
সংক্ষিপ্ত জীবনী
নাম : আবদুস সালাম।
জন্ম : ১৯২৫ সাল ৷
পিতা : মোহাম্মদ ফাজিল মিয়া ৷
মাতা : দৌলতের নেছা।
জন্মস্থান : ফেনী জেলার দাগনভুঁইঞা উপজেলার লক্ষণপুরে জন্মগ্রহণ করেন।
কর্মস্থান: পূর্ব পাকিস্তান সরকারের ডিরেক্টরেট অব ইন্ডাস্ট্রিজ বিভাগে।
পদবী: পিয়ন।
মৃত্যু : ২৫ ফেব্রুয়ারী, ১৯৫২ সাল, সরকারী গেজেটে ৭ই এপ্রিল ১৯৫২ ৷
সমাধি স্থল : ঢাকার আজিমপুর পুরানো কবরস্থানে ৷
ভাষা শহীদ আবদুস সালাম ফেনী জেলার দাগনভুঁইঞা উপজেলার লক্ষণপুর গ্রামে ১৯২৫ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। লক্ষণপুরের বর্তমান নাম সালাম নগর। তাঁর পিতার নাম মোহাম্মদ ফাজিল মিয়া এবং মাতার নাম দৌলতের নেছা। তিনি স্থানীয় মাতুভূঁইঞা করিমুল্লা জুনিয়র হাই স্কুলে নবম শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। অতঃপর চাকরির সন্ধানে ঢাকায় আসেন। পূর্ব পাকিস্তান সরকারের ডিরেক্টরেট অব ইন্ডাস্ট্রিজ বিভাগে পিয়ন হিসাবে চাকরি পান। ঢাকায় ৩৬বি, নীলক্ষেত ব্যারাকে তিনি বসবাস করতেন। ৪ ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে আবদুস সালাম ছিলেন সবার বড়। বর্তমানে জীবিত আছেন শহীদ সালামের এক ছোটভাই আবদুল করিম ও বোন বলকিয়ত নেছা।
মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবীতে বাহান্নের ভাষা আন্দোলনে টগবগে তরুণ সালামের হৃদয়েও আন্দোলনের ডাকে ছুঁয়ে যায়। ২১শে ফেব্রয়ারী (১৯৫২) এবং ৮ই ফাল্গুন ১৩৫৯ বাংলা সাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনের রাস্তায় সরকার কর্তৃক জারিকৃত ১৪৪ ধারা অগ্রাহ্য করে ছাত্র-জনতা বাংলা ভাষার দাবীতে যে মিছিল করে আবদুস সালাম সে বিক্ষোভ মিছিলে স্বপ্রণোদিত ভাবে অংশ গ্রহণ করেন। আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার সঙ্গে সালামও ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাজপথে নেমে পড়লে মিছিলে পুলিশ নির্বাচারে গুলি চালায়। বিকেল সাড়ে তিনটায় পুলিশের বেপরোয়া গোলাগুলিতে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ গুলিবিদ্ধ হন অনেকে। গুরতর আহত অবস্থায় আবদুস সালামকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সালামের ম্যাচের কাজের বুয়ার ছেলে তেজগাঁ নাবিস্কুতে কর্মরত সালামের ভাতিজা মকবুল আহম্মদ ধনা মিয়াকে জানান তার চাচা সালাম গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। মকবুল ছুটে যান সালামের আরেক জেঠাতো ভাই হাবিব উল্যাহর কাছে। তারা দু’জনে মিলে দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসে দেখেন, পেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে সালাম সংজ্ঞাহীন অবস্থায় মেডিক্যালের বারান্দায় পড়ে আছেন। তারা ২১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় টেলিগ্রামে সালামের বাবা ফাজিল মিয়াকে সালামের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাটি জানান। ফাজিল মিয়া তার অন্য এক ছেলেকে নিয়ে ঢাকা মেডিক্যালে ছুটে আসেন। পর দিন সকাল ৯টার দিকে বেশ কিছু ছাত্র সালামের যথাযত চিকিৎসা না করার অভিযোগে হাসপাতালে বেশ কিছুক্ষণ হট্টগোল করেন। মকবুল ও হাবিব উল্যাহ হাসপাতালে আসা যাওয়ার মধ্যে থাকলেও সংজ্ঞাহীন সালামের বিছানার পাশ থেকে তার বাবা কোথাও আর যায়নি। বাবার উপস্থিতিতে হাসপাতালেই ২৫ ফেব্রুয়ারী বেলা সাড়ে ১১টায় আবদুস সালাম মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। ২৬ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৪টার দিকে সালামের লাশ ঢাকাস্থ আজিমপুর গোরস্থানে নেওয়া হয়। সেখানে সালামের বাবা ফাজিল মিয়া, ভাতিজা মকবুল, জেঠাতো ভাই হাবিব উল্লাহসহ শত শত ছাত্র-জনতার উপস্থিতিতে সালামের জানাজা শেষে দাফন করা হয়। ২০০০ সালে বাংলাদেশ সরকার ভাষা শহীদ আবদুস সালামকে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করেন।
তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট ও উইকিপিডিয়া