ভালোবাসা প্রেম নয়

valobasa-prem-noy

লেখক : সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

ভালবাসা অদ্ভুদ একটা অনুভূতিরই নাম। পুরো পৃথিবী একদিকে, ভালবাসা অন্যদিকে। পৃথিবী তখন অর্থহীন ভালবাসা যখন অধিক মূল্যবান। এমনই এক কাহিনী নিয়ে রচিত এই বইটি।

প্রেম আর ভালবাসার মধ্যে পার্থক্য নিয়ে ভিন্ন রকম স্বাদের এক কাহিণীর উপস্থাপন এই উপন্যাস। বইটার নামের মধ্যেই এক অদ্ভূত আকর্ষণ রয়েছে। প্রেম আর ভালবাসার মধ্যে পার্থক্য টুকু কে লেখক তার অসাধারণ লেখনীর মাধ্যমে পাঠকের অন্তরে প্রবেশ করাতে চেয়েছেন। লেখকের অন্যান্য বইয়ের মত এখানেও তার অসাধারণ উপস্থাপন ক্ষমতার পরিচয় পাওয়া যায়।

উপন্যাসের মূল কাহিণীই যেন এর নামের মধ্যে উপস্থিত। গল্পটা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের এক বন্ধু কামালকে নিয়ে লেখা। কামাল ঢাকার ছেলে। ধনী পরিবারের সন্তান, হেসে-খেলে তার জীবন বাংলাদেশেই কাটিয়ে দিতে পারত। তবুও ব্যবসা শেখার জন্য পশ্চিমী দুনিয়ায় তার আগমন। লেখকের সাথে তার প্রথম দেখা হয় নিউ ইয়র্কে। এই অদ্ভূত অসম্ভব পরোপকারী ছেলেটি লেখকের মনে ক্রমেই জায়গা করে নেয়। একটু ঘনিষ্ট হতেই লেখক উপলব্ধি করেন যে সদা হাসি খুশি কামালের জীবনে এক গভীর বিষাদের স্রোত বয়ে যাচ্ছে। কামালের জীবনের বিষাদমাখা সেই অধ্যায়টিকেই তিনি এখানে তুলে ধরেছেন নিখুঁত দক্ষতায়।

জুলেখা কামালের বিবাহিতা স্ত্রী। কামালের প্রথম প্রেম শুরু হয় তার বিবাহিত জীবনেই। স্ত্রী কে অসম্ভব ভালবাসে কামাল। আমেরিকার মাটিতে তাদের সুখের সংসারের গোড়াপত্তন ঘটে। এর মধ্যে নানা ঘাত প্রতিঘাত আসতে থাকে। কিন্তু কামাল নানা বাধা সত্ত্বেও স্ত্রীকে ভালবেসে যাওয়ার চেষ্টা করতে থাকে। বিচ্ছেদের সময়ে সে নানা ভাবে বোঝাতে চেষ্টা করে । তার জন্য পাগলের মত হয়ে যায় কামাল। ভালবাসাও যে মাঝে মাঝে পরাজিত হতে পারে তার পরিচয় পাওয়া যায় কামালের জীবনে। এক সময় কামাল এক নতুন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়। কামাল এর পুরো জীবন যেন ভেঙে পড়তে থাকে। তবু তাকে ঘুরে দাঁড়াতে হয় অথবা সে ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়। এর-ই সুর পাওয়া যায় শেষের দিকে, কামালের উক্তিতে – “আমার ভালবাসা এক জায়গায় আটকে ছিল। এখন সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছি। তবে বুকটা ফাঁকা হয়ে আছে তো। সেটা থেকে মাঝে মাঝে একটা হাহাকার বেরিয়ে আসে। সেটা কার জন্য জানিনা।” কামালের সেই বিষাদমাখা অতীতকে জানতে হলে বইটা পড়ে দেখা জরুরী। উপন্যাসটি বাংলা সাহিত্যের এক অনবদ্য অলংকার। সম্পূর্ণ উপভোগ্য ভিন্ন স্বাদের এই বইটা শুরু শেষ পর্যন্ত পাঠকেরা যে হতাশ হবেন না তা নির্দ্বিধায় বলে দেওয়া যায়। সাথে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখনীর জাদু পাঠককে ধরে রাখার জন্য তো রয়েছেই। 

মন্তব্য করুন