অনিকের গল্প পর্ব ০৭- আফরিন আকতার স্নেহা

Aniker-golpo

আজ এস এস সি পরীক্ষার রেজাল্ট দেয়া হবে শুনলাম। আমার সেই সময় টার কথা মনে পরে গেলো। আমি ভালো রেজাল্ট করতে পারিনি বাবার আশানুরূপ। পড়ালেখার ধারের কাছেই আমি ছিলাম না। মোটামোটি একটা রেজাল্ট হল। বাসায় বড় খালার বাসা থেকে ২ প্যাকেট মিষ্টি এলো । হয়তো বড় খালার ছোট্ট ছেলে রাতুল এর রেজাল্ট পেয়ে গেছে। হঠাৎ মনে পড়ল মিহিমাও এবার এস এস সি দিয়েছে।সে কি রেজাল্ট করেছে এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে বাসার কলিং বেলের আওয়াজ শুনতে পেলাম। আমি বসে বসে উপন্যাস পড়ছিলাম। হঠাৎ খুব একটা মেয়ের গলা শুনতে পেলাম।গলা টা খুব চেনা মনে হচ্ছিলো। আমি বই রেখে রুমের বাইরে গিয়ে দেখলাম মিহিমা সাথে তাদের ঘরে যে মেয়েটি কাজ করে তাকে নিয়ে বাসায় মিষ্টি নিয়ে এলো। আমি মিহিমা কে দেখে হঠাৎ কেমন লজ্জা পেলাম। আমি আবার রুমের ভেতরে ঢুকে গেলাম। রুমের ভেতরে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে মিহিমা কে দেখছিলাম। আমার কেমন যেন খুবি লজ্জা লাগছিলো। সেদিন কি কান্ড টাই না করলাম তার বাসায় গিয়ে। তাই তার সামনে যেতেই এমন লাগছে। ভেতর থেকে মা আর মিহিমার কথা শুনছিলাম…
-মা কেমন এসেছে রেজাল্ট?

  • ঝি খালা জি পি এ ৫ পেয়েছি।
  • বাহ মাশাল্লাহ খুব ভালো হয়েছে। বাবা মা তো খুবি খুশি তাই না! তোমার মা কেমন আছেন?
  • ঝি মা ভালো আছেন। আপনার কথা বলেন।
    -তোমার মা কে বলবে বাসায় আসতে।
  • ঝি খালা, আসি খালি।
  • আচ্ছা ঠিকাছে। এসো কিন্তু বাসায়, হ্যা!
    মিহিমা যাওয়ার সময় আমি রুমের বাইরে বের হয়ে এলাম সাহস করে,যদিও খুব লজ্জা লাগছিলো। সে আমার দিকে দেখে মুচকি হেসে চলে গেলো। আমি না জানার মত ভাং করে মা কে আবার জিজ্ঞেস করলাম..
  • বাসায় এত মিষ্টি কিসের?
  • আজ এস এস সি পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে। তোর খালাতো ভাই রাতুল ও ভালো রেজাল্ট করেছে। তোর বড় খালা সেই মিষ্টি পাঠিয়েছেন।
    -ওহ আচ্ছা,হুম।
  • আর এখন যে মেয়েটি এসেছে মিহিমা,সেও মিষ্টি এনেছে। মেয়েটি খুবই ভালো, খুবই মায়াবী।
    আমি মনে মনে ভাবছিলাম মেয়েটি আসলেই মায়াবী। আমি আবার রুমে এসে বসলাম আর ভাবছিলাম বাহ মেয়েটি সত্যি অসাধারণ। সব দিক দিয়েই খুবি গুণী। বই পড়তে পড়তে সময় টাও পার হচ্ছিল। মা দুপুরের খাবার খেতে ডাকছে। আমার খুবি বদভ্যাস হয়েছে। কোনো বেলার খাবারই সময় মত খাওয়া হয় না।মা জেনেও প্রতিদিন খাওয়ার জন্য ডাকেন। মা ডাকছে এখনো..। উঠি উঠি করে সময় পার হয়ে যায়, কিন্তু আমার উঠা হয় না।বাহিরে কেমন বৈশাখী ঝড়ো হাওয়া বইছে।খুব ঘুম পাচ্ছিলো… এই ওয়েদার এ এই অবেলায় ঘুম আসা টাও অস্বাভাবিক কিছু না। ভাবছি খেতে যাবো। কিন্তু কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম। আমার ঘুম ভাঙল কিসের একটা শব্দে।চোখ খুলে দেখি সন্ধ্যা হয়ে আসছে। বাহিরে কেমন যেন বাতাস বইছে। আর সেই বাতাসে আমার রুমের টেবিলে রাখা কলম দানি টি পরে আছে মেঝেতে। এবার বুঝলাম এটার শব্দ হল। উঠে ঠিক করলাম সব।এই ওয়েদারে বাহিরে যেতে ইচ্ছে করছিলো হঠাৎ…বাতাস টা খুবি ভালোই লাগছে। বাসা থেকে বেরিয়ে গেলাম। সন্ধ্যা ছয় টা,চারপাশ তেমন মানুষ জন নেই। মোটামোটি রাস্তায় আমি একাই বলতে গেলে। একা একা সিগারেট ধরিয়ে হাঁটছি। বেশ ভালোই লাগছে হাঁটতে।ধুলো উড়ছে একটু পর পর। আচ্ছা মিহিমা থাকলে পাশে ভালোই হত। এই ঝড়ো হাওয়াই তার চুল উড়ত, আর সে হাত দিয়ে চুল সরিয়ে নিত.. হয়তো । খোলা চুল তাকে আরো সুন্দর দেখাই। সে কি এখন ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে বাতাস কি উপভোগ করছে! এসব হাবি যাবি ভাবতে ভাবতে বাসার দিকে চলে এলাম। কিন্তু বাসায় যেতে ইচ্ছে করছিল না। বাসা ফেলে আরেকটু সামনে মিহিমার বিল্ডিং। হেটে তার বাসার সামনে বিপরীত দিকে দাঁড়িয়ে আছি আর তার ব্যালকনির দিকে তাকিয়ে আছি। কিন্তু ব্যালকনিতে কেউ নেই। আমি কল্পনা করছিলাম,মিহিমা দাঁড়িয়ে আছে খোলা চুলে,আর মুচকি হাসছে। হঠাৎ কি যেন কানে এলো…
    -এই যে ভাই শুনছেন! ভাইয়া..!
    আমি ফিরে তাকিয়ে দেখি একটা মেয়ে দেখতে বয়সে আমার থেকে মোটামোটি বয়সে বড় আমাকে একটু দূরে থেকে ডাকছে। সামনে আগানোর আগেই মেয়েটি কাছে এলো।
  • ভাইয়া এই গলি টা কি ১৪ নম্বর গলি? আমি আসলে ঢাকাই নতুন এসেছি।
  • ঝি হ্যা… আপু এটাই ১৪ নম্বর গলি ।
  • অনেক ধন্যবাদ। আচ্ছা এই বিল্ডিং টা কোনটা? আমি একজন নার্স কুমিল্লা থেকে ট্রান্সফার হয়ে ইন্টার্নশিপে এসেছি।এখানে এই রোগীটার বাসায় এসেছি।
    আমি কাগজে দেখলাম মিহিমাদের বাসার নাম দেয়া আছে। তারপর আমি উনাকে দেখিয়ে দিলাম। এরপর উনাকে জিজ্ঞেস করতে গিয়ে আবার করলাম না।উনি আবার কি ভাববে,এই ভেবে। আমি বাসায় চলে এলাম,রাত তখন সাড়ে আট টা কি নয়টা বাজে। এসে রুমে গিয়ে দেখি মা খাবার রুমে রেখে দিয়েছে। হাত মুখ ধুয়ে এসে বসে আছি, খেতে ইচ্ছে করছিলো না।আবার উপন্যাস পড়ছিলাম। রাতের বাতাস টা আরো বাড়ছে। হঠাৎ রুমের সব কিছু কেমন পরে যাচ্ছে বাতাসে। তবে ব্যালকনির দরজা বন্ধ ও করতে ইচ্ছে করছে না,আবার এই সব জিনিস পত্র গুছাতে বার বার বিরক্ত লাগছে। উঠে বাধতে গিয়ে দেখি মিহিমা তাদের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে,ব্যালকনির সেই নীল রঙের আলো তে তাকে বেশ সুন্দর লাগছে। আমি দরজা না বেধে দাঁড়িয়ে গেলাম ব্যালকনিতে,তাকে দেখছি। সত্যি অনেক অনেক ভালো লাগছে বাতাসে তার এলোমেলো চুল গুলো উড়ছে। বাহিরে প্রচন্ড ঠাণ্ডা হাওয়া। ইচ্ছে করছিলো মিহিমার সাথে হাঁটতে।দেখছি মিহিমা কে,চুপচাপ দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
    হঠাৎ আমার সেই মেয়েটির কথা মনে পরল। তিনি বলছিলেন তিনি তার রোগীর বাসায় এসেছেন। কিন্তু উনার রোগী কে? মিহিমাদের বাসায় কে এমন আছেন? কেমন যেন লাগছে হঠাৎ। হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আসছে।

অনিকের গল্প পর্ব ১ পড়ুন এখানে

অনিকের গল্প পর্ব ২ পড়ুন এখানে

অনিকের গল্প পর্ব ৩ পড়ুন এখানে

অনিকের গল্প পর্ব ৪ পড়ুন এখানে

অনিকের গল্প পর্ব ৫ পড়ুন এখানে

অনিকের গল্প পর্ব ৬ পড়ুন এখানে

অনিকের গল্প পর্ব ৭ পড়ুন এখানে

অনিকের গল্প পর্ব ৮ পড়ুন এখানে

মন্তব্য করুন