
হাসান নিখোঁজ হবার পনের দিন প্রায় পার হয়ে গেছে, জয়ার জীবন কাটছে ভয়াবহ দুর্ভাবনায়। এদিকে নিজের মাঝে একটু একটু করে বড় হওয়া হাসানের সন্তান, এখনো কাউকে বলতেই পারেনি। মাকে বললে কী হতে পারে ভেবে জয়া অস্থির হয়ে যাচ্ছে। বাবার হঠাৎ মৃত্যু জয়ার মা একদমই মেনে নিতে পারেনি, খাওয়া দাওয়া বলতে গেলে ছেড়েই দিয়েছে। হাসানের মামা ঢাকায় পাগলের মত থানা পুলিশ করে বেড়াচ্ছে। কোন লাভ হয় নাই, এখন পর্যন্ত কোন ক্লু পাওয়া যায় নাই। এর মাঝে জয়া নিজের প্রেগ্ন্যান্সি তাও আবার হাসানের নিখোঁজ অবস্থায়, কিভাবে কি করবে বুঝতে পারছেনা কিছুতেই। (Moreover নিয়তি)
এদিকে হাই লেভেলের প্রেশারে জয়ার বাবার কিছু সাম্ভাব্য খুনি বের করে এরেস্ট দেখানো হয়েছে। যদিও মিডিয়া সোচ্চার এসব অপপ্রচারের জন্য। ধারনা করা হচ্ছে কিছু হাই প্রোফাইল সিক্রেট রিপোর্টিং এর কারনে তাকে এমন নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। পূলক সেনের এক কলিগের কাছ থেকে জানা গেছে, হিউম্যান অরগ্যান ট্রান্সপ্ল্যান্টের একটা সিক্রেট র্যকেটের সাথে জড়িয়ে থাকা কিছু হাই প্রোফাইল ব্যাবসায়ী আর পলিটিশিয়ানদের জড়িয়ে থাকার একটা ক্লু ইয়ের উপর ভিত্তি করে একটা রিপোর্ট নিয়ে কাজ করছিলেন পূলক সেন। Moreover
আরও প্রেমের গল্প পড়ুনঃ
প্রথম প্রেম শেষ ভালবাসা (পর্ব ১)
জয়া আজ ক্যাম্পাসে যাবে ঠিক করেছে, হাসানের কোন ক্লু খুঁজে পায় কিনা দেখা যাক, একটা অসহ্য আতংক অবশ্য আছে বাবার লাশ পাওয়া যাবার জায়গাটা দেখার এক বিরাট ভয়ংকর কষ্ট হয়ত তার হবে। কিন্তু জয়া কে শক্ত হতেই হবে, হাসান কে খুঁজে বের করতেই হবে। দিনে দুপুরে এমন করে তার মানুষ টা হারিয়ে যাবে। জয়াকে অবাক করে দিয়ে আজ কান্তা এসে হাজির জয়ার বাসায়। জয়াকে ওর বাবার মৃত্যুতে সান্তনা জানায়। হাসানের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে। জয়া কান্তাকে দেখে ভেঙ্গে পড়ে। (Moreover নিয়তি)
অনেকক্ষন জড়িয়ে ধরে কাঁদে, এক সময় না পেরে সে তার প্রেগ্ন্যান্সির খবর দেয় ছোটবেলার বেস্ট ফ্রেন্ড কান্তা কে। কান্তা স্তম্ভিত হয়ে বসে থাকে কিছুক্ষণ। কান্তা আগামী সপ্তাহে অষ্ট্রেলিয়ায় চলে যাচ্ছে, সাথে যাচ্ছে ওর হাসবেন্ড। কান্তা কবে বিয়ে করল!!। অবাক হলো জয়া। ‘এই তো গত সপ্তাহেই। এই কারনেই আসতে পারিনিরে তোর খবর নিতে’। বলল জয়া। ‘আচ্ছা শোন হাসানের কোন খবর পেলে আমাকে জানাস প্লিজ। যোগাযোগ রাখিস।“ জয়ার কাছে খুব অবাক লাগে কান্তার হঠাৎ বিয়ের খবর, কেউ ই তাকে জানালো না।
ভার্সিটিতে যাওয়ার আগে হাসানের ফ্ল্যাটে গেলো সে। গেট খুলে খুব অবাক হল, মনে হচ্ছে কেউ একজন থাকছে এখানে, কারন অদ্ভুত পরিষ্কার তার ঘর। পুলিশ এসে সার্চ করে গেছে শুনেছে সে বাড়িওয়ালার কাছ থেকে, আরেক বিপদ হলো বাড়িওয়ালা বাড়ি ছাড়তে নির্দেশ দিয়েছে। এক মাসের মধ্যে। সে অবশ্য তিনমাস সময় চেয়েছে। কী করবে ভাবছে জয়া। সব মিলিয়ে জট পাকিয়ে যাচ্ছে মাথা। কী মনে করে যেন হাসানের টেবিলের ড্রয়ার খুলল জয়া, খুব সাজানো গোছানো মানুষ ছিল হাসান, ড্রয়ারে হাসানের ওয়ালেট আর ঘড়ি দেখে একটু অবাক হল জয়া, পরীক্ষার হলে কী তাহলে সে ঘড়ি ছাড়া গিয়েছিল!! আর ওয়ালেট ই বা এখানে কেন? ওয়ালেট ভুলে ফেলে যাবার মানুষ সে না। কি ভেবে ওয়ালেট টা খুলল সে ওয়ালেটের ভেতরে তার একটা ছবি দেখে জয়ার বুক টা হু হু করে উঠলো। (Moreover নিয়তি)
আরও প্রেমের গল্প পড়ুনঃ
সাঁঝের বেলা (পর্ব – ১)
এত ভালবাসা ছেড়ে হাসান কোথায় চলে গেলো। ওয়ালেটের ভেতরে এক হাজার টাকার দুইটা নোট, কিছু খুচরা দশ বিশ টাকার নোট। আর একটা ছোট গোল প্লাস্টিকের পয়সার মত দেখতে কিছু, কিছুক্ষন নেড়েচেড়ে দেখলো জয়া, কোন কূল কিনারা করতে পারলো না। নিজের ছবিটা বের করলো। পেছনে একটা নাম্বার লেখা, RBK5.30PL3RI2VCT-2807. কিসের নম্বর কে জানে!! (Moreover নিয়তি)
ছাদের পাশে গিয়ে দাড়ালো জয়া,কিছু গাছ লাগিয়েছিল হাসান, জয়া ভাবলো পানি দিয়ে যাবে। গাছ গুলো বেশ সজীব আছে এখনও, অন্য ফ্ল্যাটের কেউ হয়ত ছাদে এসেছিল। যদিও তারা থাকতে উপরে ছাদে কেউ আসতো না। ছাদের রেলিং ধরে দাড়ালো জয়া, চোখের পানি আর আটকাটে পারছেনা কিছুতেই। ভীষন মনে পড়ছে তার হাসান কে। হাসানের সিগারেট খাওয়াটা সে দু’চোখে দেখতে পারতো না, এখন কেন যেন হাসানের সিগারেটের গন্ধ টাও সে খুব মিস করছে। মনে হচ্ছে বেনসানের গন্ধ সে এখনো পাচ্ছে। ভেবেই চমকে উঠলো সে, তার মনে হল কেউ একজন তার পেছন থেকে দ্রুৎ সরে গেল। চমকে পেছন ফিরে কাউকেই দেখতে পেলো না, কিন্তু সিড়ি ভেঙ্গে কাউকে নামতে শুনলো। জয়া দ্রুত সিড়ির কাছে গেল, কেউ নেই কিন্তু খুব পরিচিত একটা গন্ধ। জয়ার আর কিছুই ভাল লাগছেনা, সে ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য রিক্সা নিল। (Moreover নিয়তি)
ক্যাম্পাসের জমজমাট পরিবেশ টা এক দুপুরের কিছুটা স্তিমিত, জয়া সূর্যসেন হলের কাছে গিয়ে, হাসানের বন্ধু আবিদ কে কল দিল। ওদের স্কুল ফ্রেন্ড আবিদের রোল নাম্বার হাসানের পরেই, আবিদ জয়াকে একটা অদ্ভুৎ তথ্য দিল, হাসান নাকি পরীক্ষার মাঝে খানে প্রায় ২০ মিনিট ছিল না মানে ওয়াশ রুমে ছিল, তারপর পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে গেছে সবার আগে। জয়া কী মনে করে যেন আবিদ কে কান্তার কথা জিজ্ঞেস করলো, আবিদ জানেইনা কান্তার বিয়ের খবর। অথচ আবিদের গ্রামের বাড়ীর দুঃসম্পর্কের আত্মীয় ছিল জয়া।
ফলো করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল
Moreover
আর কিছু চিন্তা করার মত ধৈর্য্য নেই জয়ার আজ। খুব ক্লান্ত লাগছে জয়ার। দ্রুৎ বাসায় ফিরলো জয়া। ড্রইয়িং রুমে খুব সুন্দর একটা মেয়ে বসে আছে, জয়ার খুব চেনা লাগলো মেয়েটাকে কিন্তু মনে করতে পারলো না। বাবা মারা যাওয়ার পর অনেকেই এখন বাসায় আসছে। জয়ার মা জানালো ও হাসানের মামাতো বোন রিনি। জয়ার খুব অবাক লাগলো রিনিকে দেখে, অনেক ছোটবেলায় একবার হাসানের বাসায় দেখেছিল, এত সুন্দর হয়েছে সে! রিনির চোখ দুটো লা হয়ে আছে, ঘুম হয়নি মনে হচ্ছে। হাসানের ৩ বছরের ছোট মামাতো বোন রিনি, হাসানের খুব ন্যাওটা ছিল ছোটবেলায়। রিনি জানালো হাসানের মা খুব অসুস্থ, চিকিৎসার জন্য ঢাকায় এসেছেন, হোটেলে উঠেছেন, হাসানের বাসার চাবির জন্য জয়ার কাছে এসেছে রিনি। রিনির হাসিটা খুব সুন্দর, জইয়া ভাবলো। এত ঝামেলার মাঝেও জয়া রিনিকে বলতে বাধ্য হল-‘রিনি তুমি তো খুবই সুন্দর হয়েছ, আগে তো ছোট ছিলে, মনে নেই’
‘দিদি, ওর কোন খবর পাচ্ছিনা, ফুপুর ও শরীর খুব খারাপ’
জয়ার একটা ব্যাপারে খটকা লাগলো, হাসান যে ঢাকায় একা বাসা নিয়ে থাকে, এটা তো ওর মা, মামা বা রিনির জানার কথা না, তাহলে কিভাবে রিনিরা জানলো?
‘রিনি, হাসানের বাসার চাবি আমার কাছে কে বলল?’
‘দিদি আমরা তো জানতাম ও হলে থাকে, কিন্তু কয়দিন আগে টিভি দেখে জানলাম, ও বাসা নিয়েছিল। আর ফুপুর শরীর খুব খারাপ আমরা যখন ঢাকায় রওনা দিচ্ছিলাম, আব্বা কে ফোন করে ওর এক বন্ধু ফোন করে ফুপুর খবর নেয়ার সময় বলল, আপনার কাছে চাবি আছে, আর ওর বাসায় চাইলে আমরা থাকতি পারি’
‘আর কিছু বলেনি?’ জানতে চাইল জয়া? ‘না বলেনি’
জয়া দোটানায় পড়ে গেলো রিনিকে চাবি দিবে কিনা, আসলেই দেয়া ঠিক হবে কিনা। জয়া, হাসানের মায়ের ফোন নম্বর টা চাইল, রিনি ফোন নাম্বার টা দিল, ফোন টা সুইচড অফ বলছে। রিনির মুখের দিকে তাকালো জয়া, ফোন অফ। (Moreover নিয়তি)
আরো পড়ুনঃ
নিয়তি পর্ব ০১
‘দ্যাখো রিনি, আমি বুঝতে পারছি তোমাদের ব্যাপারটা, কিন্তু হাসান কে না বলে আমি কিভাবে ওর বাসার চাবি তোমার হাতে দেই বলতো?’
‘হাসানের বাসার চাবি আপনি হাসানের ওয়াইফের কাছে দিতে পারবেন না?’
‘হাসানের ওয়াইফ মানে, হাসানের ওয়াইফ কে?
‘কেন, মাস তিনেক আগে হাসানের সাথে বিয়ে হয়েছে আমার!’
‘কী যা তা বলছ!’
‘আপনি ফোন করে ফুপুকে জিজ্ঞেস করতে পারেন?’
জয়ার কেমন যেন গা গলাচ্ছিল, সারাদিনের ক্লান্তিতে এম্নিতেই নিজের শরীরের জানা দিচ্ছে হাসানের সত্তা, তার উপর এইসব প্রেসারে পাগল হয়ে যাবে জয়া মনে হচ্ছে। কিছু বোঝার আগেই জ্ঞান হারালো জয়া। Moreover