা ১০০ কোটি ছাড়িয়েছে কিনা আমার সন্দেহ রয়েছে!!!
আমি অবাক হয়েছি ভাবতে পারেনি, অনন্ত জলিলের সিনেমায় এতো দর্শক হবে।হলগুলো ভালো পরিমাণে দর্শক ছিলো। এটা বাংলা চলচিত্রের জন্য একটি গুড সাইন যে দর্শক আগ্রহ পাচ্ছে বাংলা সিনেমা হলে গিয়ে দেখার।