
চারদিকে রোগী নিয়ে ছুটাছুটি। হাসপাতালে ডক্টর, নার্স রোগী নিয়ে ব্যস্ত। কেমন যেন অস্বস্তিকর লাগছে সব। মনে হচ্ছে আমাকে বেধে রাখা হয়েছে । মাথায়ও প্রচণ্ড ব্যথা। অনেক কষ্টে কেবিন পাওয়া গিয়েছে। কেমন যেন চারদিক থমথমে পরিবেশ। কেবিনে সব কিছুই কেমন যেন। মা পাশের সোফায় বসে আছে। মা কে কেমন যেন দেখাচ্ছে। মনে হচ্ছে অনেক বড় কিছু হয়ে গেছে।প্রিয় জিনিসের কিছু হলে যেমন টা হয় আর কি। চিন্তায় মনে হয় যেন মুখ টা শুকিয়ে গেছে। আমি একটু নামার চেষ্টা করলেই মা দৌড়ে পাশে আসে।
কিরে কিছু লাগবে? বল আমাকে, কোথায় যাবি?
না কিছু লাগবেনা। এভাবে বসে থাকতে খুব অস্বস্তি লাগছে। বাইরে যেতে ইচ্ছে করছে।
মা আমার দিকে তাকাল ভাবছি বকবে।
দু একদিন বাইরে না গেলে কিছু হয়ে যাবে না। চুপ করে বসে থাক। তোর বাবা ডক্টরের সাথে কথা বলেছে। আরো দুদিন থাকতে হবে।
-তেমন কিছু হয় নি মা,বাবা কে বল আমি ঠিকাছি। ডক্টর এমন কথা বলবেই। তাদেরি লাভ এতে। মা কিছু বলল না। হঠাৎ একটা নার্স এলো। নার্সটি রিপোর্ট চেক করছিলো। নার্সকে দেখে মনে হচ্ছিলো খুবি ছোট্ট। আমাকে দেখে নার্স বলল—-
এখন কেমন লাগছে? আগের থেকে বেটার ফিল করছেন কি?
হ্যা ভালো আছি।
তারপর নার্স মা কে একটা প্রেসক্রিপশন দিলো আর বুঝিয়ে দিলো। নার্স চলে গেলো।
একা বসে আছি খুবি অস্বস্তিজনক অবস্থা। মা কেবিনে নেই, বাহিরে গেছেন। ইচ্ছে করছে হাটতে। হঠাৎ দেখি কেবিনের দরজা টা আলতো ভাবে খুলে কেউ একজন ভেতরে এলো। আমি তাকাতেই খুবি অবাক হলাম। আবার বুকের ভেতর টা কেমন যেন করে উঠলো। আমি সত্যি দেখছি সেই চেনা মুখ। কত দিন পর মনে হল সেই মায়াবী মুখ খানা দেখছি। সেই মায়াবী মেয়েটি… মিহিমা। চারদিকে পরিবেশ টা কেমন যেন হয়ে গেলো। দেখলাম মুখ খানি কেমন এক ধরনের লুকানো ভয় নিয়ে আমার দিকে এগুচ্ছে। আমি হতভম্বিত ভাবে বসেই আছি। আর তাকিয়ে দেখছি সে আমার দিকে আসছে। সে একদম আমার পাশে এসে দাঁড়াল। হঠাৎ শীতল কোমল হাতের স্পর্শ আমার হাতে লাগলো। মনে হল চারদিক নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। মনে হল সময় টা ওখানেই থেমে গেছে। কিছুই বুঝার আগেই মিহিমা আমার পাশে এসে বসলো। আমি কি বলব কিছুই বুঝতে পারছি না। কারো মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। মিহিমাও চুপ, আমিও চুপ করে রইলাম। দেখলাম মিহিমা আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। এবার সে হঠাৎ বলে উঠল –
রাস্তায় অন্য কিছু ভেবে হাটলে এমন তো হবেই।
আমি কিছুই বলতে পারছিলাম না। মিহিমা আবার বলল
একটু সাবধান হয়ে চললেই হয়। এখন থেকে রাস্তায় সাবধানে চলবে… ঠিকাছে?
আমি মিহিমার দিকে তাকিয়েই রইলাম। মনে হচ্ছিল আমি তার আপন কেউ, যাকে সে এত সুন্দর করে সাবধান হতে বলছে। তার কথা গুলো শুনতে ভালোই লাগছিল। সে আবার বলে উঠলো –
সাবধানে চলবে তো?
আচ্ছা সাবধানে চলব।
মিহিমা আবার মুচকি হাসল। সত্যি আমি এখনো স্বাভাবিক হতে পারিনি। এবার আমি বললাম
মিহিমা…. তুমি এখানে?
মিহিমা কিছু বলল না। সে আবার মুচকি হাসল।
মিহিমা….. তুমি কিভাবে এলে এখানে? তোমার কোনো সমস্যা হবে না?
না কোনো সমস্যা হবে না।
আমি কি বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ মিহিমা বলল
-কেমন আছ? ভালো আছ তো? খুব বেশি ব্যথা করছে?
আমি এবার আরেকটু অবাক হয়ে তাকালাম। মিহিমা আমার দিকে তাকিয়ে হাসল। সে বলল
তুমি রোজ আমার বাসার নিচে দারিয়ে থাকতে সিগারেট নিয়ে, আর আমাকে দেখতে। কিন্তু হঠাৎ দেখলাম তুমি আর দাড়াও নি… ওই রাস্তা দিয়েও তোমাকে আর দেখতে পাই নি। তোমাকে খুঁজেছিলাম , কিন্তু আর দেখতে পাই নি। তাই আমার বাসার নিচে দাঁড়িয়ে থাকা সেই মানুষ টিকে দেখতে চলে এলাম।
অনিকের গল্প পর্ব ০২ পড়ুন এখানে
আমার কেমন যেন লজ্জা লাগছিল। তারপর মিহিমা কে জিজ্ঞেস করি –
আচ্ছা মিহিমা…. তুমি কেনো আমাকে দেখার জন্য ব্যালকনিতে আসতে? কেন খুঁজতে আমাকে?
মিহিমা একটু লাজুক ভাবে অন্য দিকে ফিরে হাসলো। মিহিমার হাসি আজ সামনা সামনি খুব কাছ থেকেই দেখছি। মনে হচ্ছে কোনো এক পরি হাসছে। চুপ করি মিহিমা কে দেখছিলাম। এবার আমি তার সেই শীতল কোমল হাত টা ধরলাম খুব ভয়ে ভয়ে। কেমন যেন হয়ে গেলো চারপাশ। মনে হচ্ছে কোনো এক মায়াবী সুন্দরি আমার হাত স্পর্শ করেছে। হঠাৎ করেই মিহিমা উঠেই হাত টা ছাড়িয়ে খুব তাড়াহুড়া করেই কোথায় চলে গেলো। । আমি মুহুর্তেই কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ সব কেমন পালটে গেলো,সব কিছু কেমন মিলিয়ে গেলো । হঠাৎ মাথা কেমন ব্যথা করে উঠলো। কে যেন আমার হাতের মাঝখান টাই সুই ফুটিয়ে দিলো। মনে হচ্ছে সব কেমন যেন ঝাপসা দেখছি।
[…] By স্টাফ রিপোর্টার ক্রিয়েটিভ […]
[…] অনিকের গল্প পর্ব ৩ পড়ুন এখানে […]