
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে রাণীশৈংকল উপজেলায় রাজা টংকনাথ চৌধুরীর বাড়িটির অবস্থান। এটি নির্মাণ করা হয়েছিল ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে কুলিক নদীর তীরে। এই বাড়িটি পূর্বে মালদুয়া পরগণার অন্তর্ভুক্ত হলেও পরে রাণীশৈংকল উপজেলার অন্তর্ভুক্ত হয়।
এই জমিদার বাড়িটির কাজ শুরু করেছিল বুদ্ধিনাথ অর্থাৎ রাজা টংকনাথ এর বাবা। তবে শুরু করলেও তিনি শেষ করতে পারেননি। বাকি অসমাপ্ত কাজটুকু শেষে করেন রাজা টংকনাথ। এই রাজবাড়িটির পশ্চিমদিকে রয়েছে সিংহদরজা। দরজার একদম চূড়ায় দিক নির্দেশক হিসেবে রয়েছে S.N.E.W চিহ্ন। রাজবাড়ির সাথ ঘেঁষে উত্তর-পূর্ব কোণে রয়েছে কাছারিবাড়ি, পূর্বদিকে রয়েছে দু’টি পুকুর। রাজবাড়ির দক্ষিণে কুলিক নদীর তীরে রাস্তার পূর্বপ্রান্তে রয়েছে রামচন্দ্র মন্দির। এই মন্দিরটি অবশ্য রাজবাড়ির চেয়েও বহু প্রাচীন।
রাজা টংকনাথ উচু মাপের রাজা না হলেও তার জীবনে আভিজাত্যের কমতি ছিল না। ১৯২৫ সালে তৎকালীন বৃটিশ সরকার রাজা টংকনাথকে ‘চৌধুরী’ উপাধিতে ভূষিত করেন।
রানীশংকৈল উপজেলার পূর্বপ্রান্তে কুলিক নদীর তীরে মালদুয়ার জমিদার রাজা টংকনাথের রাজবাড়ি। টংকনাথের পিতার নাম বুদ্ধিনাথ চৌধুরী। তিনি ছিলেন মৈথিলি ব্রাহ্মণ এবং কাতিহারে ঘোষ বা গোয়ালা বংশীয় জমিদারের শ্যামরাই মন্দিরের সেবায়েত। নিঃসন্তান বৃদ্ধ গোয়ালা জমিদার কাশীবাসে যাওয়ার সময় সমস্ত জমিদারি সেবায়েতের তত্ত্বাবধানে রেখে যান এবং তাম্রপাতে দলিল করে যান যে তিনি কাশী থেকে ফিরে না এলে শ্যামরাই মন্দিরের সেবায়েত এই জমিদারির মালিক হবেন। পরে বৃদ্ধ জমিদার ফিরে না আসার কারণে বুদ্ধিনাথ চৌধুরী জমিদারি পেয়ে যান। তবে অনেকে মনে করেন এই ঘটনা বুদ্ধিনাথের দু এক পুরুষ পূর্বেরও হতে পারে।
রাজবাড়ি নির্মাণের কাজ বুদ্ধিনাথ চৌধুরী শুরু করলেও সমাপ্ত করেন রাজা টঙ্কনাথ। বৃটিশ সরকারের কাছে টঙ্কনাথ রাজা পদবী পান। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে রাজবাড়িটি নির্মিত হয়। বর্তমানে রাজবাড়িটির অনেক অংশই নষ্ট হয়ে গেছে। রাজবাড়ির পশ্চিমদিকে সিংহদরজা। দরজার চূড়ায় দিক নির্দেশক হিসেবে লৌহদন্ডে S.N.E.Wচিহ্ন অঙ্কিত রয়েছে। রাজবাড়ি সংলগ্ন উত্তর-পূর্ব কোণে কাছারিবাড়ি। পূর্বদিকে দুটি পুকুর। রাজবাড়ি থেকে প্রায় দু’শ মিটার দক্ষিণে কুলিক নদীর তীরে রাস্তার পূর্বপ্রান্তে রামচন্দ্র (জয়কালী) মন্দির। এই মন্দিরটি রাজবাড়ির চেয়ে প্রাচীন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকসেনারা মন্দিরটির ক্ষতি সাধন করে। এখন এটা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সড়ক ও রেলপথে ঠাকুরগাঁও আসা যায়। সড়ক পথে ঢাকা থেকে ঠাকুরগাঁও এর পথে বেশকিছু বাস সার্ভিস চলাচল করে তাদের মধ্যে কর্ণফুলী পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, নাবিল পরিবহন, এনা, হানিফ, বাবলু এন্টারপ্রাইজ এবং কেয়া পরিবহন অন্যতম। এইসকল পরিবহনের জনপ্রতি টিকেটের ভাড়া নন-এসি ৮০০-৯০০ টাকা ও এসি ১০০০-১৬০০ টাকা।
এছাড়া ঢাকার কমলাপুর কিংবা বিমানবন্দর থেকে একতা এক্সপ্রেস, দ্রুতধান এক্সপ্রেস ও পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ঠাকুরগাঁও এর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ঠাকুরগাঁও যেতে ট্রেনের টিকেট কাটতে শ্রেণীভেদে ৫২০ থেকে ১৮৩৩ টাকা লাগবে।
ঠাকুরগাঁও থেকে বাস বা সিএনজিযোগে রাণীশংকৈল বাস স্ট্যান্ড এসে ভ্যান বা মোটরসাইকেল দিয়ে বাচোর ইউনিয়ন পরিষদের পুরাতন ভবনের পাশে অবস্থিত রাজা টংকনাথের রাজবাড়ি দেখতে আসতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন
ঠাকুরগাঁও এ বেশকিছু সরকারি ডাকবাংলো বা রেস্ট হাউস রয়েছে। কতৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে এসব রেস্ট হাউসে রাত্রিযাপন করতে পারবেন। আবাসিক হোটেলের মধ্যে হোটেল সালাম ইন্টার ন্যাশনাল, প্রাইম ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল শাহ্ জালাল, হোটেল সাদেক উল্লেখযোগ্য।
কোথায় খাবেন
রাণীশংকেলে মৌচাক রেস্টুরেন্টে খেতে পারেন। এছাড়া খাবারের প্রাত্যহিক চাহিদা পূরণের জন্য এখানে সাধারণ মানের হোটেল ও রেস্তোরাঁ পাবেন। তবে আমের সিজনে ঠাকুরগাঁও গেলে অবশ্যই বিখ্যাত সূর্যপুরী আম খেয়ে আসবেন।