
৪-০ গোলে ম্যান ইউনাইটেডকে হারিয়ে ১ অক্টোবরের পর প্রথমবার লিগশীর্ষে লিভারপুল। লিভারপুলের গত ম্যাচে গোল না করায় অনেকটাই হতাশ হয়েছিল সালাহ ভক্তরা। তবে ম্যান ইউনাইটেড এর বিপরীতে ৪টি গোলের ২টি গোলই করেছেন সালাহ। এতে ভক্তরা ফেলেছে স্বস্তির নিঃশ্বাস। বাকি ২টি গোল করেছেন লুইস ডিয়াস ও সাদিও মানে।
ম্যান ইউনাইটেডের সাবেক মিডফিল্ডার পল স্কোলস বলেন, তিনি ইউনাইটেডকে নিয়ে কিছুই বলবেন না, বরং ইয়ুর্গেন ক্লপের কতটা চোখধাঁধানো ফুটবল খেলেছে তা নিয়ে বলতেই ভালো লাগবে তাঁর।
লিভারপুল কি ভাল খেলেছে নাকি ম্যান ইউনাইটেড ভাল খেলেনি তা কয়েকটা সংখ্যাই বোঝাতে পারে। ৪৫ মিনিটে লিভারপুলের পোস্টে ইউনাইটেড কোনো শট তো নিতেই পারেনি, লিভারপুল বক্সেই বলে স্পর্শ করেছে দুবার। এর প্রথমটি ৩৪ মিনিটে, কর্নারে ম্যাগুয়ারের হেড জমা পড়ে লিভারপুল ডিফেন্ডারের কাছে, বিরতির কিছুক্ষণ আগে দ্বিতীয়টি ছিল ভেসে আসা পাসে রাশফোর্ডের পা ছুঁয়ে বল লিভারপুল গোলকিপার আলিসনের হাতে জমা পড়া।
লিভারপুল শট নিয়েছে ৯টি, যার ৩টি পোস্টে, দুটি ফিরিয়েছে ইউনাইটেডের রক্ষণ। ইউনাইটেডের ১৪৬ পাসের বিপরীতে ৩০০টি পাস বেশি দিয়েছে। প্রথম চার মিনিটে অ্যানফিল্ডে কলজে জিবের ডগায় এনে মুহূর্ত উপহার দিয়ে দুবার আলিসনের কাছ থেকে বল কেড়ে নেওয়ার খুব কাছে চলে গিয়েছিলেন ব্রুনো ফার্নান্দেজ, দুবারই শেষ পর্যন্ত অবশ্য জয় আলিসনেরই। এর বাইরে লিভারপুলকে, আলিসনকে কোনো পরীক্ষাই দিতে হলো না!
আরো পড়ুন অনিকের গল্প পর্ব ০১
আর কাজের কাজ হয়ে গোল দুটি তো আছেই! ৫ মিনিটে প্রথমটি দারুণ, ১৭ মিনিট পর দ্বিতীয়টি চোখধাঁধানো। ম্যাগুয়ার-দালোতদের পজিশনিংয়ের ভুলে লিভারপুলের সালাহ ও আলেক্সান্ডার-আরনল্ডের সামনে ‘বিস্তীর্ণ প্রান্তর’ খুলে যায়। মানের দারুণ থ্রু ধরে ডানদিক থেকে সালাহর ক্রসে দিয়াজের পা ছোঁয়ানোই দরকার ছিল, কলম্বিয়ান উইঙ্গারের এটুকুতে ভুল হয়নি।
এই গোল যদি অ্যানফিল্ডে স্বস্তি আনে, ২২ মিনিটে সালাহর গোলটি মন ভরিয়েছে! ইউনাইটেড বক্সের সামনে এক স্পর্শের ফুটবলের দারুণ প্রদর্শনীর পর মানের অসাধারণ লব যখন খুঁজে নেয় সালাহকে, সামনে শুধু ইউনাইটেড গোলকিপার দাভিদ দে হেয়া। পরিণতি? আর কী, গোল! পেপ গার্দিওলার ২০১১ সালের বার্সেলোনাও এ গোলে উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দেবে!
ম্যাচে স্ট্রাইকার হিসেবে খেলেছিলেন সাদিও মানে, যেভাবে নিচে নেমে বারবার সালাহ-দিয়াজকে বলের যোগান দিচ্ছিলেন, খেলা দেখে মনে হচ্ছিল হয়তো মানে নন, খেলছেন মানেরই সতীর্থ ফিরমিনো! এভাবেই নিচে নেমে এসে দুই উইঙ্গারকে গোল করার সুযোগ করিয়ে দেওয়াটা এতদিন ফিরমিনোর ট্রেডমার্ক ছিল। এখন মানেরও হয়ে গেল!
ম্যাচের ৬৮ মিনিটে মাঠের বাঁ প্রান্ত থেকে লুইস দিয়াজ আর লেফটব্যাক অ্যান্ডি রবার্টসনের দুর্দান্ত রসায়নের ফল হিসেবে ডিবক্সে ওঁত পেতে থাকা মানের কাছে বল চলে আসে। বাঁ পায়ের দুর্দান্ত প্লেসিংয়ে স্কোরলাইন ৩-০ করে ফেলেন সেই সেনেগালিজ উইঙ্গার। ততক্ষণে ইউনাইটেডের মনোবল একদম ভেঙে চুরমার!
৮৫ মিনিটে সালাহর দ্বিতীয় গোলেও যার ছাপ দেখা গেল। মাঝমাঠ থেকে বল যোগাড় করে একরকম একাই আধা মাঠ দৌড়ে এসে সালাহকে বলের যোগান দিলেন দিয়াজের বিকল্প হিসেবে মাঠে নামা দিওগো জোতা। সেখান থেকে ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় ও দলের চতুর্থ গোল করে ফেলেন সালাহ। যে সালাহর ফর্ম নিয়ে এই ম্যাচের আগেও চিন্তার ভাঁজ পড়েছিল সমর্থকদের কপালে, ইউনাইটেডের ভঙ্গুর রক্ষণভাগ পেয়ে সে চিন্তা আর বাড়াতেই দেননি এই মিসরীয় উইঙ্গার।
ম্যাচের একদম শেষদিকে গোলের আরেকটা সুযোগ পেয়েছিলেন। গোল করতে পারলে হয়তো প্রথম লিভারপুল খেলোয়াড় হিসেবে ইউনাইটেডের বিপক্ষে মৌসুমের দুই লিগ ম্যাচেই হ্যাটট্রিক করার অনন্য কীর্তি গড়া হয়ে যেত সালাহর। কিন্তু সেটা হয়নি। ৪-০ স্কোরলাইনেই শেষ হয় ম্যাচ। লিগে ইউনাইটেডের বিপক্ষে দুই ম্যাচে লিভারপুল ৯ গোল করল। এমন রেকর্ড আর কখনও করতে পারেনি দলটা, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইউনাইটেডের বিপক্ষে।