
আজ মন টা কেমন যেন উড়ু উড়ু হয়ে আছে। প্রায় অনেকদিন সিগারেট টাও খাওয়া হয় নি। মনে হচ্ছে কি যেন থেমে আছে। রাস্তায় হাটতে ইচ্ছে করছে খুব। ব্যথাটাও আছে কিছুটা। হাসপাতালের সেই দম বন্ধ করা কেবিন টা থেকে চলে এলাম, পরিশেষে আমাকে ডিসচার্জ করা হল। ইনজেকশনের সুই এর ব্যথা যেন এখনোও আছে। খুব সিগারেট এর নেশা ধরেছে। কিন্তু তাও খাওয়া হবে না। কেমন অস্বস্তি লাগছে। সিগারেট না খেলে সব কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যায়। আর কয়েকদিন ধরে আমার ইমাজিনেশন টা খুব বেশি হচ্ছে। কেন হচ্ছে কি, হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না। আমার পুরো ইমাজিনেশন জুড়ে থাকে সেই একজন। যার সাথে আমার কখনো কথাই হয় নি। শুধু দেখতে পাই তাকে,তার হাসি,তার চঞ্চলতা। আর মেয়েটি বড় অদ্ভুত। হঠাৎ কেমন যেন ইচ্ছে করছিলো ব্যালকনিতে গিয়ে তাকে দেখি। না মিহিমা কি আমার জন্য সব সময় দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি! কি অদ্ভুত যাকে নিয়ে এতো কথা,এত কল্পনা সে কি জানে? আচ্ছা মিহিমা কি আমাকে খুঁজে? আহ! কি ভাবছি কেনোই বা সে আমাকে খুঁজতে যাবে। সে তো শুধু ব্যালকনি থেকেই আমাকে দেখেছে। মিহিমা কে কখনোও রাস্তায় দেখি নি। কি জানি হয়ত যখন আমি থাকি তখন সে থাকে না। শুধুই আমার সামনে আসে, যাকে শুধুই আমি দেখতে পাই। সে আসে বটে কিন্তু আবার হারিয়ে যাই। ব্যালকনিতে বসে এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ দেখি মিহিমা। নাকি আমার ভ্রম! না সত্যি মিহিমা। অনেকদিন পর দেখলাম মিহিমা কে। রাস্তার ওপাশে তাকিয়ে কি যেন ভাবছে। মিহিমা কি আমাকে খুঁজছে। আরেহ ধুর আমাকে কেন খুঁজবে। মিহিমা নীল রং এর একটা জামা পরে আছে। নীল রং টা তাকে বেশ মানিয়েছে,ঠিক নীল পরি। হাতে নীল চুরি পড়লে আরো সুন্দর দেখাবে। এই ফাঁকে কল্পনাও করে নিলাম। সত্যি অসাধারণ লাগবে মিহিমা কে। বুকের বাম পাশটা আবার একটু চিন চিন ব্যথা করে উঠলো। হাল্কা শীতল হাওয়ায় মিহিমার চুল উড়ছে। ইচ্ছে করছে তার বাসার নিচে গিয়ে দাঁড়াতে। কিন্তু বাইরে যেতে মা হাজার খানেক প্রশ্ন করবেন। তার চেয়ে বরঞ্চ আমি মিহিমা কে এভাবেই দেখি। এভাবে দেখার মাঝে একটা মজা আছে। বিল্ডিং এর এ পাশ আর ওপাশ বাহ। বাসায় বড় খালা এসেছেন আমাকে দেখতে। বড় খালার দুটো ছেলে রাতুল আর রাবিদ। রাতুল দশম শ্রেণী তে পড়ে আর রাবিদ আমার সমবয়সী । বড় খালা তাদের নিয়ে সারাদিন গর্ব করেন। দুজই খুবই ভালো লেখাপড়ায়। বড় খালা মা বাবা কে সারাদিন আমারে ব্যাপারে কি সব হাবিযাবি বলে। আমি কানেই নি না,সব আত্মীয়স্বজন দের থেকে আমি দুরেই থাকি । সব কিছুর মধ্যে মনে হয় কেমন যেন ন্যাকামি কাজ করে,ওসব আমার একদম পছন্দ না। আমি রুমেই বসে আছি,আর ভাবছি কিভাবে বের হওয়া যায়। হঠাৎ বাবা আমার রুমে এলেন।
-মামা একটা চা দেন তো।
-বাবা অনেক দিন পর আইলেন! ভালা আছেন তো?
-এইত মামা ভালো আছি। ছোট্ট খাটো একটা এক্সিডেন্ট করেছিলাম তাই আর এদিক টা।
-আরেহ বাবা কন কি? যাক আল্লাহ রক্ষা করসে! আল্লাহর কাছে শুকরানা!
-জি মামা। তো আপনার কাছ থেকে তো অনেক বার সিগারেট নেয়া হল বাকি করে।
-আরে বাবা কুনো সমস্যা নাই। আপনারে চিনি দেইখা বাকি দি। আপনি পরে দিয়া দিবেন আরকি।
-মামা একটা বেনসন হবে?
-হ দিতেসি বাবা।
আহ অনেক দিন পর মামার দোকানের চা, আর সিগারেট বেশ ভালো ই লাগছে। মাথা টা হাল্কা হয়ে যাই বেশ। আমি দোকান থেকে মিহিমার বাসার ব্যালকনির দিকে তাকিয়ে আছি। ভাবছি কখন মিহিমা আসবে। কেমন যেন একটা চঞ্চলতা কাজ করছিলো। টং মামা হঠাৎ লক্ষ করে বললেন
-অই বাসায় একটা মাইয়া আছে। ভালা দেখতে অনেক সুন্দর একদম পরির মত।
আমি কিছুই বললাম না। মামা আবার বলতে লাগলেন তাদের সবার কথা,আমি তেমন একটা কানে না নিয়েই ব্যালকনির দিকে তাকিয়ে রইলাম। হঠাৎ টং মামা মিহিমা কে নিয়ে কিছু বলছিলেন আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম।
-হ্যা মামা আপনি কি যেন বলছিলেন? মেয়েটা কে আপনি কিভাবে চেনেন?
-মাইয়াডার মামা আসে এইহানে। মাইয়াডারে নিয়া অনেক কথা কইসে। মাইডার নাকি কি একটা অসুখ, মনে নাই নামটা।
টং মামার কথা শুনে কেমন যেন বুক টা হঠাৎ চিন চিন ব্যথা করে উঠলো। আমি কিছু বলিনি। টং থেকে বেরিয়ে রাস্তায় হাটতে লাগলাম।আচ্ছা মিহিমার কি অসুখ? দেখলে একদমই বুঝা যায় না মেয়েটা আসলে কি অসুস্থ। কোনো ভাবেই তাকে অসুস্থ দেখায় না। তাহলে টং মামা হয়ত ভুল শুনেছেন। আজ আকাশ টা কেমন যেন গুমোট হয়ে আছে।
অনিকের গল্প পর্ব ০৩ পড়ুন এখানে
খুব সুন্দর হয়েছে, মাশা-আল্লাহ
[…] By ডেস্ক রিপোর্টার কল্পকাহিনি […]