
ট্যুরের কিছুদিন আগে স্কুলের বন্ধু ম্যাসেজ দিলো সে আমাদের সাথে আমিয়াখুম নাফাখুম যাবে।আমিও রাজি হয়ে গেলাম। তবে আগে ভাগেই বলে রাখসিলাম এই ট্যুর টা অনেক কষ্টকর হবে সবার জন্য স্পেশালি ওভারওয়েট ও নতুনদের জন্য। তারপরো বন্ধু নারাজ সে যাবেই। কেউক্রাডং যাওয়ার অভিজ্ঞতা আগে ছিল তাই এবারো যাবার সাহস করছে।
ট্যুরের শুরতে রেমাক্রি পোছানোর পর গাইড বলছিল মাইনুল এর ওজন অতিরিক্ত বেশি তার পক্ষে পুরা ট্যুর শেষ করা অসম্ভব। এর আগে সে নাকি কখনো এত ভারী শরীর নিয়ে কাউকে আমিয়াখুম যেতে দেখেনি। আমি বললাম দেখা জাক দাদা কি হয় ইচ্ছা থাকলে অসম্ভব বলে কিছু নেই।যেই ভাবা সেই কাজ। আস্তে আস্তে যাত্রা শুরু গ্রুপের বাকি ২২ জন যথেষ্ট স্ট্রং ছিল সবাই আগেভাগে চলে গেলো তবে মাইনুল একটু স্লো হবে এটা নরমাল একটা ব্যাপার তাকে প্রতিনিয়ত চিয়ার আপ করা থেকে শুরু করে আস্তে আস্তে রেস্ট করে করে সামনে আগাই খুব বেশি স্লো ছিলাম না যদিও তাই বেশ পিছনে পড়ে যেতে হয়নি।
রেমাক্রি থেকে নাফাখুম তারপর জিন্না পাড়া পর্যন্ত পথটা মোটামুটি আমিয়াখুম ও পদ্মঝিরির তুলনায় অনেকটা ইজি ছিল। তাই খুব একটা প্যারা খায় নাই সে।আসল কাহিনী হলো দেবতা পাহাড় নামা আর উঠার সময়। সত্যি বলতে আমিও একটু ভয়ে ছিলাম মাইনুল এর ব্যাপারে একটু উনিশ বিশ হলেই সোজা খাদে পড়ে গেলে আর কোন উপায় নাই বাচার নাই কোন মোবাইল নেটওয়ার্ক নাই কোন সেইফটি।তারপরো আল্লাহর নাম নিয়ে আস্তে আস্তে পুরাটা পথ তাকে নিয়ে এগুতে থাকলাম।দেবতা পাহাড় নামতে প্রায় ২.৩০ ঘন্টা আর উঠতে ২ ঘন্টা লেগে গেলো। মাইনুলের বডি ল্যাংগুয়েজ দেখে বুঝতেছিলাম তার কষ্ট হচ্ছিল অনেক। কিন্তু সেও জানে এখানে থেকে না ফিরা ছাড়া কোন উপায় নেই।প্রতিবার ই একটা প্রশ্ন তার “আর কতক্ষন লাগবে রুবা? পাহাড় আর কতক্ষন?” আমিও ১৫ মিনিট বলে বলে তাকে ২ ঘন্টা হাটাই নিলাম। অবশেষে জিন্না পাড়ায় সারা শরীর ব্যাথা নিয়ে কোন মতে পৌছালো।
পরের দিন পদ্মঝিরি দিয়ে আরো কঠিন পথ অপেক্ষা করছিল আমাদের জন্য। মনে মনে আমি ভয়ে ছিলাম পারবো নাকি এত লম্বা কঠিন রাস্তা তাকে নিয়ে পার হতে। তারপরো বলে গেছি ৩ টা পাহাড় বাইতে হবে জাস্ট তারপর ঝিরিপথ পারবি তুই প্যারা নাই। শেষ দিন পাহাড়ের পড় পাহাড় পাড়ি দিতে দিতে মাইনুলের কোমর ধরে জাচ্ছিলো শরীর পুরাটাই ছেড়ে দিচ্ছিল তার। একটু রেস্ট নিয়েই আবার উঠে পড়ি। এভাবে প্রায় ৮ টা ঘন্টা হাটতে হাটতে পদ্মঝিরি পৌছাই। গ্রুপের সবাই হাততালি দিয়ে তাকে আমন্ত্রণ করে। এমন কি তাকে দেখে হরিশচন্দ্র পাড়ার বাসিন্দারাও করতালি দিয়ে তাদের ক্রিস্টমাস এর প্রোগ্রামে বরন করে নেয়। স্মার্ট ওয়াচের হিসাবে পুরো ৪ দিনের এই ট্রিপে আপ ডাউন প্রায় ৫৫-৬০ কিমি পাহাড়ি পথ পাড়ি দেই আমরা। আমার মনে হয়না ১৪০ কেজি ওজন নিয়ে এত বড় বড় বিপদজনক পাহাড় এর আগে কেউ কখনো জয় করেছে।
আমার ছোট্ট ট্রাভেলিং এক্সপেরিয়েন্স থেকে আমি অনেক রকমের মানুষ এর সাথে মিশেছি। কিন্তু এইবারই প্রথম মাইনুল কে দেখে অবাক হলাম খুব। একটা বারের জন্য ও তার মুখে শুনি নাই যে সে পারবে না সে গিভ আপ করবে। প্রতিটা ব্রেক এ সে শুধু এটাই বলত “এতদূর এসে গেছি যখন পরের টাও পারব। তোদের কষ্ট দিচ্ছি খালি, আমার জন্য তোদের ট্যুরের টাইম শিডিউল পিছাই যাচ্ছে, সরি বন্ধু “কন কনে শীতে খালি গায়ে ট্র্যাকিং করতে হচ্ছিল তারপরো প্রচুর ঘামাচ্ছিল সে। গা থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছিল পানি দিতেই। মাইনুল কে দেখে আমি বুঝলাম মানুষের মনোবল আর আত্মবিশ্বাস এর জোর কতটা দূর নিয়ে যেতে পারে তাকে। শরীর ছেড়ে দিলেও কেবল মনের জোরে সে পুরো পথ টা পাড়ি দিয়েছে। সত্যি বলতে গেলে যারা আমিয়াখুম নাফাখুম পদ্মঝিরি দিয়ে জীবনে একবার হলেও গেছেন তারাই ভালো বলতে পারবেন ১৪০ কেজি ওজন নিয়ে এই পথ পাড়ি দেয়াটা কল্পনাই করা যায় না। পাড়ার লোকজন ও সেইম কথাই বলছিল এরকম উদাহরণ তাদের চোখে এই প্রথম। Proud of you my boy, আমার এ পর্যন্ত দেখে সেরা একজন ট্র্যাকার তুই।
লেখকঃ রুবায়েত মোঃ ইমরুল হাসান (IIUC)
মাঈনুল ইসলাম সাকিব (Kuet)
তথ্য ও সূত্রঃ Route To Wander Travel Group
[…] […]