স্বল্প খরচে মেঘালয়ে

shutterstock-1127211422

পোর্ট: ভিসা অবশ্যই ডাউকি বর্ডার দিয়ে থাকতে হবে। বাই রোডে ডাউকি ছাড়া মেঘালয় যাওয়া যায়না, যাদের ভিসা অন্যান্য বর্ডার দিয়ে করা তারা পোর্ট এন্ট্রি করে নিতে পারবেন।

ধরণ: স্বল্প খরচে রিলাক্স ট্যুর

সময়: ৪ রাত,৩ দিন

খরচ: ৬,২০০ টাকা/ ৪,৮৯৮ রুপি

❑ ভ্রমণের স্থান সমুহঃ

*শিলং

*চেরাপুঞ্জি

*উমগট রিভার

*উমক্রেম ওয়াটারফলস

*এলিফ্যান্ট ওয়াটারফলস

*সেভেন সিস্টার্স ওয়াটারফলস

*ওয়াকাবা ওয়াটারফলস

*নোহকালাইকাই ওয়াটারফলস

*ইকো পার্ক

*এশিয়ার সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রাম মাওলিংলং

*লিভিং রুট ব্রিজ

*মাওসমি কেভ

বিস্তারিত:

২৯ জুলাই:

 রাতে আমরা তিনজন(আমি,আমার এক বান্ধবী এবং আমাদের এক ছোটভাই)  মহাখালী থেকে এনা বাসে(নন-এসি,৪৭০ টাকা করে) ঢাকা থেকে সিলেট এর উদ্দেশ্য রওনা দেই।

৩০ জুলাই:

 ভোরে সিলেটে নেমে ব্রেকফাস্ট শেষ করে তামাবিল বর্ডারের উদ্দেশ্যে রওনা দেই।কাস্টমস,ইমিগ্রেশনসহ সব ফরমাল কাজ শেষ করে সকাল দশটায় বর্ডার ক্রস করি।(ইমিগ্রেশন রুমে ১০০ টাকা করে চায় কিন্তু আমরা দেইনি।বলেছি আমরাতো ঢাকায় ট্যাক্স দিয়ে এসেছি,এখানে কিসের জন্য দিবো?পরে আর কিছু বলেননি। )

বর্ডার থেকেই ট্যাক্সি,জিপ পাওয়া যায়(৪/৬/১০ জনের করে)আমরা প্রথমে ৬জন(বর্ডার থেকে বাংলাদেশি ৩জন যুক্ত হয়েছিলো)মিলে ৩,০০০ রূপিতে শিলং (সাইট সিয়িংসহ) যাওয়ার জন্য ভাড়া করেছিলাম পরে দেখি আমাদের টাকা ভাঙাতে হবে তাই ক্যান্সেল করে দেই।কিছুটা দূর হেঁটে  ডাউকি বাজার যাই, ওখান থেকে রূপি করে নেই।তারপর ডাউকি বাজার থেকে আলাদা করে ৩জন মিলে ২,৫০০ রূপি দিয়ে শিলং এর উদ্দেশ্যে রওনা দেই(সাইট সিয়িংসহ)।ড্রাইভারকে সাইট সিয়িং এর কথা অবশ্যই বলে নিতে হয় কারণ ডিরেক্ট গেলে ভাড়া কম আসে।আমরা ৪জনের গাড়ীতে ৩জন ছিলাম নাহয় আমাদের খরচ আরো কম হতো।

নোট: যারা একদম কম খরচে ট্যুর দিতে চান তাদের উদ্দেশ্যে বলবো,যাবার সময় সাইট সিয়িং না করে ডিরেক্টর যাওয়া ভালো তাতে খরচ অনেক কমে যাবে।যাবার সময় ‘মেঘালয় ট্যুরিজম সার্ভিস’ এর বাস নাই কিন্তু আসার সময় শিলং থেকে  ট্যুরিজম সার্ভিসের বাস পাওয়া যায় সাইট সিয়িংসহ (৫০০ রূপি করে)।আমরা যাবার সময় জিপ করে এবং আসার সময় বাসে করে দুইবার সেইম স্পটগুলো দেখেছি।

আমরা শিলং যাওয়ার পথে প্রথমে উমক্রেম ঝর্ণা,এরপরে  এশিয়ার সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রাম মাওলিংলং।দুপুরের খাবার খেয়েছি মাওলিংলং এ,খাবার খুবই সুস্বাদু ছিলো,vegetable thali-100 rupee, non-vegetable thali-150 rupee এবং শেষে লিভিং রুট ব্রিজ (এখানের জলপ্রপাতটা খুবই ভয়াবহ, অনেক স্রোত) দেখে শিলং শহরে চলে যাই। সন্ধ্যা ৭টায় শিলং পৌঁছে হোটেলে চেক-ইন।আমরা ২টা সিংগেল রুম নেই পার নাইট ৬০০ রুপি করে।একটাতে আমি আর আমার বান্ধবী (তবে এরা সিংগেল রুমে অনেকসময় ২জনকে থাকতে দেয়না),অন্যটাতে আমাদের ছোটভাই থাকে(তবে একা একরুমে থাকায় ওর খরচ আমাদের চেয়ে বেশি লাগছে) এরপর রাতের খাবার খেয়ে ঘুম দেই।

নোট: শিলং শহরের দোকানপাট রাত ৮:৩০টার মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়।আমরা পুলিশ বাজারের পাশেই ছিলাম,ওখানে নিউমার্কেট এর মতো মার্কেট বসে।

আরো পড়ুন

চট্টগ্রামের সবচেয়ে সুন্দর ও মনোমুদ্ধকর ট্রেইল সোনাইছড়ি ট্রেইল এখানে

৩১ জুলাই:

সকাল ৭টায় নাস্তা শেষ করে বের হই মেঘালয়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান চেরাপুঞ্জি যাওয়ার উদ্দেশ্যে।আমরা চেরাপুঞ্জি যাই ট্যাক্সিতে ১,৯০০ রুপিতে(আসা-যাওয়া,সাইট সিয়িংসহ)।প্রথমে দেখি এলিফ্যান্ট ফলস,এরপর একে একে নুহকালিকাই ফলস(তবে কপাল খারাপ থাকলে মানে মেঘ থাকলে দেখা যায়না, আমরা দেখতে পাইনি), ইকোপার্ক,  সেভেন সিস্টার ফলস(কপাল ভালো ছিলো অনেক জোস ভিউ পেয়েছি, অসম্ভব সুন্দর), Mawsami caves (অনেকটা আলুটিলা গুহার মতো)এখানেই দুপুরের খাবার খাই chicken thali-150 rupee করে।সব শেষে বিকেল ৫:৩০টায় শিলং ব্যাক করি। সন্ধ্যার পর পুলিশ বাজারে শপিং।

নোট:

 শিলং থেকে চেরাপুঞ্জি ট্যুরিজম সার্ভিস এর বাসে যাওয়া যায় ১৫০ রুপি করে(সাইট সিয়িংসহ)।তবে আমরা ব্যক্তিগতভাবে ট্যাক্সিতে গিয়েছি দেখে পথেঘাটে ইচ্ছামত ট্যাক্সি থামিয়ে দেখতে, ছবি তুলতে পেরেছি।তাছাড়া  ৪জনের ট্যাক্সিতে আমরা ৩জন ছিলাম তাই আমাদের খরচ বেশি পরেছে।

১ আগস্ট :

সকালের নাস্তা শেষ করে ৭:৪৫ এর মধ্যে বাস কাউন্টারে থাকি।আসার দিন আমরা ‘মেঘালয় ট্যুরিজম সার্ভিস’এর বাসে আসি,আগের রাতেই টিকিট কেটে রাখি ৫০০ রুপি করে।টিকিট কাটার সময় বলতে হয় আমরা বর্ডার ক্রস করবো,টিকিট কাউন্টার পুলিশ বাজারে। পথে আমরা লিভিং রুট ব্রিজ, মাওলিংলং ভিলেজ(এখানে যাওয়ার সময়ের মতো একই রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার খাই),উমগট রিভার-ডাউকি দেখি।

 বিকেলে বর্ডার ক্রস করে  সিলেট এসে রাতের বাসে (শ্যামলী, নন-এসি,৪৭০ টাকা করে) রওনা দেই।সকাল ৬টায় ঢাকায় পৌঁছাই।

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:

১.বোরহিলস ফলস যাওয়ার পথ ভালোনা তাই বেশিরভাগ গাড়িই যেতে চায়না,গেলেও ভাড়া বেশি লাগে।আমরা বোরহিলস যাইনি।

 ২.ক্রাংসুরি ফলস দেখতে হলে আরেকদিন লাগতো তাই শুধু একটা স্পটের জন্য আমরা ওতোদূর যাইনি।

৩.ডাবল-ডেকার দেখার জন্যেও একদিন লাগে এবং অনেক ট্রেকিং করতে হয়, প্রায় ৬,০০০ সিঁড়ি উঠানামা করতে হয় তাই ওখানে যাইনি।

৪.উমক্রেম ফলস বাদে বাকী সবগুলো স্পটেই এন্ট্রি ফি,পার্কি ফি লাগে (প্রত্যেক স্পটে এন্ট্রি ফি -৩০/২০ রুপি, পার্কিং ফি -২০ রুপি করে)

৫.রাত ৮ টার দিকে দোকানপাট বন্ধ হয় চেরাপুঞ্জিতে,শিলংয়ে ৮:৩০টার মধ্যে বন্ধ হয়।সন্ধ্যায় শিলংয়ে ঢুকতে গেলে প্রচুর

জ্যামে পরতে হয়।

৬.বর্ডারে ডলার দেখতে চাইতে পারে,সেক্ষেত্রে অবশ্যই ডলার এনফোর্সমেন্ট ও নগদ ডলার নিয়ে যাবেন।বর্ডারে ঢোকা ও বের হওয়ার লাস্ট টাইম বিকাল ৫.৩০ মিনিট।

বর্ষাকালই মেঘালয় ভ্রমণের উপযুক্ত সময়,হয়ত মেঘের কারনে ২/১ টা স্পট মিস করতে পারেন কিন্তু বর্ষায় আপনি ফলসগুলোর যে রুপ পাবেন তা অন্য সময় পাবেন না।সম্ভব হলে রবিবার এড়িয়ে প্লান করবেন,কেননা এসময় খাবার দোকানসহ বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ থাকে,যানবাহন ও কম পাওয়া যায়। এ সময় সাথে অবশ্যই ছাতা,রেইনকোট,ঠান্ডাজনিত ঔষধপত্র সাথে রাখবেন। কিছু হালকা শীতের জামা নিয়ে যাবেন।শিলং ও চেরাপুঞ্জিতে খাবারে কিছু সমস্যা হতে পারে,সংখ্যাগরিষ্ঠ লোক খাসিয়ান তাই বেশিরভাগ দোকানেই শূকর বিক্রি হয়,সেক্ষেত্রে একটু সময় নিয়ে খুঁজে দেখতে  হবে।

[নিজের দেশ ও অন্যান্য দেশ ঘোরাঘুরির সময় কখনো  যেখানেসেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলবেন না এবং সবসময় স্থানীয়দের সাথে ভালো ব্যবহার করবেন]

লিখেছেনঃ- আনিকা তাহসিন

মন্তব্য করুন