অনিকের গল্প পর্ব ৬ঃ- আফরিন আকতার স্নেহা

Aniker-golpo

আজ মা ঘুম থেকে খুব তাড়াতাড়ি ডেকে দিলো। ঘুমাতেই দিলো না।

– অনিক এই অনিক উঠ তাড়াতাড়ি, উঠে পর। আর কত ঘুমাবি!

– হ্যা উঠছি, তুমি যাও।

আবার ঘুমিয়ে গেলাম।  মা একটু পর আবার এসে বলল

– কিরে অনিক কখন থেকে ডাকছি!  শুন তোর বাবা একটু বাইরে গেছেন,আমি একটু তোর খালার বাসাই যাবো।

– আচ্ছা ঠিকাছে, যাও।

– শুন আমি নাস্তা ঠিক ঠাক করে রেখে গেলাম টেবিলে খেয়ে নিস।

– হুম, আচ্ছা।

মা চলে গেলো।  আমি ভেবেছি আরো ঘুমাব,কিন্তু  ঘুম আর আসছে না। শুয়ে শুয়ে হাবি যাবি ভাবছি। যাক আজ বাসা টা খালি।  অনেকদিন পর শান্তিতে একা বাসায় বসে সিগারেট খাবো। সিগারেট ধরিয়ে ব্যালকনিতে আসলাম। আর চোখ গেল মিহিমার ব্যালকনির দিকে।  মিহিমার ছোট্ট ভাই ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে খেলছে। হঠাৎ  মিহিমা আসলো তার ছোট্ট ভাই কে নিয়ে ভেতরে চলে গেল।  আমি আবার অন্যদিকে তাকিয়ে ভাবছি। হঠাৎ দেখলাম মিহিমা এসে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়েছে।  চুল গুলো খোলা হাল্কা মৃদু হাওয়াই উরছে। মিহিমা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে। মেয়েদের মুচকি হাসলে অনেক মায়াবী লাগে। আমিও নিজের অজান্তেই হাসছিলাম। সিগারেট টা ফেলে দিলাম। ভাবছি মিহিমা কি ভাববে!  তার সামনে এভাবে সিগারেট নিয়ে….। মিহিমা তাকিয়ে আছে,আর আমিও…  কেমন যেন লাগছে খুব অস্থির।  সেদিন মিহিমার কথা গুলো মনে পরছে খুব। তাকে দেখলে মনে হয় খুবি চুপচাপ শান্ত স্বভাবের। কিন্তু মিহিমা তার বিপরীত।দেখতে সে যতই শান্তশিষ্ট হোক না কেন কথাবার্তা তার ঠিক উলটো। তবে ভালোই লাগে তার সেই অভিমানী কথাবার্তা।  আমি তাকিয়ে আছি আর ভাবছি তাকে নিয়ে এসব। খুব ইচ্ছে করছে তার সাথে কথা বলতে, খুব ইচ্ছে করছে তার সাথে হাটতে। আচ্ছা মিহিমা ও কি আমাকে নিয়ে ভাবে! কি বা ভাববে! যতবারি দেখেছে ভালো কিছু দেখে নি,সবসময় হাতে সিগারেট থাকে,পাগলের মত থাকি। মিহিমা চলে গেলো।  আমারো আর ভালো লাগছে না। আমিও  ব্যালকনি থেকে চলে এলাম।  ইচ্ছে করছে আরেকটা সিগারেট খাই। মা টেবিলে সব ঠিক ঠাক করে দিয়ে গেলো।  হঠাৎ দেখলাম বাবা আসছে ঘরে ঢুকছেন।  বাবার কাছে সবসময় নিজের জন্য এক্সট্রা চাবি থাকে। বাবা আমাকে দেখে কিছু বললেন না সোজা নিজের রুমে চলে গেলেন। আমি আমার রুমে এসে  কাপড় পরে নিলাম। বের হব ঠিক সেই মুহূর্তেই বাবা ডাক দিলেন পেছন থেকে..

– অনিক, তোর মা কখন ফিরবে বলেছে?

– বিকেল হবে বলেছিল বোধ হয়!

– কেন তুই কি শুনিস নি?

– হ্যা ভুলে গিয়েছি। মা কে ফোন করে জেনে নিলে হয়।

-হুম।

ভেবেছি কিছু বলবে..  কিন্তু কিছুই বলে নি। আমি বের  হয়ে গেলাম মা টাকা রেখে গিয়েছিল কিছু তা নিয়ে। মামার টং এর দিকে যাচ্ছিলাম।  হাটতে হাটতে মিহিমার বাসার নিচে আস্তেই  উপরে তাকিয়ে দেখলাম মিহিমা আছে কিনা। না মিহিমা নেই,কিন্তু তাদের বাসার দারওয়ান টার সাথে চোখাচোখি হয়ে গেল। এমন ভাবে তাকিয়ে থাকে মনে হয় যেন কি করে ফেলেছি। এরপর আমি হেটে মামার টং এ বসলাম।

– মামা একটা চা দাও।

– ভালো আছেন বাবা?

– হুম ভালো.. তো আপনার দিন কাল কেমন চলছে?

– আছি বাবা ভালোই আল্লাহ ই রাখসে।

চা চলে আসছে,চা খেতে খেতে মিহিমার বাসার দিকে তাকিয়ে আছি। মিহিমা নেই কিন্তু তার ছোট্ট ভাইটি ছিল।  আমি চা খেয়ে আবার সিগারেট নিয়ে উঠে গেলাম।  হঠাৎ দেখলাম মিহিমার মামা।আমি চিনলাম টং মামার জন্য মিহিমার মামাকে চিনতে পারলাম। একজন মানুষ কে নিয়ে বাসা থেকে বের হলেন। মানুষটির হাতে একটা ডক্টর দের মত ব্যাগ ছিল !কিছুটা চিন্তা দেখা গেলো মামার মুখে,কেমন যেন ফেকাসে দেখাচ্ছিল মিহিমার মামাকে। কথা শেষ করে মামা ভেতরে ঢুকে গেলেন। মানুষ টি যখন চলে যাচ্ছিলেন তখন মনে হল গিয়ে জিজ্ঞেস করি। কিন্তু আবার কি মনে করে আর এগুই নি। মিহিমাদের ব্যালকনির দিকে তাকিয়ে দেখলাম একটু, কেও নেই।  আমি বাসায় চলে এলাম।  মাও চলে এসেছেন। খালারা হয়ত অনেক কিছু পাঠিয়েছে।  কিন্তু আমি সোজা রুমে চলে গেলাম। রুমে বসে মিহিমার কথা ভাবছিলাম ।  মিহিমা কে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে আজ জানিনা কেন। আমি কিছুক্ষণ পর এমন এক কাজ করতে যাচ্ছিলাম যা একটা পাগলামি।  কিছু না ভেবেই আমি হুট করে বাসা থেকে বের হয়ে পরলাম।  হাটতে হাটতে মিহিমা দের বাসার সামনে।  মনে অনেক কিছুই চলছে,এক কথা নিজের সাথে যুদ্ধ করছি করব কি করব না। এবার হুট করে মিহিমাদের বাসায় ঢুকে পরলাম।  সিরি দিয়ে উঠছি আর ভাবছি, সারা মুখ ঘামছে। এসে উঠলাম চার তোলায়। বাইরে থেকে যেভাবে দেখা যাই ভেতরে তেমন বুঝা যাচ্ছে না কোনটা মিহিমাদের বাসা? চোখ বন্ধ করে সিরির পাশের ঠিক যে ফ্লাট  টা টাতে বেল চাপলাম। সারা শরীর ঘামছে,হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে। কি করছি নিজেই বুঝে উঠতে পারলাম না। এরপর দরজা খোলার শব্দ হলে আমি অস্থির হয়ে উঠি। কি বলব খুললে?  কাকে খুঁজবো? কেউ তো চিনে না আমাকে এখানে মিহিমা ছাড়া।  দরজা খুলেছে এবার মিহিমার বাবা হয়ত জিজ্ঞেস করবে আমি কে! কিন্তু দরজা খুলে ভেতরে দারিয়ে মাথা বের করে আছে এক রমণী। সে আর কেউ নয়, মিহিমা।  আমিও হা করে দাঁড়িয়ে আছি। মিহিমা এবার পুরোদরজা খুলে দাঁড়ালো।  মিহিমা ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে অবাক হয়ে। খুব অবাক হয়েছে মিহিমা। আমিও বোকার মত তাকিয়ে আছি মিহিমার দিকে। মিহিনা এবার বলে উঠলো..

-আপনি…  আপনি এখানে?

আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি, মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। শুধু সারা মুখ কেমন শুকিয়ে গেছে। কি বলব বুঝতে পারছি না কি ভাববে মিহিমা এখন! আবার হঠাৎ কানে আসলো…

– এই যে মি. বোবা!  কি হল, আপনি ঠিকাছেন তো?  সব ঠিকাছে তো? কিছু বলবেন?

– আমি না মানে ইয়ে..  আমি একটা কাজে এসেছি তো ভাবলাম…।

এই বলে আমি কিছু না ভেবেই দৌরে সিরি দিয়ে নিচে নেমে গেলাম। কি করছি কিছুই জানিনা। এরপর বাসার গেট দিয়ে বের হয়ে সোজা হাটা শুরু করলাম।  বুক টা কেমন ধপ ধপ করছিল। রাস্তাই হাটতে হাটতে একটু শান্ত হল মন।  যাক কি করছিলাম আমি! কেনই বা মিহিমার বাসাই হুট করে চলে গেলাম এসব হাবি যাবি ভাবছি আর মনে মনে হাসছি। সন্ধ্যে হয়ে এসেছে,বাসায়য় যাওয়া দরকার।এরপর আবার বাসার দিকে হাটা শুরু করলাম। হঠাৎ বাসার দারওয়ান আমাকে দেখে উঠে আমার কাছে এসে বলল…

– স্যার…  এটা কি আপনার?

আমি খুবি অবাক হলাম… এটা তো আমারি ঘড়ি।

– হ্যা আমার। আপনি কোথায় পেলেন?

– স্যার আমি পাই নি…. ওই যে ওই ওইখানের এক আপা দিয়া গেসে।

আমার হঠাৎ  মনে পড়ল আমি তাড়াহুড়া করে মিহিমাদের বাসা থেকে নামছিলাম তখন কি!

অনিকের গল্প পর্ব ১ পড়ুন এখানে

অনিকের গল্প পর্ব ২ পড়ুন এখানে

অনিকের গল্প পর্ব ৩ পড়ুন এখানে

অনিকের গল্প পর্ব ৪ পড়ুন এখানে

অনিকের গল্প পর্ব ৫ পড়ুন এখানে

অনিকের গল্প পর্ব ৬ পড়ুন এখানে

অনিকের গল্প পর্ব ৭ পড়ুন এখানে

অনিকের গল্প পর্ব ৮ পড়ুন এখানে

মন্তব্য করুন