
আজ খুব ভোরেই ঘুম ভাঙ্গল। সকাল ৬ টা বাজে,চোখ খুলে আবারো ঘুমানোরর চেষ্টা করলাম,প্রতিদিন যা হয় আরকি। কিন্তু আজ কোনো ভাবেই ঘুম আসছে না। উঠে বসে জানালা দিয়ে বাহিরে দেখছি। আকাশ টা বেশ পরিষ্কার দেখাচ্ছে। সকালের পরিবেশ টা অনেক সুন্দর তা সকাল সকাল ঘুম থেকে না উঠলে বুঝাই যায় না। উঠে ব্যালকনিতে গিয়ে বসলাম। আজ অনেক দিন পর আকাশ দেখছি বসে বসে। মিহিমাদের ব্যালকনি খালি। হঠাৎ নিচে তাকাতেই দেখি মিহিমা বিল্ডিং এর নিচে গেট থেকে বের হচ্ছে। সঙ্গে একজন মেয়ে । এই সকাল সকাল কথায় যাচ্ছে? হুট করে কিছু না ভেবে আমিও বের হয়ে গেলাম আস্তে আস্তে।বাসার সবায় ঘুম,কেও যাতে টের না পাই বাসা থেকে বেরিয়ে গেলাম। নিচে নেমে দেখলাম দুজন অনেকটা সামনে চলে গেছে হাঁটতে হাঁটতে। আমিও তাদের পেছনে গেলাম। গলি থেকে বেরিয়ে সামনে একটা মাঠের মত আছে ওখানে সবাই হাটতে যায় বা ব্যায়াম করে। আমি দেখলাম কাল যে মেয়েটি কে দেখেছিলাম সেই মেয়েটি যিনি নার্স বলে পরিচয় দিয়েছিলেন তিনি মিহিমার সাথে। তারা দুজন এক সাথে সেই মাঠের দিকে যাচ্ছে। এরপর আমিও তাদের পিছনে হাঁটছিলাম। মিহিমা আর নার্স আপুটি কথা বলতে বলতে যাচ্ছে। হঠাৎ নার্স টি পেছনে ফিরতেই আমার দিকে চোখ পড়ে। তারপর নার্স আপুটি দাঁড়িয়ে যায় আর আমাকে বলে..
- আরে আপনি না কাল রাতে আমাকে ঠিকানা বলেছেন?
- হ্যা… আমি।
দেখলাম মিহিমা আসল। মিহিমা আমার দিকে তাকাল এবং একটা মুচকি হাসি দিল। তারপর মিহিমা বলল… - আরেহ আপনি এখানে? আপনিও কি হাঁটতে এসেছেন?
- না মানে হ্যা… হাঁটছিলাম।
মিহিমা আমাকে দেখে বুঝতে পেরেছিল কিছুটা। - আমি তো আগে জানতাম না আপনি এখানে আসেন! আপনি কি আজকেই প্রথম?
মিহিমা মুচকি হেসে হেসে আমাকে বলছিল.. সে বুঝে ফেলেছিল।তখন নার্স আপু টিও হাসছিলেন। আমার কেমন যেন লজ্জা লাগছিল। তখন নার্স আপুটি বলে উঠল - চলুন আপনিও আমাদের সাথে। একসাথেই হাঁটি আর কথাও হবে।
- না না আমি যায়।
আরে অসুবিধে নেই লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। আর মিহিমা তো আপনাকে চিনেই… আমিও জানবো। - আচ্ছা ঠিকাছে চলুন।
আমার কেমন যেন লাগছে যদিও মিহিমা আছে তবুও। তবে আস্তে আস্তে ভালোই লাগছিল। সকালের পরিবেশে এভাবে হাটা। নার্স আপু আমার কাছে কি করি, না করি এসব জিজ্ঞেস করলেন। - আচ্ছা আপনার নাম জানা হল না।
- হ্যা .. আমি অনিক। এবার এইচ এস সি দিয়েছি। আপাতত কিছু করছিনা।
- ওহ আচ্ছা.. তাহলে আমার ছোট্ট ভাইয়ের মতই, বাহ! খুব ভালো।
- ঝি আপনি আমাকে তুমি করেই বলতে পারেন। আমি আপনার ছোট্ট।
হাঁটতে হাঁটতে মিহিমা আমার দিকে তাকাল। আমারোও চোখ পড়ল মিহিমার দিকে। মিহিমা যখন আমার দিকে আড় চোখে এভাবে তাকাই তখন কেমন যেন লজ্জা লাগে আমার। কথা বলতে বলতে মাঠ টা পুরোটাই ঘুরা হয়ে গেলো। তারপর আমার কেমন যেন লাগছিল। দুটো মেয়ের সামনে এভাবে! - আচ্ছা আপনারা বসুন আমি আসি। বাসায় যেতে হবে।
- আচ্ছা ঠিকাছে যাও।
মিহিমার দিকে দেখছিলাম সে হঠাৎ বলে উঠলো - আজ কিছু ফেলে যাচ্ছেন না তো! ভালো করে দেখুন।
আমি বুঝতে পারিনি.. আমি চলে গেলাম সেখান থেকে কিন্তু একটু পর হাঁটতে হাঁটতে মনে পড়ল মিহিমা সেইদিনের কথা বুঝিয়েছিল। আমি তার বাসায় গিয়ে ঘড়ি ফেলে আসার কথা। আমি রাস্তায় হাঁটছি আর হাসছি। হঠাৎ মাথায় এলো এভাবে হাসলে মানুষ আমাকে পাগল ভাববে। তারপর বাসায় চলে এলাম। বাসায় ঢুকতেই মা… - কিরে অনিক তুই এত সকালে কথায় গিয়েছিলি? তুই তো এত সকালে উঠিস না! সব ঠিকাছে তো?
- না এমনি একটু বাইরে হাঁটছিলাম।
আচ্ছা ঠিকাছে। যা হাত মুখ ধুয়ে আয়,নাস্তা দিচ্ছি।
আমি রুমে চলে এলাম। সিগারেট ও শেষ হয়ে গেছে। টাকাও নেই আমার কাছে। মা এর কাছ থেকে টাকা নিয়ে এক প্যাকেট সিগারেট কিনেছিলাম তাও শেষ হয়েছে। ভাবছি এভাবে না থেকে কিছু একটা করা দরকার। মাথায় এলো টিউশানি করাবো। কয়েকদিন আগে মা এর এক পরিচিত মহিলা বাসায় এসেছিলেন। উনি মা কে বলেছিলেন উনার ছেলেকে পড়ানোর কথা । মা আমাকে বলেছিল।কিন্তু আমি করতে চাই নি। মা এর সাথে কথা বলতে হবে। মাথাটাও ধরে আছে। আমি আবার বাইরে বেরিয়ে গেলাম। জহির মামার টং এ গিয়ে বসেছি। সিগারেট নিয়ে রাস্তায় হাটছি হঠাৎ দেখলাম মিহিমা আর সেই আপু টি আসছে। আমি তাড়াতাড়ি সিগারেট টা ফেলে দিলাম। তারা আমার দিকে এগিয়ে আসলো। - অনিক তুমি এখানে, বাসায় যাও নি? কারোও জন্য ওয়েট করছো নাকি।
এই কথা বলেই তারা দুজন হাসছিল। - না না এমনি.. এইত বাসায় যাচ্ছিলাম।
এই বলে আমি যত তাড়াতাড়ি আসা যাই বাসায় চলে এলাম। সিগারেট টাও ঠিক ভাবে খেতে পারিনি। রুমে এসে শুয়ে আছি।কেমন যেন ঘুম পাচ্ছিল। হঠাৎ মনে হল আমার রুমে কেও এসেছে। আরেহ দেখলাম মিহিমা আমার রুমে। আমি তাকিয়ে।আছি মিহিমার দিকে। - এই অবেলায় শুয়ে আছেন কেন?
আমি এখনো হা করে তাকিয়ে আছি।তারপর উঠে বসলাম। মিহিমা আমার পাশে বসলো। তার চোখ দুটো কেমন যেন লাল হয়ে আছে.. মনে হচ্ছে এখনি কেঁদে ফেলবে। মিহিমা চুপ করে আছে কিছুই বলছে না। তারপর সে বলতে গিয়ে আবার থেমে গেল। তার চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল। কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। আমি চুপ করে তাকিয়ে আছি। - মিহিমা কাঁদছ কেন।কি হয়েছে, সব ঠিকাছে?
মিহিমা কিছু বলছে না…. সে উঠে দৌড়ে চলে যাওয়ার সময় টেবিলে খুব জোরে ধাক্কা লাগে। হঠাৎ চোখ খুলে উঠে বসি। মিহিমা কে খুজছিলাম। দুই টা বেজে গেলো । বসে আছি আর চারদিকে দেখছি। না কেও নেই, তাহলে আমি কি… স্বপ্ন দেখছিলাম!
অনিকের গল্প পর্ব ১ পড়ুন এখানে
অনিকের গল্প পর্ব ২ পড়ুন এখানে
অনিকের গল্প পর্ব ৩ পড়ুন এখানে
অনিকের গল্প পর্ব ৪ পড়ুন এখানে
অনিকের গল্প পর্ব ৫ পড়ুন এখানে
অনিকের গল্প পর্ব ৬ পড়ুন এখানে
অনিকের গল্প পর্ব ৭ পড়ুন এখানে
অনিকের গল্প পর্ব ৮ পড়ুন এখানে