অনিকের পর্ব ০৫ঃ- আফরিন আকতার স্নেহা

Aniker-golpo

আজ আকাশ টা বেশ পরিষ্কার। রোদ টা বেশ কড়া, কিন্তু ভালোইই লাগছে। শুক্রবার টা কেমন যেন চারদিক নিস্তব্ধ থাকে। সপ্তাহের ছুটির দিনে সবাই ঘুরতে যাচ্ছে। আমি একা রাস্তার পাশে হাটতে হাটতে মানুষের ঘুরা ঘুরি দেখছি। আজ কেমন যেন বিষণ্ণ লাগছে। হাটতে হাটতে দেখছি মানুষের আনন্দ। মিহিমা কে ভাবছিলাম রমনাপার্ক এ বসে। পার্ক টা অনেক বিশাল, সুন্দর। সবাই কে দেখছি আর ভাবছি। হঠাৎ দেখলাম নীল শাড়ি পরা একটি ললনা আমার দিকে এগিয়ে আসছে। মনে হচ্ছে ভুল,কিন্তু মেয়েটি যত কাছে এগিয়ে আসছে তত অবাক হচ্ছি। উঠে দাঁড়ালাম, আর দেখছি আমার দিকেই আসছে নীল শাড়ী পরা সেই ললনা। এক পর্যায় আমার সামনে এসে দাঁড়াল। আমি আবারো কি ভ্রমে শিকার ! নাহ আমি আজ এই ভ্রম কে সুযোগ দিবো না,তাই আমি মনের ভ্রম ভেবে পেছনে ফিরে গেলাম। কিন্তু মনে হল আমার ভ্রম আমার পিছু ছাড়ল না। পেছন থেকে কেও একজন..

উহুম!… ভালো আছেন?
আমি ভাবলাম এখন কি আমি শব্দও শুনতে পাই! পেছন থেকে আবার…

আপনাকে বলছি… আমি ভূত নই।
শুনে আমার কেমন যেন বুকের ভেতর চিন চিন করে উঠল। এরপর আমি আবার ফিরে তাকিয়ে দেখলাম, মেয়েটি হাসছে। আমি বললাম…

মিহিমা… সত্যি? তুমি?…. এখানে?
আমি কি বলব বুঝতে পারছিলাম না। পরিবেশ টা কেমন থমথমে। থেমে গেছে সব,সাথে আমার হৃদস্পন্দন। আমি হা করে তাকিয়ে আছি। আজ আর ভ্রম নয়,সত্যি সে আমার সামনে। আজ ইচ্ছে করছে হারিয়ে যাই। সব কেমন নিমিষেই পালটে গেলো। মিহিমার দিকে আমি এখনো তাকিয়ে আছি। মিহিমা হয়ত কত কিছু বলে ফেলেছে,কিন্তু শুধু কানে আসছে। আমি শুধুই দেখেই রইলাম। মিহিমা হঠাৎ….

আজিব আপনি কথা বলছেন না কেন? আপনি কি শুনছেন না? আচ্ছা আপনি কি ভূত দেখেছেন?
এবার আমার হুস ফিরল। আমি বললাম আবার মিহিমা.. তুমি এখানে?

হ্যা আমি এখানে, আপনি বড়ই অদ্ভুত মানুষ। কখন থেকে বলে যাচ্ছি । আপনি তো কিছুই বলছেন না।

ওহ হ্যা কি বলছিলে? ওহ এটা আমার একটা রোগ, ভ্রম যখন সত্যি হয়ে যাই তখন এই রোগ হয়।

আচ্ছা সত্যি তো বড় অদ্ভুত রোগ।
আমি আবার অবাক হয়ে তার দিকে তাকালাম আর ভাবছিলাম, বড় অদ্ভুত ব্যাপার। মেয়েটি সাথে আমার কোনো কথা হয় নি, এভাবে দেখাও হয় নি। কিন্তু তার কথা শুনে মনে আমি তার অনেক আপন কেও। মিহিমা এমন ভাবে কথা বলছিল মনে হচ্ছিলো সে আমাকে খুব ভালো করেই চেনে। মিহিমা বলে উঠল..

আচ্ছা আপনার আর কি কি রোগ আছে শুনি! আচ্ছা আমরা কি বসতে পারি?
বলতে না বলতেই সে বসে পরল। আমি দাঁড়িয়ে আছি এখনো। মিহিমা আবার বলল

এই যে শুনুন আপনি কি দাঁড়িয়ে থাকবেন।
আমি বসলাম,কেমন যেন লাগছিল। চুপ করে রইলাম কিছুই বলি নি। এরপর মিহিমা কথা বলছিল

আপনি কি খুব বেশি অবাক হয়েছেন?

হুম! তুমি এখানে কিভাবে?

আমিও সপ্তাহের ছুটির দিনটা তে ঘুরতে আসি। আমার খুবি ভালো লাগে এখানে। আর সবাইকে দেখতে ভালো লাগে।

হ্যা সুন্দর! কিন্তু তুমি কি একা এসেছ? আর কেও আসে নি?

না, আর কেও আসে নি। আমি এখানে একাই আসি। একাই বসে থাকি এখানে এসে।
ওহ আচ্ছা। আস্তে দেই তোমাকে একা? কেও কিছু বলে না?

না কেও কিছু বলে না। কেনোই বা বলবে!

হুম! ভালো.. কিন্তু তোমার ভয় করে না?

না একদমি না। আমি কাওকে ভয় পাই না। হিহিহি!
মিহিমা হেসে উঠল। আমি তার হাসি দেখছিলাম। পরি আজ হাসছে আমার পাশে বসে। আজ মনে হল আমি পরির কোনো রাজ্যে বসে পরির সাথে কথা বলছি। মিহিমার সেই হাসি ইচ্ছে করছিল শুধুই তাকিয়ে থাকি। সে আবার বলে উঠল..

আপনি এখানে কেন বললেন না? আপনিও কি আমার মত? আপনি সবসময় আমার বাসার নিচেই দাঁড়িয়ে থাকেন,হাতে সিগারেট নিয়ে। খুব ভালোই সিগারেট খান আপনি।
আমি এবার একটু লজ্জা পেলাম। তারপর কিছু বলার আগেই দেখি মিহিমা আবার হাসছে….

নাহ….! আমি আজ প্রথম এসেছি। আমার কখনো এই দিক টা আসা হয় নি। জানিনা আজ হঠাৎ কেনো এসেছি।

হয়ত আমার সাথে দেখা হওয়ার ছিল… হিহিহি!
আমি চুপ করে আবার বসে রইলাম আর মিহিমা কে অন্যভাবে দেখার চেষ্টা করছিলাম। সামনা সামনি দেখতে কেমন লজ্জা করছিল।

আচ্ছা আপনি কি সারাদিন এভাবে চুপ করে থাকেন? জানেন আমি গান গাইতে পারি।

বাহ… সত্যি! তাহলে তুমি গান গাইতে পারো। আমি খুব ভালো স্রোতা।
আমার জড়তা ধিরে ধিরে কমতে লাগলো। মিহিমা গান শুরু করলো রবীন্দ্রসংগীত। চারপাশ কেমন যেন হয়ে গেলো। আজ আরেকটি জিনিস যোগ হল। মেয়েটি সত্যি রহস্যময় এক পরি। গাইতে গাইতে হঠাৎ মিহিমা চুপ হয়ে গেলো। আমি বললাম…

চুপ হয়ে গেলে কেন ? বেশ ভালোই তো লাগছিল। খুব সুন্দর গলা তোমার। তুমি এত মিষ্টি করে গায়তে পারো?

নাহ এমনি। আর গাইতে ইচ্ছে করছে না। আপনি গাইতে পারেন না?

না আমি পারি না। ওসব গান টান আমার দ্বারা সম্ভব না।
দুপুর হয়ে এলো…. পার্কে কেও আসছে কেও যাচ্ছে। মিহিমা আর আমি চুপ চাপ বসে দেখছি। হঠাৎ মিহিমা কেমন চুপ হয়ে গেলো। আমি দেখলাম।তার চোখ কেমন ঝলঝল করছে। মনে হল সে এখনি কেঁদে ফেলবে। হঠাৎ সে জিজ্ঞেস করলো

আচ্ছা আপনি আমার নাম জানলেন কিভাবে? আপনি তো শুধুই
আমাকে দাঁড়িয়ে দেখতেন বাসার নিচ থেকে।

হ্যা! কিন্তু তোমার নাম জানলাম মায়ের কাছ থেকে। তুমি এসেছিলে বাসাই।

ওহ হ্যা… ভুলেই গিয়েছি। আচ্ছা আপনি আমার বাসার
নিচে কেন দাঁড়িয়ে থাকতেন?

জানিনা কেন! এমনি..

এমনি তো কেও কিছু করে না।

আমি করি।

হিহিহি!
মিহিমা আবার হাসছিল। ভালোই লাগছে দেখতে।

জান মিহিমা তোমাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে। নীল পরির মত।
মিহিমা মুচকি হাসল। কথাটা অনেক কষ্টে বললাম, লজ্জা লাগছিল বলব কি বলব না।

শাড়ী আমার খুব প্রিয়। আমি এখানে সবসময় শাড়ী পরেই আসি।

ওহ খুব ভালো, শাড়ী তে মেয়েদের হয়ত অনেক বেশি মানাই।

আজ সিগারেট খাবেন না? আপনি তো সিগারেট খান…
আমি একটু অবাক হয়ে তাকালাম।

নাহ এখন খাবো না। এখন ইচ্ছে করছে না।

কেন আমি আছি বলে? অসুবিধে নেই খেতে পারেন,আমি কিছুই বলব না।

না না আমি,খাবো না এখন।
সত্যি বলতে আমার খুব ইচ্ছে করছিল সিগারেট খেতে। কিন্তু এভাবে মিহিমার সামনে সিগারেট খেতে পারবো না।
দুপুর টাও গরিয়ে যাচ্ছে। সময় যেন অনুকূলে… ভাবছিলাম সময় টা যেন শেষ না হয়।

আচ্ছা তোমার খিদে পাই নি? বাসাই যাবে না?

নাহ খিদে নেই আমার। আপনার?

নাহ আমারও পাই নি।
হঠাৎ মিহিমা কেমন চুপ হয়ে গেলো। কেমন যেন দেখাচ্ছিল তাকে। সে কেমন যেন করছিল।

মিহিমা.. তোমার কি খারাপ লাগছে? কি হয়েছে?

নাহ আমি ঠিকাছি। কিছু হয় নি বাহিরে খুব গরম তাই।
অনেক্ষণ হয়ে গেলো। মিহিমা হঠাৎ উঠে দাঁড়াল। তাকে কেমন অস্থির দেখাচ্ছিল। কেমন যেন তার চেহারা ফেকাসে হয়ে গেল

কি হল? তুমি ঠিকাছ তো?

হুম। বাসাই যাচ্ছি, দেরি হয়ে যাচ্ছে।
বলতে না বলতে কেমন তাড়াহুড়া করে চলে গেলো মিহিমা। তাকে কিছুই বলতে পারি নি। খুব ইচ্ছে করছিলো বলতে দাড়াও! কিন্তু পারি নি। আমি আবার একা বসে রইলাম বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হল কিন্তু কেন যেন উঠতে ইচ্ছে করছে না। সময় টা কখন শেষ হয়ে গেলো টের ই পাই নি। মিহিমার সাথে সব কথা গুলো আবার ভাসছে। তার হাসি, কথা যেন এখনো কানে বাজছে।

অনিকের গল্প পর্ব ১ পড়ুন এখানে

অনিকের গল্প পর্ব ২ পড়ুন এখানে

অনিকের গল্প পর্ব ৩ পড়ুন এখানে

অনিকের গল্প পর্ব ৪ পড়ুন এখানে

অনিকের গল্প পর্ব ৫ পড়ুন এখানে

মন্তব্য করুন