বাংলাদেশের “ফ্ল্যাগ গার্ল”- নাজমুন নাহার সোহাগী

Feature Image

বাংলাদেশের কোনো নারী হিসেবে ১৫০ দেশ ভ্রমণের কথা চিন্তা করা বেশ দুঃসাহসের কাজ। এই কাজটি ই আবার একা সম্পূর্ণ নিজে নিজে কোনো বাংলাদেশি মেয়ে করেছে, একথা শুনলে এদেশের অনেকেরই চোখ কপালে গিয়ে ঠেকবে। এই দুঃসাহসিক কাজটিই গত ২১ বছর ধরে করে যাচ্ছেন লক্ষীপুরের মেয়ে নাজমুন নাহার।

ছোটবেলা থেকেই নাজমুন নাহারের বাবা তাকে বিভিন্ন ধরনের বই পড়তে দিতেন। তিনি তাঁর বাবার থেকেই সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা পেয়েছেন। নাজমুন নাহার এর দাদা আলহাজ মৌলভী আহমাদ উল্লাহ ছিলেন একজন বিখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ ও পরিব্রাজক। মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সবকটি দেশ তিনি ঘুরে বেরিয়েছেন ভারত স্বাধীন হওয়ার বহু আগে। দাদার কাছে সেইসব ভ্রমণকাহিনী শুনে ছোট্ট নাজমুন নাহার বেড়ে ওঠা শুরু করে বিশ্বকে ঘুরে দেখার স্বপ্ন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পলিটিকাল সায়েন্সে স্নাতক শেষ করে সুইডেনে পাড়ি জমান পোস্ট গ্রাজুয়েশনের জন্য। সেখানেই বিভিন্ন গবেষণা বিষয়ক প্রজেক্টে কাজ করে দেশ-বিদেশ ভ্রমণের জন্য অর্থ সঞ্চয় শুরু করেন। যেখানে অন্যরা সবাই বৈষয়িক নানান চাওয়া-পাওয়া পূরণে ব্যস্ত হয়ে পড়ে পড়াশোনা শেষ করেই, সেখানে তিনি নিজের উপার্জন ও সঞ্চয় দিয়ে মনের খোরাক যুগিয়েছেন।

আরও পড়ুন- ভ্রমণপিপাসু নারীদের অনুপ্রেরণা মারজীয়া    

নাহারের বিশ্ব ভ্রমণের যাত্রা শুরু হয় ২০০০ সালে ভারতের পাঁচমারি-তে “ভারত আন্তর্জাতিক অ্যাডভেঞ্চার প্রোগ্রাম” এর মধ্য দিয়ে। ২০২১ এ এসে ১৫০ টি দেশে ভ্রমণের কৃতিত্ব অর্জন করেন। ১৫০ তম দেশ হিসেবে ভ্রমণ করেন আফ্রিকার দ্বীপরাষ্ট্র সাওটোমে ও প্রিন্সিপে তে। এই দীর্ঘ ২১ বছরের যাত্রায় বহু প্রাণঘাতী অভিজ্ঞতা ও সংগ্রামের মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে। কিরগিজিস্তানের আলা আর্কা পর্বত পাড়ি দেবার সময় খাঁদে পড়ে গিয়েছিলেন তিনি। পাহাড়ের গায়ে বেড়ে ওঠা এক গাছের ডাল ধরে তাকে ঝুলে থাকতে দেখে অন্য দুই হাইকার তাকে উদ্ধার করলে সে যাত্রায় রক্ষা পেয়ে যান তিনি। আরেকবার পেরুর রেইনবো মাউন্টেইন এ উঠার সময় প্রায় ১৪,০০০ ফিট ওপরে গিয়ে শ্বাস-কষ্টের সমস্যা শুরু হলে তাঁর গাইড আর সামনে এগোতে অস্বীকৃতি জানায়। কিন্তু নাজমুন নাহারের অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও অন্য একজন পর্বতারোহী এর সাহায্যে সেবার প্রায় ১৭,০০০ ফিট উঁচু পর্বত জয় করে ফেরেন তিনি। এসব ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কোনোটিই তাঁর ছোট বেলার স্বপ্নপূরণের পথে বাঁধা হয়ে দাড়াতে পারেনি। বরং তিনি এগুলোকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে এগিয়ে গিয়েছেন সামনে আর জয় করে গিয়েছেন একের পর এক দেশ।

ফলো করুন আমাদের ইউটিউব

শুরুটা নিছক শখের বশে হলেও এখন তিনি তাঁর ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে রূপ দিয়েছেন বিশ্ব শান্তির বার্তা হিসেবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে তিনি তাঁর অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন সেখানকার সুবিধাবঞ্চিত শিশু ও নারীদের সাথে, তাদের মাঝে বুনে আসেন একদিন তাঁর মত হওয়ার স্বপ্ন। এজন্য তিনি পেয়েছেন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মাননা। ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পেয়েছেন “Peace Torchbearer Award”। ২০২০ এ মালদ্বীপের পর্যটন মন্ত্রী তাকে ভূষিত করেন “A Brave Symbol of Women in the World” উপাধি তে। এছাড়াও জাম্বিয়ার গভর্নরের থেকে “Flag Girl”, সাউথ সুদান থেকে “Women Empowerment Award”,Miss Earth Queen Award”, “Annanya Top 10 Award”, সহ আরও বহু সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন তিনি।

এত এত দেশ ঘুরেও কিন্তু নাজমুন নাহার কখনো তাঁর মাতৃভূমিকে দূরে রাখেননি। যেখানে গিয়েছেন বয়ে নিয়ে গেছেন লাল সবুজের পতাকা, খোদাই করে নিয়েছেন গলার লকেটে। তাঁর আগামী দিনের লক্ষ বিশ্বের ২০০ টি দেশ ভ্রমণের মাইলফলক স্পর্শ করা। দরজার ওপাশে এর পক্ষ থেকে শুভ কামনা জানাই তাঁর আগামী দিনের অ্যাডভেঞ্চার এর

মন্তব্য করুন