প্রথম প্রেম শেষ ভালবাসা (শেষ পর্ব)

ZZgQOQpIWdPUbgwNQwQ1ZGlC7bJIuWDMJq4ME22hgtFQiiU2l_FfFmhWIb+OqzFP6E7yZlEy8GK+FTEHZZApwsweKIHuByT7SQ+i39Osva7yQuvQJlM1VRPVTtZVF79Mc3CvC_WbEdawPG9Lrpw_D94jXk2Vk6GJGrmWEGoDvxXEAiIFmJzTE copy

ফারিয়ার ম্যাসেজ টা বাবা কে দেখালাম। বাবা বললেন হয়তো তোমার সাথে মজা করছে। আমি কিছুই বুঝলাম না, কিন্তু সাব্বিরকে আমি একটা কাজে ঢাকায় রেখেছিলাম। কী কাজ!বাবা অবাক হয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন। আমি বললাম, বাবা তুমি তো এতদিনে নিশ্চয়ই বুঝেছ যে, সাব্বিরের সাথে তোমার কোন সম্পর্ক নেই, আমি ডি এন এ রিপোর্ট আর ওর জন্ম সনদ বের করে জেনেছি। সুতরাং, মা কে ফেইস করতে এখন আর কোন বাঁধা নাই। বাবা হাসলেন, “তুমি যে কী গ্লানি থেকে আমাকে বাচিয়েছ, সে তুমি ভাবতেও পারবেনা।‘

আমি আসলে সাব্বিরকে দুইটা কাজে ঢাকায় রেখেছিলাম- প্রথমতঃ মায়ের কাছে ওকে দিয়েই ওর জন্মসনদ আর ডি এন এ রিপোর্ট টা পাঠাতে চেয়েছিলাম। আর দ্বিতীয়ত, রেহানা আন্টিদের গ্রামের সম্পত্তিগুলো আমি উদ্ধার করিয়েছি, তা ওকে বুঝিয়ে দিব। বাবা তোমার আঁকা কিছু ছবির রয়েলিটি বিক্রি হয়েছে জানো? আমি সেই টাকাটা কোন একটা চ্যারিটিতে দিতে চাই। বাবা আমি সাব্বিরকে কিছু টাকা দিব ঠিক করেছি। এই ধরো লাখ বিশেক। তারপর ওকে দেশের বাইরে স্যাটেল্ড করে দিব। বাবা আমাকে পিঠ চাপড়ে বলল- অয়ন তুমি যখন এভাবে কথা বল আমার বিশ্বাস হয়, আমি তোমাকে সঠিক ভাবে মানুষ করতে পেরেছি। এনিওয়ে তুমি আমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে ফারিয়ার সাথে না হয় দেখা করে আসো। আমি বললাম- বাবা আমার খুব টায়ার্ড লাগছে, আমি বরং ওর সাথে ফোনে কথা বলে নিচ্ছি। তুমি শুধু প্লিজ ফারিয়াকে বলো না যে তুমি আমাকে সব বলেছ”। বাবা হেসে বললেন- ওকে, মাই বয়।

বাসায় এসে ফোন করলাম ফারিয়াকে। ফারিয়া, কেমন আছো? কী হয়েছে বল তো!!

ফারিয়া বেশ আর্দ্র গলায় বলল-‘ কাল কী আমাদের দেখা হতে পারে?’ বিকালের দিকে। খুব জরুরি কথা বলার আছে।

আমি হেসে ফেললাম- কেন চন্দন কে নিয়ে মারবে নাকি আমাকে?

ফারিয়া-‘প্লিজ’

‘ঠিক আছে, কোথায় বলো’

‘আমি জায়গা আর টাইম টেক্সট করে দিব’

‘ঠিক আছে’

সারাদিনের ধকলে ঘুমিয়ে পড়লাম আমি। ঘুম ভাঙ্গলো মাঝ রাতে, বাবার গলার আওয়াজে। বাবা ভয় পাওয়া গলায় আমাকে ডাকছেন। আমি দৌড়ে গেলাম বাবার রুমে। এর মধ্যে শুনি, বাসার কলিং বেলের সাউন্ড। আমি বললাম- কে?

‘পুলিশ’

‘পুলিশ, এত রাতে’?

এদিকে বাবা ও ডাকছে- অয়ন, পুলিশ কেন আসলো!!

আমি বাবাকে বললাম- বাবা তুমি শান্ত হও, আমি দেখছি।

গেট খুলে দেখি পুলিশ দাঁড়িয়ে- আমি বললাম এত রাতে!! দেয়ালের ঘড়ি মনে করিয়ে দিল এখন রাত নয় বরং ভোর। ভোর চারটা। এত ভোরে আমাদের বাসায় পুলিশ আসা সহজ কথা নয়। আমি জিজ্ঞেস করলাম কী ব্যাপার? উনারা যা জানালো, তা ভয়াবহ। গতকাল রাতে নাকি হাসেম মামার লাশ পাওয়া গেছে, তাও আবার উনার বাড়ীর সামনেই। কিডন্যাপ হবার কোন ঘটনাই পুলিশ কে নাকি জানান নি রেহানা আন্টি শুধুমাত্র কিডন্যাপাররা হাসেম মামার কোন ক্ষতি করতে পারে এই ভেবে। বাবা আর আমি দুইজন ই যারপরনাই অবাক। বাবা আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি বললাম, তো আমাদের এখানে কী!

“স্যার উনার স্ত্রী আপনাকে দায়ী করে মামলা করেছে”।

কী! এত্ত বড় স্পর্ধা এই মহিলার! আমি একটু জোরেই বলে উঠলাম।

‘আপনাকে আমাদের সাথে থানায় যেতে হবে’

‘কী, বলছেন আপনি! আমি যাবো থানায়’

এবার বাবার মুখে রক্ত জমছে, সে বেশ জোরের সাথেই বলছে আমার ল’ইয়ারের সাথে কথা বলতে দিন আগে।

কিন্তু পুলিশ নাছোড়বান্দা, বাবা নানাকে কল দিলেন, নানা আর কাকে কাকে যেন কল দিল। এরপর পুলিশ বলে গেলো সকালে আমি যেন উকিল সহ গিয়ে এডভান্স জামিনের ব্যাবস্থা করি। আমার এত রাগ লাগছিল!

আমি শুধু বাবা কে বললাম- বাবা আমার মনে হয় এবার তোমার রেহানা আন্টির সাথে কথা বলার সত্যি প্রয়োজন, বাবা মাথা নাড়লেন।

আমি সকালে ফারিয়া আর অন্য আরেকজন ক্রিমিনাল ল’ইয়ার নিয়ে এডভান্স জামিনের ব্যাবস্থা করলাম।

জামিনের পর, ফারিয়াকে বললাম-‘চল কোথাও বসি’

ফারিয়ার চোখে মুখে তখন হাসি-‘ চলুন”

ওকে নিয়ে সুন্দর একটা রেস্টুরেন্টে বসলাম। হাল্কা গলায় বললাম-“খুনির সাথে বসতে ভয় লাগছে না!”

খুব মিষ্টি হেসে বলল- খুনিটা তো আমাকেই আগে খুন করে ফেলেছে।

আমি অবাক হলাম কথা শুনে। বললাম-বলো চন্দনের কী কাহিনী। ফেরত আসছে! তাহলে তো ভালই, চলে যাও। আমাকে আর দয়া করা লাগলো না তোমার।

ফারিয়া বলল- রাগবেন না একদম, আসলে আপনাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছিল। আপনার ফোন বারেবার আন রিচেবল পাচ্ছিলাম, অফিসেও যাচ্ছেন না। তাই ঐ টেক্সট পাঠিয়েছিলাম”

“অবশ্য মনে মনে আশা করেছিলাম, আপনি হয়ত উদগ্রীব হবেন!! আমার ভাগ্যটাই খারাপ, আপনার মনে এখনো জায়গা পেলাম না”

‘ফারিয়া, আমাকে আর কত করুনা করবে বলতো!! বাবা আমাকে সব বলেছেন”

‘উপস! আংকেল সব বলে দিয়েছে!! তাহলে তো আসলে বলতেই হয়, অয়ন আমি তোমাকে ভালবাসি, আমি তোমাকে চাই” হঠাত ই নাটকীয় গইলায় বলে উঠলো ফারিয়া।

‘ফারিয়া তুমি আমাকে দেখে ভাবছো আমি পুরুষ, তুমি এখনো ক্ষনিকের মোহেই আছ। তুমি বুঝতে পারছো না, পরে তোমার মোহভংগ হবে। তুমি আমাকে হয় ত্যাগ করবে নয়ত ঘৃণা’

‘ আচ্ছা অয়ন, বলতো, তুমি পুরুষ হলে আমাদের বিয়ের পরে যদি কোন অসুখে যদি পুরুষত্ব হারাতে, আমি কী তোমাকে ছেড়ে যেতাম! শোন আমি তোমাকে ভালবেসেছি। ভেতরের তোমাকে, মানুষ তোমাকে। আমি একজন আজীবনের বন্ধু চাই, যে পাশে থাকলে আমি কখনো উদাস হবো না, যে পাশে থাকলে নিজেকে আমার খুব স্পেশাল মনে হবে।“

‘কিন্তু ফারিয়া…’

‘ চুপ, আমাকে বলতে দাও- আচ্ছা বলতো, একজন নারী একজন পুরুষ ভালবাসাহীন যদি একটা জীবন কাটিয়ে দেয়, সেই জীবন কী খুব অর্থবহ কিছু!! আমি তীব্র প্রেমে বাঁচতে চাই তোমার সাথে। তুমি শুধু আমাকে অনেক অনেক ভালবেসো। আমি যখন ক্লান্ত হয়ে পড়বো, দুনিয়ার সাথে লড়ে যখন হাফিয়ে উঠবো, আমাকে জড়িয়ে ধরে একটু বলো- ভালবাসি, খুব বেশি।

অয়ন ভালবাসায় শরীর উপস্থিতি আমার কাছে অনেক গৌন। আমি চোখ বুজলেই তোমার হাসি দেখতে পাই, আমি একা থাকলেও তোমাকে অনুভব করতে পারি, এটাকে তুমি কী বলবে ভালবাসা ছাড়া! আমি তোমার সাথেই বাকি জীবন কাটাবো ঠিক করেছি।

আংকেলের কাছ থেকে আমি কনার ব্যাপারেও জেনেছি, তুমি কনাকে গ্রহন করতে পারো নি তা- ও শুনেছি। কনা ও কিছু না জেনে সরে গেছে, আংকেল তাই- আমাকে আগেই সব জানিয়েছে। আমি সব জেনেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার শুধু একটাই জিনিস জানার…”

চুপ করে থেকে আমার চোখে তাকিয়ে গাড় স্বরে বলল- ‘অয়ন, আমাকে ভালবাসবে অনেক অনেক”

আমার হৃদস্পন্দন তখন হাজারে পৌঁছেছে মনে হচ্ছে, আমি আস্তে আস্তে বললাম- ‘ফারিয়া, ছোটবেলা থেকেই আমি খুব ভয় আর সংকোচে বড় হয়েছি, বাবা আমাকে এতটা আগলে রাখতো! আমি একসময় ভাবতাম, বাবা ছাড়া হয়ত আমার বন্ধু নেই। বাবা ও হয়তো দ্বিধা থেকেই আমাকে খুব একটা কারো সাথে মিশতে দিত না। আমি ছিলাম নিঃসঙ্গ। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমার প্রিয়বন্ধুর অকাল আর অনভিপ্রেত মৃত্যু আমাকে বন্ধুত্ব কিংবা ভালবাসা থেকে আরো দূরে রেখেছিল। এর মাঝেই আমার জীবনের এত চড়াই উতরাই, আমি আসলে প্রেম ভালবাসা বুঝিনা খুব একটা, কিন্তু আমি আমার বাবার মত একজন বাবা হবার স্বপ্ন দেখি ফারিয়া ইদানিং’

চুপ করে থেকে থেকে বললাম- ‘ফারিয়া সেটা তোমার জন্য সম্ভব হয়েছে, আমি স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি, আমি ভাল থাকতে শুরু করেছি। ভালবাসা কিনা বুঝিনা, কিন্তু আমি তোমার পাশে থাকতে চাই ফারিয়া, আজীবন। আমি কথা দিচ্ছি থাকব ইনশাল্লাহ”

তাকিয়ে দেখি ফারিয়ার চোখে পানি, ‘জানো অয়ন, তোমার মায়ের ব্যাপার টা আমি জানার পর থেকে অনেকবার ভেবেছি উনার মুখোমুখি হই, তোমার মত এত চমৎকার একটা মানুষ কে জন্ম দিয়ে কোন মা লজ্জিত হয় বল!! তোমাকে নিয়ে তো গর্বিত হওয়ার কথা”

আমি শুকনো হেসে বললাম- আমি আজ যা, সব বাবার জন্য। আর তাই আমার বাবাকে কেউ যদি এতটুকু ঝামেলা বা কষ্টে রাখে আমি তাকে কখনো, কোনদিন ক্ষমা করবো না।“

ফারিয়াকে বাসায় ড্রপ করে বাসার দিকে এগুলাম।

বাসায় ফিরে দেখি, গেটের সামনে সাব্বির। সে আমাকে দেখে তেড়ে আসলো। ” স্যার আপনি!”

আমি সাব্বিরকে নিয়ে বাসার ভেতর ঢুকলাম। ‘সাব্বির শোন, বসো। তোমার বাবাকে আমি খুন করিনি, কারো তাকে খুন করে আমার কোন লাভ নাই এটা তো বুঝতেই পারছ, বরং সে বেঁচে থাকলেই আমি আমার বাবাকে তোমার মায়ের কাছ থেকে হয়তো দূরে রাখতে পারতাম’

‘তোমার বাবাকে উদ্ধারের জন্য তোমার মাকে আমি গতকালই ২০ লাখ টাকা দিয়েছিলাম, তুমি চাইলে সিসি টিভি ফুটেজ দেখতে পারো’

বলে সাব্বির কে শান্ত করার চেষ্টা করলাম। আমার মনে হয়, আমাদের পুলিশের হাতেই ব্যাপার টা ছেড়ে দেয়া উচিৎ। সাব্বির তুমি বরং ইন্ডিয়া চলে যাও, শপিং টা শেষ করে আসো, কনা তোমাকে মিস করছে। আমি এদিকটা দেখছি।

সাব্বির তাও গোঁজ হয়ে বসে থাকলো। আমি ওর দিকে ওর চাহিদা অনুযায়ী একটা চেক বাড়িয়ে দিয়ে বললাম। বিয়ের পর এটা ক্যাশ করাবে। আর আমি অন্য ব্যাপার গুলো ম্যানেজ করে রাখব,যাতে খুব দ্রুত অই তোমরা দেশের বাইরে চলে যেতে পারো।

এখন গিয়ে গুছিয়ে নাও সব। পোস্ট মর্টেমের পর দাফনের ব্যাবস্থা আমি ই করব, তোমার সেখানে না থাকাই ভাল, বলা যায় না হয়ত দেখা যাবে হাসেম মামা কে তুমি ই খুব করেছ। বলে আমি ক্রুর হাসি দিলাম। সাব্বির যথেষ্ট বুদ্ধিমান তাই আমাকে আর ঘাটালো না। আমি ওর টিকেটে র ব্যাবস্থা করে আমার খুব বিশ্বাসভাজন একজনকে ওর দিকে চোখ রাখতে বললাম।

এবার বাবাকে মুখোমুখি হতে হবে রেহানা আন্টির। আমার মনে হয় সেখানেই মিলবে হাসেম মামার মৃত্যু রহস্য। কিন্তু, ভাগ্য সবসময় ই আমার সাথে নিষ্ঠুর ভাবে খেলেছে এটা কেন জানি আমি ভুলে যাই।

বাবার রুমের দিকে এগুতেই দেখি বাবার কোন সাড়া নেই, ওয়াশরুমের কল ছাড়া। আমি দরজা ধাক্কালাম। বাবার সাড়া নাই। আমি অল্টারনেটিভ চাবি দিয়ে দরজা খুলে ঢুকে দেখি বাবা নাই। আমার আত্মা উড়ে যাওয়ার অবস্থা। তাহলে কল ছাড়লো কে?

আমি অস্থির ভাবে পুরো বাসায় বাবাকে খুঁজছি, ছাদে গিয়ে দেখি এক অভুপূর্ব দৃশ্য, যা আমাকে এক মুহুর্তে আমাকে ভরিয়ে দিল অনেক অনেক ভাল লাগায়।

ছাদে বাবার সাথে দাড়িয়ে একজন নারী, কেউ না বলে দিলেও আমি বুঝতে পারছি। উনি আমার মা। এত সুন্দরী, এত ব্যাক্তিত্বসম্পন্ন আমার মা ছাড়া কেউ হতেই পারেন না। আর আমার বাবাই বা অন্য কারো হাত দুটো জোর করে ধরে থাকবে!! অবশ্যই আমার মা। আমার চোখে এখন বর্ষার ধারা। হঠাৎ ই বাবার ডাকে সম্বিত ফিরে পেলাম- দেখি বাবাও একই সাথে হাসছে আবার চোখ ও মুছছে। মা আমাকে কাছে ডাকলেন।

‘অয়ন, তোমার বাবা তোমাকে একজন মানুষ হিসাবে গড়তে পেরেছে। আমার সব লজ্জা, দ্বিধা সব দূর করে তোমাকে একজন সত্যিকারের মানুষ হিসাবে গড়তে পেরেছে সে। আমি আমার ভুল গুলোর জন্য আফসোস করছি। তোমার বাবার উপরে অসীম অভিমান, রাগ আমাকে তোমার কাছ থেকে দূরে রেখেছিল। তোমার জন্ম পরিচয়ে তোমার কোন হাত ছিল না বাবা’।

আমি সব দ্বিধা ভুলে মা- কে জড়িয়ে ধরলাম । মা ও আমাকে জড়িয়ে অনেক অনেক কাঁদলও। কেন যেন আমার এই মুহুর্তে ফারিয়ার কথা খুব মনে হচ্ছিল, ভাবছিলাম এই মুহুর্তে সে ও আমার পাশে থাকলে ভাল লাগত। আচ্ছা এটাই কী তবে ভালবাসা!!

বাবা বললেন রোজি এবার তাহলে তোমার সব ভুল গুলো আজ ই ভাঙ্গিয়ে দেই। অয়ন, তুমি কী রেহানা কে ডাকবে??

আমি বললাম ‘এখন ই’?

বাবা বলল ‘হ্যাঁ আজই সব চেয়ে ভাল সময়। তবে তুমি আর তোমার মা এই দৃশ্যপটের আড়ালে থাকলে সব চেয়ে ভাল হয়’।

আমি মাথা নেড়ে, বাবা কে বললাম- তবে তুমি ই কল করো

বাবার ফোন পেয়ে কিছুক্ষনের মাঝে এসে হাজির রেহানা আন্টি, সদ্য স্বামী হারানো এক বিধবা মহিলার কোন শোক তার মাঝে নেই, সে যেন এসেছে কোন গোপন অভিসারে, অন্ততঃ তার সাজশয্যায় তা- ই মনে হচ্ছে।

এসেই বাবার পাশে বসলো। বাবা বললেন-‘ রেহানা, আশা করবো সম্মানজনক দূরত্ব তুমি বজায় রাখবে’

‘আমি তোমার স্ত্রী টগর, তোমার প্রথম প্রেম’

‘ রেহানা, আমার মনে হয় আমরা বর্তমানের কথা বলি, দেখো আজ থেকে অনেক অনেক বছর আগের বাস্তবতায় আমরা কেউ ই নেই। তোমার বা আমার জীবনের অনেক অনেক পরিবর্তন ঘটে গেছে, আমি কত অসংখ্যবার মুক্তি চেয়েছিলাম বলতো। তুমি সাব্বিরের মিথ্যা পিতৃত্বের ভয় দেখিয়ে আমাকে আমার স্ত্রী- সন্তানের সাথে আনন্দে থাকতে দাও নি, অয়নকেও বঞ্চিত রেখেছ মাতৃস্নেহ থেকে’

‘আমি তোমাকেই আজীবন ভালবেসেছি টগর, তোমাকে আমি যে কোন মূল্যেই চেয়েছি, এখনো চাই’

‘রেহানা, কাউকে জোর করে, ভয় দেখিয়ে কি আসলে কোন সম্পর্কে রাখা যায়! তোমার বিয়ের খবর পাবার পর, আমি খুব অস্থির আর অসহায় ছিলাম অনেকদিন, এরপর অয়নের মা আমার জীবনে আসে, ওকে পাবার পর আমি ভালবাসার অন্য একটা দিক দেখতে পাই, সেটা হলো উদারতা। দেশের বাইরে কাটানোর প্রতিটা দিন সে আমার মত সহায় সম্বলহীন এতিম একটা ছেলেকে গ্রহন করেছে আকাশের উদারতায়, আমার পড়াশোনা ঠিক মতো শেষ করার জন্য, নিজে একা দেশে ফিরে কষ্ট করেছে, যে সময় টাতে তুমি আমাদের জীবনে এসে অন্ধকার ছায়া ফেলেছিলে’

‘অয়নের মা তোমাকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছিল’

‘ভুল কথা রেহানা, সে আমাকে এতটাই ভালবেসেছিল যে আমি তার পরে আর কিছুই ভাবতে পারিনি, তুমি আমার জীবনে যখন ছিলে সে ছিল আমার সদ্য শৈশব কাটানোর দিন গুলো, আমি তোমার প্রেমে পড়েছিলাম, কিংবা সেই সময় টাতে তুমি এতটাই আমার অভ্যেসে মিশে ছিলে যে আমার তোমাকে ভালবাসতেই হতো। আমি সেই সময়টাতে তোমাকে সর্বোচ্চ ভালবেসেছি এটাও সত্যি, কিন্তু রোজি আমার জীবনে আসার পর বিশ্বাস করো তুমি আমার মন থেকে অনেক টাই মুছে গিয়েছিলে, আচ্ছা বলতো অয়নের মা চলে যাবার এতগুলো বছর পরেও আমি কী কখনো তোমার প্রেম নিবেদনে কোনভাবে সাড়া দিয়েছি!!”

‘তুমি আমাকে ভালবাসো না’? চিৎকার করে উঠলেন রেহানা আন্টি

‘তোর জন্য টগর, আমি সব হারিয়েছি। তোকে পাবার নেশায় আমি কখনো আমার স্বামীর সাথে মন দিয়ে সংসার করিনি, তাকে কখনোই ভালবাসতে পারি নাই! আমার সন্তান সাব্বির ও আজ আমার কাছ থেকে দূরে, সব কিছুর জন্য তুই দায়ী’

সব ভদ্রতা ছেড়ে চিৎকার করে কাদছেন এখন, ‘আমি সুখি হতে পারিনাই তোর জন্য, তোকেও আমি ভাল থাকতে দিব না, তোর ছেলে কে আমি জেলে পচিয়ে মারব। এত এত সম্পদ তুই করেছিস তোর ছেলের জন্য, আমি দুনিয়ার সবাইকে জানাবো দরকার লাগলে সংবাদ সম্মেলন করে সাব্বির কে তোর ছেলে বলে পরিচয় করিয়ে দিব’।

বাবা এবার শান্ত আর রাগী গলায় বলতে লাগলেন-‘ আমার উপরের রাগ কেন অয়ন বয়ে বেড়াবে! ওকে মাতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত করেছ। আর আমি তো তোমার স্বামীকে, তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করতে, সাপোর্ট করতেও চেয়েছি। তুমি কোন সুস্থ স্বাভাবিক রাস্তায় না গিয়ে বছরের পর বছর আমাকে ব্ল্যাক মেইল করে ভয় দেখিয়ে নিজের জীবন তো বটেই আমার জীবনটাকে নষ্ট করে দিয়েছ তুমি! এ কেমন ভালবাসা তোমার!! এই বিধ্বংসী ভালবাসা আমাদের সবাইকে ধ্বংস করে দিয়েছে রেহানা, প্লিজ এখন অন্ততঃ নিজেকে বদলাও! অয়ন কে মুক্তি দাও তোমার এই জঘণ্য খেলা থেকে, প্লিজ’

রেহানা আন্টির চোখ বেয়ে তখন অশ্রুর ফোয়ারা-‘ টগর, তুমি আমাকে আর ভালবাসো না!!’

‘রিনা, এই রেহানা কে আমি ভালবাসি না, আমি অবশ্যই রিনা কে ভালবাসি যাকে আমি ফেলে এসেছি সেই গ্রামে,আমার শৈশবে, আমার কৈশোরে। সে রিনা তুমি আর নেই। এই তোমাকে আমি ভয় পাই, তুমি কী বোঝ না’!!

রেহানা আন্টি মাথা নিচু করে বেরিয়ে গেলেন আমাদের বাসা থেকে। বাবা মাথা চেপে বসে রইলেন সোফার উপরে, আমি গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম বাবা কে। পেছনে মা।

হাসেম মামার পোস্ট মোর্টেম রিপোর্ট আসার আগেই রেহানা আন্টি আদালতের কাছে খুনের দায় স্বীকার করে স্টেইটমেন্ট দিয়েছে। সাব্বির ইন্ডিয়া থেকে ফিরে আসার সপ্তাহ খানেক পর ধুমধাম করে বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। আমাদের মালয়শিয়া ব্রাঞ্চে ম্যানেজার করে ওকে পাঠানো হয়েছে গত সপ্তাহে।

পরিশেষে…………

পানির ছিটায় ঘুম ভাঙ্গলো আমার। আমি তাকিয়ে দেখলাম, পৃথিবীর সব চেয়ে সুন্দরি মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে খিল খিল করে হাসছে, তার ভেজা চুল থেকে পানি এসে পড়ছে আমার মুখে। ওর সেই মুখের দিকে তাকিয়ে বলতে ইচ্ছা করছিল- ‘ভালবাসি , ভালবাসি”। আমি কিছু বলার আগেই- বাবা তাত্তাড়ি উঠো তো ডাকে মাথা ঘুরিয়ে দেখি আমাদের ছোট্ট টুসি আমাকে হাত বাড়িয়ে ডাকছে।

টুসিকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে থেকে মনে হলো, আহা আমার শৈশব টাই যেন ফিরে এসেছে।

মন্তব্য করুন