
আজ টিউশানির প্রথম দিন। একটু কেমন যেন অদ্ভুত লাগছিলো। প্রথম টিউশানি বলে কথা। বাসা থেকে তেমন দূরে নয়। হেঁটেও যাওয়া যায়। তবে আজ প্রচণ্ড রোদ। এই রোদে হেঁটে হেঁটে হাঁপিয়ে পরলাম কোনো ভাবে পাঁচ তলায় উঠলাম। বেল চাপতেও কষ্ট হচ্ছিল। দরজা খুলেন এক মহিলা। তাকিয়ে আছেন হয়ত বাসায় কাজ করেন।আমি পরিচয় দিলাম
-জি আমি ইফতির স্যার।
– ওহ আচ্ছা আসেন।
তারপর উনি ইফতি কে ডেকে দিলেন। ইফতি আমাকে উকি মারছিল। একটু পর ইফতির মা আসলেন। আমি সালাম দিয়ে দাঁড়ালাম।
– বসো..ভালো আছ? তোমার মা ভালো আছে?
– জি ভালো আছি। আর মাও ভালো আছেন।
তিনি ইফতিকে নিয়ে এলেন।
-এই হল তোমার ছাত্র। একটু দুষ্ট আর চঞ্চল তুমি ওকে দেখো । তখন ইফতি কে দেখে মোটামোটি শান্ত মনে হল। তারপর আমি পড়াতে বসলাম। ছেলেটিকে দেখতে যতটা শান্ত মনে হয়েছিল তার চেয়ে দিগুণ চঞ্চল সে। প্রথমেই সে আমাকে প্রশ্ন করে বসে..
-স্যার আপনার কি কোনো মেয়ে বন্ধু আছে?
আমি তার দিকে হা করে তাকিয়ে আছি। বলে কি ছেলে.. এত দেখছি মহা বিপদ তারপর বলে উঠলো
– স্যার আমার কিন্তু আছে।
– না আমার কোন বন্ধু নেই।
– তাহলে আপনি নিরামিষ?
আমি বুঝতে পারছিলাম না হাসবো নাকি কাঁদব… খুব হাসি পাচ্ছিল। তারপর কিছু না বলে একটা গল্প শুনিয়ে পড়া শুরু করে দিলাম। আহ আজকে পড়ানো শেষ করে কোনোরকম বেরিয়েছি। পড়া নয় মূলত প্রশ্নের জবাবদিহি করছিলাম। সূর্যের তাপ যেন আরো বাড়ছে। রাস্তার পাশের এক টং থেকে সিগারেট নিয়ে আবার হাঁটা শুরু করলাম। আর ভাবছিলাম মিহিমার সাথে দেখা করা দরকার। হঠাৎ ভাবতে ভাবতে কেমন যেন বুকে চিন চিন করে উঠলো। আচ্ছা আমাকে মিহিমা পছন্দ করে! বাসায় চলে এলাম ভাবতে ভাবতে। কেমন যেন অদ্ভুত চিন্তা মাথায় ঘুরছে। মিহিমা কলেজে ভর্তি হবে এবার। সকালে যা একটু বের হয়,তাও সেই নার্স কে নিয়ে। আচ্ছা সেই নার্সের সাথে তার কি সম্পর্ক হতে পারে। নার্স টা কে সারাদিন দেখি মিহিমার সাথে। খুব অস্থির লাগছে কেমন যেন। কিছু না ভেবে বাসা থেকে বেরিয়ে মিহিমার বাসার দিকে গেলাম। দারওয়ান গেটে নেই,দেখলাম সামনের মামার টং থেকে পান নিচ্ছে। আমি গেটে ঢুকে সোজা সিড়ি দিয়ে উঠতে থাকি। ভাবছি কি বলবো আজ আবার। আজ যদি অন্য কেও খুলে। দরজার সামনে এসে সাহস করে বেল চাপলাম। ওপাশ থেকে জিজ্ঞেস করছিলো কে.. আমি কিছুই বলতে পারছিনা, চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম। দরজা খোলা হল অর্ধেক, একটা মেয়ে। মেয়েটিকে দেখেছি মিহিমাদের ব্যালকনিতে এবং বাসায় ও এসেছিলো। মেয়েটি আমাকে দেখে চিনে আর..
– ভাইয়া আপনে? দাঁড়ান আমি খালাম্মারে ডাহি।
– না না শুনেন। আমি খালার কাছে আসি নি।
– ওহ তো বাসায় আসেন!
– না না.. ঠিকাছে আমি ইয়ে.. মিহিমা কোথায়? ওকে একটু ডেকে দিবেন?
– আপু তো একটু…
বলতেই মিহিমা এলো.. তাকে কেমন যেন দেখাচ্ছিল। সে আস্তেই বলল
– আরেহ আপনি? কিছু বলবেন?
– না মানে তুমি ভালো আছো তো?
– হুম… আপনি বাসায় আসুন!
– না না ঠিকাছে। উম.. ইয়েহ.. তোমার সাথে একটু কথা ছিল। তুমি কি বের হবে আজ?বা অন্য কোনো দিন!
– সমস্যা নেই এখানে বলতে পারেন। কিছু বলবেন? আচ্ছা আজ বিকেলে!
– বিকেলে..? সত্যি! আচ্ছা ঠিকাছে.. উম কোথায়?
– সেই একিই জায়গাতে..
– ওহ ঠিকাছে… আচ্ছা আসি। আসবে তো
– হ্যা…
আজ কেমন যেন খুশি লাগছিলো। অদ্ভুত লাগছে সব। আমি বাসায় চলে এলাম আর এখন থেকেই সময় দেখছি। মাত্র ১ টা বাজে কখন যে সময় পার হবে। কি পরবো ভাবছিলাম। আজ পাঞ্জাবী পরে গেলে কেমন হয়। উফ বুঝতে পারছিনা। এরপর নীল পাঞ্জাবী পরলাম।নীল রং মিহিমার অনেক প্রিয়।আমি তখনি বের হয়ে গেলাম বাসা থেকে। রাস্তায় হাঁটছি আর ঘড়ির কাঁটা দেখছি। আমি চলে এলাম সেই রমনাপার্কে। এসে ঠিক সেই জায়গা টিতে বসে আছি। একটু দুরেই একটি ছেলে ফুল বিক্রি করছিল। তাকে ইশারা দিয়ে ডাকলাম তারপর আমি তার কাছ থেকে সব ফুল কিনে নিলাম। বিকেল ৩ টা বাজে ভাবছিলাম এই বুঝি মিহিমা এলো। কেমন যেন অস্থিরতা বেড়েই চলেছে। মিহিমার কথা মনে করে হাসছি। মেয়েটা কিছুটা পাগলী স্বভাবের। মনে হচ্ছে পেছন থেকে মিহিমা ডাকছে,কিন্তু পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখি কেউ নেই। মনে হচ্ছে সময় ও শেষ হচ্ছে না। ৫ টা বাজলো মিহিমা এখনো এলো না। মাথায় কি সব হাবিযাবি চিন্তা আসছে। আরেহ ধুর এখনি আসবে হয়ত। দেখতে দেখতে ৬ টা বাজলো কিছুটা সন্ধ্যে সন্ধ্যে ভাব। কি ব্যাপার মিহিমা এখনো এলো না। কোনো সমস্যা হল নাকি! নাকি বাসা থেকে বের হতে দিচ্ছে না। কেমন যেন বুকে ব্যথা করছে চিন চিন। খালি খালি লাগছে চারদিকে। ফুল গুলো র দিকে তাকিয়ে আছি আর ভাবছি, কি হল। সন্ধ্যা হয়ে গেছে… আমি এখনো বসে আছি,মনে হচ্ছে মিহিমা আসবে। কিন্তু মিহিমা এলো না… ফুল গুলো নিয়ে উঠে গেলাম চারদিকে দেখছি আর ভাবছি মিহিমা কি কোথাও আছে,সে কি লুকিয়ে আছে কোথাও। ফুল গুলোর মধ্যে একটি গোলাপ ফুল পকেটে নিয়ে বাকি গুলো অখানেই রেখে এলাম। রাস্তায় হাঁটছি কোথায় যাচ্ছি জানিনা। বাসায় ও যেতে ইচ্ছে করছে না। কেমন যেন লাগছে সব। কি হয়েছে মিহিমা ঠিক আছে তো.. সব ঠিকাছে তো। হয়ত বাসায় কেও অসুস্থ হয়ে পরেছে।হাঁটতে হাঁটতে বাসার কাছাকাছি চলে এলাম।বাসায় যাবো না। মাথাটা প্রচন্ড ব্যথা করছে। আমি মামার টং এর দিকে গেলাম।
– মামা চা দাও আর একটা সিগারেট।
আমি মিহিমাদের বাসার দিকে তাকিয়ে আছি। আজ ব্যালকনিতে আলো জলছে না, অন্ধকার হয়ে আছে। হঠাৎ মামা বলে উঠলেন..
– আহা বেচারা মাইয়া টা! কি যে অবস্থা।
আমি অন্যমনস্ক ছিলাম। হঠাৎ শুনলাম মামা কি যেন বলছে।
– কিছু বলছিলেন?
– হ বাবা কি আর কমু। আল্লাহ কত কিছু যে করে।
– ওহ.. হুম।
– মাইয়াটা বেচারি বয়স ও তো কম।
– জি.. বুঝিনি। কার কথা বলছেন? কার বয়স কম।
– ওই যে ওই বাসার মাইয়াডার কথা কইতেসি বাবা।
– কেন কি হয়েছে?
– এইত একটু আগেহ মাইডারে হাসপাতালে লইয়া গেসে।
– মানে! বুঝলাম না… কাকে নিয়ে গেছে? কি হয়েছে?
– হ্যা মাইয়াডার রোগ ছিল, জানিনা কি অইছে। কিন্তু একটু আগেহ সবাই মিল্লা তারে এম্বুলেন্স কইরা হাসপাতালে লইয়া গেছে।
– কি বলছেন এসব! মিহিমা! না হয়ত অন্য কেও অদের বাসার আপনার জানতে ভুল হয়েছে মামা।
– বাবা এহানে আমি সারাদিন থাকি, সবাইরে চিনি। মাইয়ার মামাও কইসিল।
আমার কেমন যেন হাত পা কাঁপছিল খুব। কোনো ভাবে উঠে দাঁড়ালাম।
– আমাকে একটু বলেন কোন হাসপাতালে নিয়ে গেছে?
– বাবা আমি তো জানিনা.. আমি শুধু এম্বুলেন্স দেখেছি।
অনিক দৌড়ে দারওয়ান এর কাছে গেলো। তাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করলাম মিহিমা কোন হাসপাতালে।
দারওয়ান আজ কিছু না জিজ্ঞাস করেই অনিক কে সাথে সাথে বলে দিলো। অনিক ডানে বামে কিছু দেখল না। সে ঢাকার ইউনাইটেড হসপিটালের দিকে গেলো। অনিকের পা যেন চলছে না। তবুও সে হাঁটছে যত তাড়াতাড়ি পৌছানো যায়। অনিকের মাথা কাজ করছে না আজ। অনিক শেষ পর্যন্ত রিক্সা নেই আর পা চলছে না। অবশেষে চলে এলো ইউনাইটেড হসপিটালে। সে আজ কে কি বলবে কি করবে কিচ্ছু আসছে না মাথায়। অনিক হসপিটালে ঘুরছে এখানে সেখানে… কিন্তু কোথায় মিহিমা। মিহিমাকে পাচ্ছে না। হঠাৎ কেউ একজন পেছন থেকে ডাক দেয় অনিক..অনিক চিনতে পারলো.. এই তো সেই নার্স।
– আপু মিহিমা..!
– হ্যা ওকে এখানে আনা হয়েছে। ওর অবস্থা তেমন ভালো না।
অনিকের মাথায় অনেক প্রশ্ন কিন্তু জিজ্ঞেস করতে তার একদমই ইচ্ছে করছিল না।অনিক হাঁপিয়ে গেছে কথা বলতে পারছে না।
– কিন্তু মিহিমা তো একদম সুস্থ। ওর তো তেমন কিছুই দেখলাম না। কিভাবে…! অনিক শুধু ভাবছে এসব নিজের মনে মনেই প্রশ্ন করছে ।
অনিক ভাবতে পারছে না কিছুই। সব কেমন যেন হঠাৎ এলো মেলো হয়ে গেছে। অনিক দূর থেকে মিহিমার পরিবার কে দেখে। সবাই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছে। অনিক বুঝতে পারছিল না কি হচ্ছিল। এরপর অনিকের কাছে সব কেমন অদ্ভুত লাগছে। তখন রাত ১০ টা.. অনিক হয়ত এই দিনটা আশা করেনি।অনিক ডক্টর এর সাথে কথা বলে চলে যায় । সে কেমন পাথরের মত চুপ চাপ দাঁড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাঁটা শুরু করে। যে মিহিমা কে সে ব্যলকনিতে দেখত সে আজ হসপিটালের এক আই সি ইউ তে শুয়ে আছে। কি সব অদ্ভুত কল্পনা আসছে । হয়তো একটু ঘুমালে ভালো হয় খুব ক্লান্ত লাগছে সারা শরীর মেজমেজ করছে। হেঁটে হেঁটে অনিক বেড়িয়ে এলো হাসপাতাল থেকে সে হাঁটতে শুরু করলো ।
অনিকের গল্প পর্ব ১ পড়ুন এখানে
অনিকের গল্প পর্ব ২ পড়ুন এখানে
অনিকের গল্প পর্ব ৩ পড়ুন এখানে
অনিকের গল্প পর্ব ৪ পড়ুন এখানে
অনিকের গল্প পর্ব ৫ পড়ুন এখানে
অনিকের গল্প পর্ব ৬ পড়ুন এখানে
অনিকের গল্প পর্ব ৭ পড়ুন এখানে
অনিকের গল্প পর্ব ৮ পড়ুন এখানে
শেষ পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম
[…] By Istiak কল্পকাহিনি ফিকশন মে ১৯, […]
[…] অনিকের গল্প পর্ব ৯ […]
[…] অনিকের গল্প পর্ব ৯ […]
[…] অনিকের গল্প পর্ব ৯ […]