নিয়তি – পর্ব ০৩

নিয়তি

“টিভিতে প্রচারিত ব্রেকিং নিউজ- প্রখ্যাত সাংবাদিক পূলক সেন নিহত হয়েছেন, আততায়ীর হাতে। কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে তাকে’ কী করবে বুঝতে পারছেনা জয়া। বাবার হঠাত মৃত্যুর সংবাদ, তাও এভাবে। হাসানের সাথে চলে এসেছে বলে বাসায় ফোনটাও ছেড়ে এসেছে যাতে ওকে খুঁজে না পাওয়া যায়। এদিকে হাসানের কোন খবর নেই। হাসান কে কিভাবে রিচ করবে ভাবতে ভাবতে হাসানের ফোন অন করতে গিয়ে রীতিমতো ধাক্কা খেল জয়া, হাসানের ফোনের মধ্যে সিম নেই কোন। ফোনে লক ও নেই, এম্নিতে হাসানে ফোনে প্যাটার্ন লক থাকে, আজ কিচ্ছু নেই। পুরো ফোন বুকে কারো নাম্বার নেই। মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে জয়ার। তার তীব্র বমি পাচ্ছে। ওয়াশরুমে যাওয়ার আগেই বমি করে ফ্লোর ভাসিয়ে ফেলল সে। ফ্রেশ হয়ে রুম ক্লিন করে কোনরকমে সে নিচে নেমে একটা রিক্সা নিয়ে বাড়ী ফিরতে চাইলো। Hence নিয়তি


প্রখ্যাত সাংবাদিক পূলক সেনকে কে বা কারা বাংলা একাডেমির সামনের রাস্তায় নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে। কোন ক্লু এমনকি ওয়াপন টাও পাওয়া যায় নাই। এমনভাবে লাশটাকে কুপিয়েছে যে মুখাবয়ব বদলে গেছে। পুরো শরীরটা চাপাতি জাতীয় কিছু দিয়ে ইচ্ছা মত কোপানো হয়েছে। যখন তাকে কোপানো হচ্ছিল, কাকতালীয় ভাবে কোন শব্দ পাওয়া যায় নাই, তার মুখ আগেই বেধে নেয়া হয়েছিল। বৃষ্টির দিন হওয়াতে ঐ দিক টা বেশ ফাকা থাকে। বিরাট প্ল্যান করে এটা করা হয়েছে। প্রচন্ড রাগ থেকে কেউ এটা করেছে বলে ধারনা করা হচ্ছে। বিভিন্ন সংগঠন এটাকে মৌলবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করছে। পুলিশ সন্দেহভাজন দুইজন কে ধরেছে, যারা সোহরোয়ার্দি উদ্যানে নিয়মিত ড্রাগ বেচে। আপাতত মানুষের মনের আগুন ছাইচাপা দেয়ার একটা দূর্বল প্রেচেষ্টা। এদিকে প্রেসক্লাবের সামনে মানব বন্ধন করছে সাংবাদিকদের একটি সংস্থা। রাস্তা বন্ধ হয়ে আছে এই দিকের। Moreover নিয়তি

আরো পড়ুনঃ- কল্পকাহিনি

নিয়তি- পর্ব ০২

অনিকের গল্প পর্ব ৯

পূলক সেন গোড়া ধার্মিক ছিলেন না, তবে হ্যাঁ নিজের ধর্মের প্রতি জাত্যাভিমান ছিল। একমাত্র মেয়ে জয়াকে নিয়েই তার ভূবন আবর্তিত হত। জয়ার ব্যাক্তিগত জীবন নিয়ে একটু খুতখুতে ছিলেন তিনি। জয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড হাসান কে তিনি দুই চোখে দেখতে পারতেন না, হাসানের নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার আর বোকাটে চেহারা কোনটাই তার পছন্দ ছিল না, আতার চেয়েও বিরক্তিকর ছিল তার মেয়ের অতিরিক্ত হাসান প্রীতি, ভাল কিছু বাসায় রান্না হলেই এই ছেলে বাসায়। সে অনেকবার মেয়ের মায়ের মাধ্যমে জানতে চেয়েছিলেন হাসানের সাথে সম্পর্ক টা আসলে জয়ার কতদূর। Further more নিয়তি

জয়ার মা বারেবার ই তাকে নিশ্চিন্ত করেছে। সে যদিও পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হতে পারেনি, তবু কিছুটা আশ্বস্ত হয়েছিল। কিন্তু কিছুদিন আগে সে ওয়েস্ট পেপার বাস্কেটে একটা প্রেগ্ন্যান্সি স্ট্রিপ পেয়েছিল, এই বাসায় যেহেতু জয়া ছাড়া আর কেউ প্রেগ্ন্যান্ট হবার মত নেই তাই সে ভীষন ভয় পেয়ে গিয়েছিল। জয়া ভার্সিটি যাবার পরে তন্ন তন্ন করে বাসা খুঁজে হাসানের সাথে বেশ কিছু ছবি পেয়েছে, যেগুলো দেখে বোঝা যাচ্ছে তাদের বিয়ের ছবি। Therefore নিয়তি

পূলক সেনের ইচ্ছে করছিল সব ভেঙ্গে চুড়ে ফেলেন। সে কখনোই নিম্নবিত্ত এক মুসলিম ছেলের কাছে মেয়েকে তুলে দিতে পারেন না। তাকে অনেক কঠিন কিছু খেলা খেলতে হবে, খেলা গুলো জটিল আর এমন হবে যেন জয়া কষ্ট না পায়, জয়ার সন্তানের একটা ব্যাবস্থা নিতে হবে, দেরি করা যাবেনা।পৃথিবীর অন্যতম নিষ্ঠুরতার প্ল্যান করলেন পূলক সেন। আজ সকালেই সে জয়ার লেখা চিঠিটা পেয়েছিলেন তার ড্রয়ারে, মুচকি হাসলেন। আজকেই তাহলে সেইদিন যে দিনের প্রিপারেশান তিনি নিয়েছেন গত কয়েকদিন থেকে। কিন্তু আজ বিকেলেই পাশার দান উল্টে যাবে তা সে কক্ষনো ভাবতে পারেন নি। কিংবা ভেবেছিলেন কি!! Further more
হাসান তার শেষ পরীক্ষা নিয়ে অনেক অনেক প্ল্যান করে রেখেছিল। জয়া কে বলা হয়নাই, তার একটা জবের কথা ফাইনাল হয়ে গেছে একটা এন জিও তে। মোটামুটি ভাল স্যালারি। ভেবে রেখেছিল আজ ই জানাবে। মা কে জানিয়েছে। মাকে আরেকটা কথা জানিয়েছিল হাসান, সে বিয়ে করতে চায়। মাও খুব খুশি হয়েছিল শুনে। মা অবশ্য হাসানের জন্য পাত্রী ঠিক করেই রেখেছিলেন, এটা হাসান পরীক্ষা দিয়ে আসলেই বলবে বলে ঠিক করে রেখেছেন, হাসান আজ এক্সাম দিয়ে সন্ধ্যায় বাসায় আসবে। মা হাসানের প্রতীক্ষায়।
জয়া বাসায় ফিরে দেখে ভয়াবহ অবস্থা, মায়ের জ্ঞান নেই, বাসায় পুলিশ, মিডিয়া, সরকারি কর্মকর্তা, লোকাল এম পিও আসছেন। মায়ের অবর্তমানে তাকেই নাকি সামলাতে হবে সব। এর মাঝে জয়ার অস্থির দুইচোখ কেবল ই হাসান কে খুঁজছে। এত বড় নিউজ হাসানের চোখে কী পড়েনি!! তাছাড়া ক্যম্পাসেই ঘটেছে ঘটনা টা তাহলে কিভাবে হাসানের অজানা থাকবে!! হাসান আসলে কোথায়, সিম টাই বা কেন খুলেছে, কোথায় সে। Then

জয়ার খুব খারাপ লাগছে শরীর। তবুও তাকে একের পর এক মিডিয়া ফেইস করতে হচ্ছে। হাসান কোথায়?
জয়াকে একের পর এক প্রশ্ন করা হচ্ছে, সে কি বলবে বুঝতেই পারছেনা। তার মনে হচ্ছে সে কিছুই কান দিয়ে শুনতে পাচ্ছেনা, এর মাঝে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের একজন ঊর্ধতন কর্মকর্তা জানালেন, তিন নেতার মাজারের সামনে একটি মোবাইল পাওয়া গেছে, যেটাতে কোন সিম নেই, কিন্তু স্ক্রিনে জয়ার ছবি থাকায়, তাদের ধারনা ফোনটি পূলক সেন এর। জয়া ফোন টি দেখে তার বাবার বলে সনাক্ত করলো। ঐ কর্মকর্তার ধারনা সঙ্ঘবদ্ধ হাইজ্যাকারদের হাতেই খুন হয়েছে পূলক সেন। জয়া ভাবছিল, সামান্য মোবাইল আর কিছু টাকার জন্য এমন নৃশংসভাবে কেউ কাউকে খুন করে!! সম্ভব!! আচ্ছা সি সি টিভি ফুটেজ কি পাওয়া যাবে না? পুলিশের ডি আই জি সাবের খান জয়ার বাবার খুব ভাল বন্ধু, জয়া উনাকে ব্যাপারটা বলতেই, বললেন উনি খোঁজ নিয়েছিলেন, বিকালের হঠাত বৈশাখী ঝড়ের কারনে সেদিন প্রায় সন্ধ্যা সাত টা পর্যন্ত ঐ এলাকায় ইলেক্টট্রিসিটি ছিল না। Moreover

ফলো করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল


পূলক সেনের ভাই বোনের বেশিরভাগ ই ইন্ডিয়ায়, আত্মীয় বলতে বন্ধু আর কলিগরা। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার শেষকৃত্য করা হল। ইমার্জেন্সি ভাবে পোস্ট মর্টেম করা হল, পোস্ট মর্টেমে ‘ডেথ বাই সাফোকেশান’ দেখানো হয়েছে। তার মানে কোপানোর আগে মৃত্যু হয়েছিল পূলক সেনের। আর অদ্ভুত ব্যাপার হলো মরার সময় দেখানো হয়েছে দুপুর ২ টা থেকে ৩ টার দিকে। তাহলে কি অন্য কোথাও হত্যা করে এনে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কোপানো হয়েছে তাকে? তার মতো একজন সাংবাদিকের শ্ত্রু থাকতেই পারে, কিন্তু এভাবে নৃশংসভাবে খুন করার মত কোন তার কী থাকতে পারে? আজীবন ঢাকা শহরে কাটানো পূলক সেন ছিলেন নির্ঝঞ্জাট ভদ্রলোক। কত বড় বড় মানুষের সাথে উঠবোস করেছেন আজীবন। তার মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত শোক জানিয়েছেন। জয়া ভেবেই পাচ্ছেনা কি এমন হয়ে গেল বাবার সাথে যে এভাবে মৃত্যু বরণ করতে হলো তাকে। After That
পূলক সেনের মৃত্যুর চারদিন পার হয়ে গেলো, হাসানের কোন খোঁজ নেই। হাসানের বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছে জয়া, হাসান নাকি শেষ পরীক্ষা দিয়েই তাড়াহুড়া করে বেরিয়ে গেছে। অন্যরা হল থেকে বেরিয়ে আসার আগেই তাকে আর দেখা যায় নি। হাসান বাড়ী ও যায় নাই। তাহলে কোথায় সে?
জয়ার চোখ বেয়ে এখন শুধুই অশ্রু। একে সদ্য বাবা হারানো তার উপর হাসান নিখোঁজ। তার কাছে সব চেয়ে অবাক লাগছে, হাসানের মোবাইলে সিম না থাকার ব্যাপারটা। ঘটনার আগে শেষ কথা হয়েছিল দুজনের আগের দিন রাত ১০ টায়, তখন ই সব প্ল্যান ফিক্সড করা হয়েছিল। সকালে হাসান পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পর, জয়া বাসায় ঢুকেছে তার কাছে থাকা অন্য চাবি দিয়ে। এরপর থেকে হাসানের কোন খোঁজ খবর নাই, হাসানের মামা পুলিশ কেইস করেছেন। কিন্তু পূলক হত্যা মামলার আড়ালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারন ছাত্র নিখোঁজ এর খবর টা বড্ড বেশি ফিকে লাগছে। জয়া জানেনা কিভাবে খুঁজে পাবে হাসান কে। কিন্তু তাকে যে পেতেই হবে হাসান কে।
চলবে…।

মন্তব্য করুন