হুমায়ূন আহমেদের কিছুক্ষণ: ট্রেনে শুরু, ট্রেনেই শেষ

kichukkhon

ঢাকা ইউনিভার্সিটির ফিজিক্সের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী চিত্রা, আর এই চিত্রা কে নিয়েই গল্পের শুরু। চিত্রা তাঁর অসুস্থ মামা কে দেখতে যাবে দিনাজপুর, আর সে ঠিক করলো সে যাবে ট্রেন এ, আর এই ট্রেনের ভোগান্তি নিয়েই এই গল্প শুরু হয়। সে ট্রেন এ যাবে কিন্তু ট্রেনে কোনো বিরক্তিকর যাত্রীর সাথে যেতে রাজি না তাই সে তার বান্ধবী লিলির প্রভাবশালী এক মামার মাধ্যমে টু সিটার স্লিপারের একটি টিকিট এর ব্যবস্থা করে দিতে বলেছিলো, যেখানে কেউ তার সাথে যাবে না।   Moreoverহুমায়ূন আহমেদের

কিন্তু ট্রেনে উঠে চিত্রা আবিষ্কার করে যে, তার টু সিটার স্লিপারে এক মধ্যবয়সী বুড়ো লুঙ্গি পরে বসে রয়েছে! সে কিছুতেই সেই বুড়োর সাথে এক কামরায় যেতে রাজি ছিল না। তাকে এই বিপদ থেকে উদ্ধারে এগিয়ে আসে ট্রেনের আরেক যাত্রী আশহাব। পেশায় ডাক্তার এই যুবক তার মাকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিলো। সে নিজে ওই বুড়ো ভদ্রলোকের সাথে থাকার কথা বলে চিত্রাকে তার মায়ের কামরায় থাকার প্রস্তাব দেয়। চিত্রা সানন্দে সেই প্রস্তাব গ্রহণ করে আশহাবের মায়ের কামরায় চলে যায়। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখা যায় আরেক বিপদ!  Moreover হুমায়ূন আহমেদের

ফলো করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল

সুন্দরী চিত্রাকে দেখে আশহাবের মা সাজেদা বেগম তার পুত্রবধূ নির্বাচনের জন্য ভাইভা সেশন শুরু করে দেন। চিত্রার মা-বাবা কেউ বেঁচে নেই শুনে প্রথমে সাজেদা বেগম পিছু হটলেও কিছু সময় পর এই মেয়েকেই তার পুত্রবধূ হিসেবে পছন্দ করে ফেলেন। সেটা শুধুমাত্র পছন্দ করাতেই সীমাবদ্ধ থাকলে কোনো ক্ষতি ছিল না, কিন্তু তিনি এমনভাবে কথা বলতে শুরু করেন যা শুনে চিত্রা কিছুটা হতভম্ব হয়ে যায়। হুমায়ূন আহমেদের Moreover

এদিকে কামরা বদল করে আশহাব আবিষ্কার করে, যে বুড়ো লোকটিকে নিয়ে চিত্রা মহাবিরক্ত ছিল, তিনি পৃথিবীর সেরা দশ গণিতবিদের একজন, নাম আব্দুর রশিদ উদ্দিন। রশিদ সাহেবের সাথে আশহাব বেশ খাতির জমিয়ে ফেলে, তাকে ম্যাজিক দেখিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তও করে ফেলে। এমন সময়ে চিত্রা এসে সাজেদা বেগমের অদ্ভুত সব কথাবার্তার ব্যাপারে আশহাবকে জানালে সে নিজেও কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। কামরায় ফিরে গিয়ে সে মাকে বোঝানোর চেষ্টা করে, কিন্তু তার নাছোড়বান্দা মা উল্টো তাকেই ভুলভাল বলার দায়ে অভিযুক্ত করে ধমকাধমকি করে। সব মিলিয়ে চিত্রা ও আশহাব দুজনই বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে যায়। Moreover

সেই ট্রেনের আরেক কামরায় এক মাওলানা তার গর্ভবতী স্ত্রী আফিয়াকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছিলো। কিন্তু ট্রেনের ভেতরেই আফিয়ার প্রসব ব্যথা শুরু হয়ে যায়! হতভম্ব মাওলানা ট্রেনে একজন মহিলা ডাক্তারকে খুঁজতে থাকে, কিন্তু পুরো ট্রেনে কোনো মহিলা ডাক্তার ছিল না। চিত্রা ও রশিদ সাহেব মাওলানাকে আশহাবের কথা বলে এবং অনুরোধ করে আশহাবকে তার স্ত্রীর কাছে নিয়ে যেতে। কিন্তু মাওলানা কোনো অবস্থাতেই তার স্ত্রীর জন্য কোনো পুরুষ ডাক্তার নিয়ে যেতে রাজি হয় না। এদিকে আফিয়ার অবস্থা ক্রমশ খারাপের দিকে যেতে থাকে। 

ট্রেনের সবাই কম-বেশি বিপদে থাকলেও অন্যতম অদ্ভুতুড়ে অবস্থায় ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল খায়ের খান। ট্রেনে উঠেই তিনি জানতে পারেন, মন্ত্রীর পদ থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এদিকে মন্ত্রীর স্ত্রী সুরমার এক দুর্ব্যবহারের সূত্র ধরে ট্রেনের কর্মচারীরা তাদের উপর নানা ধরনের প্রতিশোধ নিতে শুরু করে। এসব কর্মকাণ্ড দেখে মন্ত্রীর পরিবার বেশ ভীত হয়ে পড়ে।  Moreover

আরও পড়ুনঃ

শেষপর্যন্ত এই বিপদের হাত থেকে কীভাবে মন্ত্রী মহোদয় রক্ষা পাবেন? অন্য কামরায় থাকা মাওলানার স্ত্রীর কী হবে? আশহাব কি ওই মহিলাকে চিকিৎসা করানোর সুযোগ পাবে, নাকি একজন মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে? চিত্রা আর আশহাবেরই বা কী হবে? সাজেদা বেগমের অদ্ভুত সব পাগলামি কি কাজে লাগবে, নাকি তারা যে যার পথে চলে যাবে? এসব নিয়েই কিছুক্ষণের গল্প এগিয়ে গেছে।

আকারের দিক থেকে ‘কিছুক্ষণ’ বেশ ছোট আকারের উপন্যাস, তাই একেকটি চরিত্র পরিপূর্ণভাবে গড়ে উঠতে যতটা সময় দরকার ততটা সময় পাওয়া যায়নি। তারপরও স্বল্প সময়ে এই উপন্যাসের চরিত্রগুলোকে লেখক বেশ সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। Moreover

‘কিছুক্ষণ’ একটি হাস্যরসাত্মক উপন্যাস, তবে বিভিন্ন মজার ঘটনার মাঝেই লেখক সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। হুমায়ূন আহমেদের সেরা উপন্যাসের সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হলে হয়তো এই উপন্যাস একটু পেছনের দিকে থাকবে, তবে পাঠক যদি নির্মল বিনোদন পেতে চান, তাহলে নির্দ্বিধায় এই উপন্যাসটি পড়ে নিতে পারেন। বিশেষ করে কোনো ট্রেন ভ্রমণের মাঝে পড়লে বইটা আরো বেশি ভালো লাগবে। মন খুলে কিছুক্ষণ হাসার জন্য হলেও ‘কিছুক্ষণ’ উপন্যাসটা পড়া যেতেই পারে। Moreover