পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে এক নতুন দুয়ার উন্মোচিত হল

WhatsApp Image 2022-06-25 at 1.41.24 PM

পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কারও বিরুদ্ধে আমার কোনো অনুযোগ নেই। আমরা নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা দেশবাসীকে নিয়ে সব সমস্যা মোকাবিলা করে যাচ্ছি।

বক্তব্যে আবেগাপ্লুত দেখা গেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। তিনি সেতু নির্মাণে সাহস জোগানো বাংলাদেশের জনগণকে স্যালুট জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতা আবৃত্তি করেন। তিনি বলেন, ‘জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার, তবু মাথা নোয়াবার নয়। তিনি বলেন, ‘আমরা মাথা নোয়াইনি, আমরা মাথা নোয়াব না। জাতির পিতা আমাদের মাথা নোয়াতে শিখান নাই।’

শনিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন। এর আগে ১১ টা ৪৮ মিনিটে মাওয়া প্রান্তে টোল দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

উদ্বোধনের পর শুধু প্রধানমন্ত্রী ও অতিথিদের গাড়ি সেতু পাড়ি দেবে। আগামীকাল রোববার ভোর থেকে টোল দিয়ে সাধারণ যানবাহন চলাচল শুরু করবে সেতু দিয়ে।

দেশের বৃহত্তম স্ব-অর্থায়নকৃত মেগা প্রকল্পের জমকালো উদ্বোধন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীমাওয়া পয়েন্টে স্মারক ডাকটিকিট, স্যুভেনির শীট, উদ্বোধনী খাম এবং বিশেষ সিলমোহর উন্মোচন করেছেন। এরপর তিনি সেতু সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে ছবি তোলেন।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে ১.২ থেকে ২ শতাংশ পর্যন্ত জিডিপি বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বাসসের খবরে বলা হয়েছে, মাওয়া পয়েন্টে টোল পরিশোধের পর উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি সেখানে মোনাজাতেও যোগ দেবেন। এরপর তিনি মাওয়া পয়েন্ট থেকে শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবেন।

প্রধানমন্ত্রী সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটে জাজিরা পয়েন্টে পৌঁছে সেতু ও ম্যুরাল-২ এর উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করবেন। সেখানে মোনাজাতেও যোগ দেবেন তিনি।

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়িতে সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত দলের জনসভায় যোগ দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বিকেলে হেলিকপ্টারে জাজিরা পয়েন্ট থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবেন।

২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সেতুর নির্মান কাজে ৩৭ এবং ৩৮ নম্বর পিলারে প্রথম স্প্যান বসানোর মাধ্যমে পদ্মা সেতুর অংশ দৃশ্যমান হয়। পরে একের পর এক ৪২টি পিলারের ওপর বসানো হয় ৪১টি স্প্যান। ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর শেষ ৪১তম স্প্যান স্থাপনের মাধ্যমে বহুমুখী ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার পদ্মা সেতুর সম্পূর্ণ কাঠামো দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এ সেতু কেবল সেতু নয়। এর ৪২টি স্তম্ভ স্পর্ধিত বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।

বহু কাঙ্ক্ষিত সেই সেতুর উদ্বোধন করতে সেতুর মাওয়া প্রান্তে আগেই পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি বক্তব্য দিচ্ছেন। বক্তব্যের শুরুতে তিনি দেশবাসীকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানিয়েছেন তিনি। তিনি পদ্মা সেতু নির্মাণে জড়িতদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রের কারণে সেতু নির্মাণে বেগ পেতে হয়েছে। তবে থেমে যায়নি। আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারে নি।

১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের গল্প তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটি শুধু ইট, রড, সিমেন্ট ও কংক্রিটের সেতু নয়, বাংলাদেশের সম্মান আর সক্ষমতার প্রতীক। এই সেতু নির্মাণ ঠেকাতে ষড়যন্ত্র হলো।’

আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র হয়েছে। টাকা ছাড় না হতেই দুর্নীতির কথা বলা হলো। মামলা হলো। সব কিছু পেরিয়ে আমরা আজ এ সেতু উদ্বোধন করতে যাচ্ছি।

দক্ষিনের লাখো মানুষ অপেক্ষায় আছেন প্রধানমন্ত্রী কখন স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেবেন আর তাদের কাছে আসবেন। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের কালের স্বাক্ষী হতে ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষন শুনতে গতকাল শুক্রবার রাত থেকে জাজিরার নাওডোবা ও শিবচরের কাঠালবাড়িতে মানুষ আসতে শুরু করেছেন। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলা ছাড়াও চাঁদপুর, লক্ষীপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর ও মানিকগঞ্জ থেকে মানুষ এসেছেন। সকাল ৮টার মধ্যে জাজিরা ও শিবচরের অন্তত চারটি ইউনিয়নের সড়ক লোকে-লোকারন্য হয়ে যায়। গ্রামের বিভিন্ন সড়ক ধরে মানুষ সমাবেশ স্থলে আসতে থাকেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষে পদ্মার তীরের ৬ কিলোমিটার এলাকা ভরে যায়।

বহুকাঙ্ক্ষিত সেই সেতুর উদ্বোধন করতে সেতুর মাওয়া প্রান্তে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সেখানে প্রথম সুধী সমাবেশে ভাষণ দেয়। মাওয়া প্রান্তে সুধী সমাবেশে ভাষণ শেষে তিনি উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করেন। অমনি খুলে গেল দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৯টি জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অপরাপর অংশের জন্য সংযোগ, যোগাযোগ ও সম্ভাবনার অনন্ত দুয়ার।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন। সেতুর উদ্বোধন ঘিরে শেখ হাসিনা ও আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য প্রস্তুত মাওয়া প্রান্ত। দলের শীর্ষ নেতারা মাওয়ায় পৌঁছেছেন।

এরই মধ্যে পৌঁছেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমুসহ আরও অনেকে।

বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনাররাও সুধী সমাবেশে উপস্থিত হয়েছেন।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভাস্থল থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়েছে। আজ শনিবার সকালে ঢাকা-খুলনা এক্সপ্রেসওয়ে কাঁঠালবাড়ি এলাকায়।

ভোর আলো ফুটতে না ফুটতেই সাধারণ মানুষের পদচারণে মুখোর হয়ে উঠেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভাস্থল। বাস, ট্রাক, মোটরসাইকেল—যে যেভাবে পারছে দূরদুরান্ত থেকে ছুটে আসছেন। অনেকেই হেঁটে রঙবেরঙের পোশাকে সাজেগুজে আসছেন সভাস্থলে।

এদিকে ভোর থেকে গণমানুষের চাপ থাকায় ঢাকা-খুলনা এক্সপ্রেসওয়ে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। ফলে প্রধানমন্ত্রী জনসভাস্থল থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়েছে।

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানির পরিবহন শ্রমিক ইকবার হোসেন বলেন, আমরা এক গ্রামের ৫০ জন একটি বাস নিয়ে এখানে আইছি। রাস্তায় জ্যাম থাকায় হেঁটে সভায় যাইতাছি। একটু কষ্ট হইলেও আনন্দ লাগতাছে। এত মানুষ দেখে ভালো লাগছে। তা ছাড়া আজকের পর থিকা আমাগো এহন আর ফেরির জন্য এ ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বইসা থাকার লাগবো না। এর থেকে আনন্দের আর কী আছে কন?

সকাল থেকে সড়ক ও নৌপথ ধরে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ দলে দলে আসছেন সভাস্থলে। যানবাহনের চাপ থাকায় অনেকেই হেঁটে যাচ্ছে। আশেপাশের এলাকা থেকে শোভাযাত্রা বের করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা। তাঁরা ব্যানার ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড হাতে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছেন। সভাস্থলে সাধারণ মানুষের ভিড় ক্রমেই বাড়ছে। মানুষের ভিড় বাড়তে থাকায় পুরো বাংলাবাজার ঘাট এলাকায় এক আনন্দ উৎসব শুরু হয়েছে।

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী থেকে এসেছেন পরিবহন শ্রমিক ইকবার হোসেন।জনসভাস্থলে যাওয়ার পথে তিনি বলেন, ‘আমরা এক গ্রামের ৫০ জন একটি বাস নিয়ে এখানে আইছি। রাস্তায় জ্যাম থাকায় পায়ে হেঁটে সভায় যাইতাছি। একটু কষ্ট হইলেও আনন্দ লাগতাছে। এত মানুষ দেখে ভালো লাগছে। তা ছাড়া আজকের পর থিকা আমাগো এহন আর ফেরির জন্য এ ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বইসা থাকার লাগব না। এর থেকে আনন্দের আর কী আছে কন?’

বাংলাবাজার ঘাটের সংযোগ সড়কে বসে কথা হচ্ছিল ইজিবাইকচালক হিরণ শেখের সঙ্গে। হিরণ খুলনার দিঘলিয়া থানার মহিষদিয়া এলাকা থেকে এসেছেন। তাঁর সঙ্গে রয়েছে আরও প্রায় ৯০ জন। সবাই একই এলাকার বাসিন্দা। স্থানীয় এক চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে হিরণরা দুটি বাস নিয়ে এসেছেন প্রধানমন্ত্রীর জনসভাস্থলে। সকাল সকাল চলে আসার কারণ জানতে চাইলে হিরণ শেখ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আনন্দ করতে করতে আসছি। সকাল সকাল না এলে ভিড়ের মধ্যে পড়তে হতো। তা ছাড়া জনসভায় সামনের দিকে বসার জন্য আমরা আগেভাবে চলে আসছি।’

পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে বিভিন্ন রঙের টি–শার্ট পরে সেতুর দুই পারের সমাবেশস্থলে আসছেন মানুষ। সেতুটি উদ্বোধনের ক্ষণটি স্মরণীয় করে রাখতে দুই পাড় সাজানো হয়েছে। আলোকসজ্জিত করা হয়েছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও ভবন। সকালে সেতুর ফিতা কাটার দৃশ্য দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন দেশের মানুষ।

দেশের সড়ক যোগাযোগের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে আজ। উদ্বোধন হয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু, যা দেশীয় অর্থায়নে বড় অবকাঠামো নির্মাণে বাংলাদেশের সক্ষমতাও প্রকাশ করবে।

আজ শনিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর শুধু প্রধানমন্ত্রী ও অতিথিদের গাড়ি সেতু পাড়ি দেয়। আগামীকাল রোববার ভোর থেকে টোল দিয়ে সাধারণ যানবাহন চলাচল শুরু করবে সেতু দিয়ে।

মন্তব্য করুন