
বিছানায় শুয়েই রুক্ষ গলায় আমি বললাম, কণা, আপনি আমার জন্য অনেক কিছু করেছেন থ্যাংক্স। আপনার সাথে আমার কিছু জরুরী কথা আছে, আমার আরো আগেই বলা উচিৎ ছিল। তবে তার আগে আমি বাবার সাথে কথা বলার জন্য একটু সময় চাই। বাবা ভ্রু কুচঁকে বললেন, তুমি আগে সুস্থ হও, তারপর আমরা কথা বলি।বাবা তোমার সাথে কথা বললেই সুস্থ হয়ে যাবো। কণা আপনি প্লিজ, ড্রইং রুমে একটু অপেক্ষা করুন। কণার মুখ বর্ণ তখন রক্তিম, সম্ভবতঃ আমার কথায় অপমানিত বোধ করেছে।কণা রুম থেকে বের হবার পর আমি বাবাকে কাছে আসার জন্য রিকোয়েস্ট করলাম, “বাবা, তোমার মনে আছে ছোটবেলায় আমি শুধু মেয়েদের ফ্রক পড়তে চাইতাম বলে একবার তুমি আমাকে ওয়াশরুমে আটকে রেখেছিলে? আচ্ছা তোমার তো নিশ্চয়ই মনে আছে, স্কুলে নাচের প্রোগ্রামে আমি সব সময় মেয়েদের ভুমিকায় নাচতাম বলে তুমি আমাকে কো-এডুকেশানে দিয়েছিলে?বাবা এই ব্যাপার গুলো নিয়ে আমি কখনোই তোমাকে প্রশ্নের মুখোমুখি দাড়া করাই নি, কারন সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত আমি বিশ্বাস করে গেছি তুমি সবসময় আমার মংগল চেয়েছ, এবং অবশ্যই তুমি আমাকে সব চেয়ে ভালবেসেছ।কিন্তু বাবা আজ একটা জটিল অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছি আমি তুমি এবং কণা। আমি ভালভাবেই বুঝতে পেরেছি তুমি কণার সামনে আমাকে একজন মহাপুরুষ হিসাবে দাড়ঁ করিয়েছ, এবং খুব সম্ভবত আমার সাথে বিয়ের ব্যাপারেও ওকে প্রচ্ছন্ন স্বপ্ন দেখিয়েছ। বাবা -আমি জানতে চাইছি কেন, তুমি জেনে শুনে বুঝে কণার সাথে এমন একটা খেলা খেললে, কণার বান্ধবী সোমার কাছ থেকে জেনেছি তুমি কণার বাবা মায়ের সাথেও এই ব্যাপারে কিছু কথা এগিয়ে রেখেছ, “বাবা তুমি কী তাদের আমার সম্পর্কে বলেছ সব? বাবা প্লিজ চুপ করে থাকবে না, আমি গ্লানি অনুভব করছি। ” অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে বাবা বললেন- “অয়ন আমি তোমাকে সংসারি দেখতে চাই, আমি সবসময় চেয়েছি তোমার একটা নরমাল লাইফ হোক, আর দশটা যুবকের মত তোমার সুখের সংসার হোক। আমি ছোট বেলা থেকেই তোমাকে একটা পারফেক্ট জীবন দেয়ার ট্রাই করেছি, আমার সমস্ত সৃষ্টিশীলতা আমি ব্যয় করেছি তোমাকে স্বাভাবিক জীবনে আনতে। তুমি যখন নাচের প্রতি অনুরক্ত হচ্ছিলে, আমি তোমাকে সেখান থেকে বের করে এনে ছবি আকাঁ শিখিয়েছি, মেয়েদের পোষাক পড়তে চাওয়াটা কতখানি অস্বাভাবিক, সেটা তোমাকে বুঝাতে চেয়েছি, তুমি যেন হীনমন্যতায় না ভোগ তা-ই তোমাকে সমবয়সী কারো সাথে খুব বেশি মিশতে দেইনি। এ লেভেলস পর্যন্ত তোমার বন্ধু ছিল তারাই যাদের কাছে তুমি কেবলই একটা মাইনর, অর্থাৎ তোমাকে তারা খুব একটা গুরুত্ব দিবেনা বলতে পারো খেয়ালই করবে না। আর তোমার স্কুলে আমি মোটা টাকা ডোনেশান দিয়ে গেছি, যেন স্কুলে কোথাও তোমার কোন সমস্যা না হয়। কণাকে আমি যখন দেখি, আমার ওকে খুব পছন্দ হয় তোমার জন্য। আমি ওর বাবা মায়ের সাথে দেখা করতে চাই-যেহেতু আমি বাসা থেকে বের হতে পারি না, তাই তারাই এসেছিলেন, বলতে পারো আমি প্রচ্ছন্নভাবে চেয়েছি তারা তোমার সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থান জানুক। আমার প্ল্যান এখানেও সফল। কণার নিম্ন মধ্যবিত্ত বাবা-মা এমনিতেই ৩ কন্যা দায়গ্রস্থ, তার উপর তাদের এক মাত্র ছেলে ড্রাগ এডিকটেড। তারা তোমাকে জামাই হিসাবে পেলে বর্তে যাবে। এবার বলি কণার প্রসংগে, আমি আসলে চেয়েছিলাম তোমার সাথে ওর বন্ধুত্ব হোক, পরবর্তীতে আমি তোমাকে বিয়েতে কনভিন্স করব, আর কণাকে আমি তোমার ব্যাপারে এক মোহাচ্ছন্ন রূপকথায় রেখেছি, যেখানে তুমি এক রাজপুত্র যার সবটাই কেবল পজিটিভ গুনাবলী। সে তোমাকে নিয়ে কল্পনার জগৎ সাজিয়েছে। সে খুব ছটফটে, তাই হয়তো বোকার মত তোমাকে প্রপোজ করে বসেছে। আমার প্ল্যান টা এই জায়গায় মার খেয়েছে, আমি চেয়েছিলাম আমি তোমাকে আগে সব বলব এবং কণাকেও মানসিক ভাবে প্রস্তুত করব'”বাবা, তুমি যা বলছ সেটা কতটা অসম্ভব তুমি ভাল করেই জানো, আমার অক্ষমতা আমাকে কখনোই কোন নারী সংগলাভে সায় দেয় না বাবা। আমি চাই তুমি কণাকে সব বল, যদি তুমি না বলতে পারো আমি বলি” “অয়ন, তুমি নিশ্চয়ই একা থাকবেনা সারাজীবন, আমি তো এখনই অসুস্থ, তোমাকে একা রেখে আমি মরেও শান্তি পাব না বাবা””বাবা, আমার একা থাকাটাই নিয়তি, আমি আমার স্বার্থের জন্য কণার জীবন নষ্ট করতে পারিনা””নষ্ট কেন হবে, কণা তোমাকে ভালবাসে তোমাকে পাশে পেলে সে ধন্য হয়ে যাবে””বাবা কী অসম্ভব সম্ভাবনার কথা তুমি বলছ, বোঝ! আমি কখনো তাকে সন্তুষ্ট করতে পারবো না, আমাকে বিয়ে করলে ও মা হতে পারবেনা। বাবা আমি চাই না এইসব ব্যাপার আর এক পা আগাক” “তুমি প্লিজ আজই সব বন্ধ করবে অথবা আমি আমার নিয়তি মেনে নিয়ে নিরুদ্দেশ যাত্রা করব” বাবা বেশ কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বললেন “বেশ, আমি কণার ব্যাপার টা দেখছি, কিন্তু তুমি আমাকে কথা দিবে যে, তুমি কণাকে কিছুই বলবে না, আমি চাইনা এত বছর ধরে প্ল্যান করা সব কিছু ভেস্তে যাক, আমি চাই তুমি বলো তুমি অন্য কাউকে ভালবাসো।“ অয়ন বলল- বাবা মিথ্যে বলতে বলতে আমি টায়ার্ড হয়ে পড়েছি, আমি আর পারবো না। আমি আর অভিনয় করতে পারছিনা বাবা। বাবা- অয়ন, তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আমি আমার একটা জীবন স্যাক্রিফাইস করে দিয়েছি, সেটা কেন বুঝছ না!!তুমি স্যাক্রিফাইস করেছ নাকি আমার মা কেই স্যাক্রিফাইস করে দিয়েছ!!অয়ন, তুমি কী উল্টাপালটা বলতেছ আমি কিছুই বুঝছিনা, এনি ওয়ে কণা বাইরে বসে আছে, আমি ওর সাথে কথা বলছি নাকি তুমি বলবে?বাবা আমি কণাকে সত্যি টা বলতে চাই অয়ন প্লিজ তুমি শুধু ওকে বিয়ে করবেনা, তোমার অন্য কোথাও প্রেম আছে জানিয়ে দাও বাকি টা আমি দেখছি। বাবার অবাধ্য আমি কখনোই হই নি, আজ ও হতে পারিনি। নির্জলা মিথ্যা কথা বলতে হলো কণাকে, আমি অন্য কাউকে ভালবাসি তার সাথে বাকি জীবন কাটাতে চাই। কণা অবিশ্বাসের দৃষ্টীতে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলো। আমি বললাম- আমাকে ক্ষমা করো, কণা বলল- কেন? জানিনা। বলে আমি রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম। কণাকে বাবা আর কি বলেছিলেন আমি জানিনা। কিন্তু আমি কিছুটা নিশ্চিন্ত বোধ করছিলাম, আপাতত কণার ব্যাপারটা সামলানো গেছে। কণা যথারীতি আমাদের বাসায় আসতো বাবাকে থেরাপি দিতে, আমি কখনোই ওর সামনে যেতাম না লজ্জা আর গ্লানিতে। সুস্থ হয়ে আমি অফিস শুরু করলাম। আবার ব্যাস্ততা, আবার প্রথম থেকে শুরু করা। এর মাঝে আমার মা এর ব্যাপারে জানতে আমি অনেক কিছু ভাবলাম, কিন্তু কোন প্ল্যান ই বেশিদূর এগোতে পারলাম না, রেহানা আন্টি আমার কাছ থেকে পালিয়ে বেড়ান, আর হাসেম মামা তো আজীবন বাবার পোষ্য, উনি আমাকে মুখস্ত বুলি আওড়িয়ে যায়। কিন্তু একটা অদ্ভুত ঘটনা আমাকে একটা সূত্র এনে দিল সামনে, বাবা অসুস্থ হওয়ায় আমরা বেশ কিছু বায়ারের অর্ডার হারিয়েছিলাম, ব্যাংকের কাছে প্রচুর পরিমান দেনা হয়ে গিয়েছিল। আমি কিছু প্রোপ্রার্টি বিক্রি করে প্রাথমিক ধাক্কা সামলানোর প্ল্যান করলাম। বাবার সাথে পরিকল্পনার আগে আমি আমাদের প্রোপার্টিগুলোর লিগ্যাল পেপার নিয়ে বসলাম, আমাদের উকিল ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ চাচার সাথে আমি বসতে চাইছিলাম, উনি আমাদের পুরানো ল’ইয়ার। কী মনে করে জানি আমি আমাদের জুনিয়র লিগ্যাল কর্মকর্তা ফারিয়ার সাথে আগে কথা বলতে চাইলাম। ফারিয়া মেয়ে টা অসম্ভব সুন্দরী, অফিসের সব ইয়াং ছেলেদের ক্র্যাশ সে আমি বুঝতে পেরেছি, যাই হোক। ফারিয়া বছর দুয়েক হলো জয়েন করেছে। আব্দুল্লাহ চাচার বয়স হয়ে যাওয়াও সে ই আস্তে আস্তে বুঝে নিচ্ছে আমাদের লিগ্যাল কাজ গুলো। ফারিয়া জানালো আমাদের বিরাট একটা প্রোপার্টি আছে গাজীপুরে। যেটা আসলে অনেক বছর ধরে পরেই আছে, আর একটু রিমোট অঞ্চলে হওয়াতে সেটা কোন কাজে ও লাগেনি, ফ্যাক্টরি করার জন্য বাবা কিনেছিলেন বলে ফারিয়ার ধারনা, বিশেষ কিছু সে ও জানেনা। ফাইলগুলো আনতে বললাম, অনেক পুরানো ফাইল। ফাইল খুলে আমি একটা ধাক্কা খেলাম জমিটার মালিক বাবা না, রুহুল আমিন নামের কেউ। তাহলে এই প্রোপার্টি আমাদের নামে কেন? আমি ফারিয়াকে জিজ্ঞেস করলাম, ফারিয়া কিছুই জানেনা। ফাইল ঘেটে দেখলাম, এই প্রোপার্টি টাই আমাদের সব চেয়ে পুরাতন, প্রাথমিক লোন ও নেয়া হয়েছিল এই প্রোপার্টির এগেইন্সটে। পরে বাবাকে পাওয়ার অফ এটর্নি দেয়া হয়েছে। আর লোন টা নেয়া হয়েছিল, আমার জন্মের চার মাস পরে। পরবর্তীতে এই প্রোপার্টি আমাদের কোম্পানির নামে ওয়াকফ করে দিয়েছেন রুহুল আমিন সাহেব। বিষয়টা আমার কাছে ব্যাপক ঘোর প্যাচ লাগায় আমি ভাবছিলাম বাবার সাথে কথা বলব কিনা। পরবর্তীতে আমি ফারিয়াকে দিয়ে আব্দুল্লাহ সাহেবের কাছ থেকে কথা বের করতে বললাম। ফারিয়াকে বারেবার বলে দিলাম আমি জানতে চেয়েছি সে যেন উনাকে বুঝতে না দেয়। ফারিয়া যথেষ্ট স্মার্ট আর চটপটে আছে। পরদিন ই আমার জন্য বিশাল এক সারপ্রাইজ নিয়ে হাজির। রুহুল আমিন সাহেব আমার বাবার শ্বশুর, বাবাকে নাকি বিয়েতে জমিটা দিয়েছিল ব্যাবসা করার জন্য। মানে আমার নানার কাছ থেকে যৌতুক নিয়েছিলেন বাবা, উফফ আমার আজীবন মহাপুরুষ ভেবে আসা বাবা আর কত শত ক্রাইম করেছেন কে জানে। আমি আবারো আমার মায়ের জন্য অসম্ভব কষ্ট বোধ করতে থাকলাম। আমি সিধান্ত নিলাম বাবাকে কিছু না জানিয়ে আমি আরো তথ্য বের করব, আর এই কাজে অবশ্যই আমার প্রধান সহকারি হতে হবে ফারিয়াকে।ফারিয়া কোন বিচিত্র কারনে আমাকে অসম্ভব ভয় পায়, আমি তার ভয় কাটানোর জন্য ট্রাই করলাম। তার জন্মদিনের আয়োজন করালাম অফিসে। তার সাথে মাঝে মাঝে টুকটাক গল্প করতে শুরু করলাম। জানা গেলো সে আমার দুই ব্যাচ জুনিয়র ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, এই সূত্রে সে আমার সাথে আগের চেয়ে সহজ আজ সপ্রতিভ হলো। আমি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ফারিয়ার গল্প শুনতাম, তার সাথে সহজ হওয়াটা দরকার ছিল আমার উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য। ফারিয়ার বয় ফ্রেন্ড আছে জানলাম, ছেলেটি অন্য ধর্মের বলে বাসায় কিছু সমস্যা। কিছুদিনের মধ্যেই ছেলেটি দেশের বাইরে যাবে পড়তে, সে বিয়ে করে তার সাথে বাইরে চলে যেতে চায় জানলাম। ফারিয়ার সাথে আমার একটা মিষ্টি বন্ধুত্ব হল। সে আমাকে ইদানিং অয়ন ভাইয়া ডাকে, সে বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। বাবা-মাকেও খুব ভাল বাসে এদিকে প্রেমিককেও। বিরাট টানাপোড়নে আছে জানায়। আমি তাকে একটু একটু করে আমার কথা বললাম। আমার মা নেই ছোটবেলা থেকে শুনে কেঁদে ফেলল বেচারি, একদিন সুযোগ বুঝে তাকে আমি আবদুল্লাহ চাচার কাছ থেকে আমাদের কোম্পনির ব্যাপারে আর রুহুল আমিন এর পরিবারেরো জানতে বললাম।তাকে কথা দিলাম, তার প্রেমিকের ব্যাপারে তার বাবা কে কনভিন্স করার সব ট্রাই আমি করব, যদি না পারি তাকে বিদেশে পাঠানোর সব দায়িত্ব আমার। ফারিয়া আমার কাছ থেকে কিছু সময় চাইল।অফিসের নানা ঝামেলায় বাসায় আসলে আর খুব একটা অবসর সময় পাইনা। কণা তার ডিউটি করতে বাসায় আসে, ভুলেও আমার সামনে পড়ে গেলে চোখ ফিরিয়ে চলে যায়, আগের হাসিখুশি ভাবটা আর নাই বাবার সাথে, হাসেম চাচার কাছ থেকে জানলাম, কণার বাবা খুব অসুস্থ। পরিবার টি নানান ক্রাইসিসের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, বাবা অনেক হেল্প করতে চাইছেন কিন্তু কণা অনড়, নিবেনা সে কিছুই তার নির্ধারিত চার্জ ছাড়া। কণার ভাইকে বাবা প্রতিষ্ঠিত করার কথাও বলেছিলেন নাকি, কণা রাজি হয় নি। উলটো নাকি বাবাকে বলেছে এইধরনের কথা বললে, সে আর বাসায় আসবেনা। আমার খুব খারাপ লাগলো শুনে, কিন্তু আমার সাথে বিয়ে হলে এর চেয়ে খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে যেত সে। এখন হয়তো আমাকে ঘৃণা করে, সত্যি টা জানলে করুনা করত।একদিন সকালে আমি ছাদে বসে কফি খাচ্ছিলাম, দেখি কণা নিচে সাব্বিরের সাথে গল্প করছে, সাব্বিরকে খুব হাসি খুশি দেখাচ্ছিল। কণাও যথারীতি সাবলীল। আমার মাথায় একটা ভিন্ন পরিকল্পনা এলো। কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন করতে হলে আমাকে সাব্বিরের কাছাকাছি যেতে হবে, বাবা সেটা সহজে হতে দিবেন না। আমি সু্যোগ খুজতে লাগলাম। কিন্তু এত খারাপ ভাবে সুযোগ আসবে আমি চাই নি, সন্ধ্যায় এম বি এ ক্লাস থেকে ফেরার সময় মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় পড়ে সাব্বির, কয়েকদিন হাসপাতালে থাকাটা জরুরি হয়ে পড়ে, আমি প্রতিদিন ওকে দেখতে যেতাম সন্ধ্যার পর আর অনেক সময় কাটাতাম। সাব্বিরকে বললাম আচ্ছা সাব্বির আমাকে তুমি ভাই ভাবতে পারোনা, সব সময় এমন আড়ষ্ট কেন থাকো! আমি কী কখনো তোমার সাথে খারাপ ব্যাবহার করেছি?সাব্বিরের চোখে পানি এসে পড়লো শুনে- স্যার আপনি সব জানেন না, সব জানলে আমাকে ভাই ভাববেন না আর, আমাকে শুধু ঘৃণা করবেন। আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম-সাব্বির চোখ নামিয়ে নিল, আমি বললাম কি বলতে চাইছ? আমি সাব্বিরের হাত ধরলাম। ‘সাব্বির আমাকে নিশ্চিন্তে বলতে পারো’ স্যার, আমার মা আপনার বাবার রক্ষিতা এটা আপনি বোঝেন না? সবাই ভাবে আমি জানিনা, কিন্তু সেই ছোটবেলা থেকেই এটা বুঝতাম, এমন কি একবার আমি তাদের কে খুব অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখেও ফেলি।সাব্বিরের কথা শুনে আমি হাসবো নাকি কাদবো বুঝিনা। তবু বললাম, তুমি জিজ্ঞেস করোনাই। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম আব্বাকে(হাসেম), সে বলছে আমি ভুল দেখেছি, আর এটা নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে আমাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিবে, আমি অনেকবার রাগ করে বাসা থেকে বের হয়ে গেছি আপনি জানেন না, বড় বাবা আমাকে আবার নিয়ে আসছে, ছোটবেলায় দামি খেলনা কিনে দিছে, বড় হবার পড় বড় বড় সুযোগ দিছে, ভাল জায়গায় পড়াশোনা, দামি জামা কাপড়, বাইক সব দিছে। স্যার আমি তো ছোটলোকের বাচ্চা, তাই লোভ সামলাতে পারিনাই। আপনার চোখে চোখ মেলাতে পারিনি কখনো। নিজেকে ভীষন ছোট লাগত, কিভাবে আপনাকে ভাই ভাবার সাহস পাই। সেই ছোটবেলায় ঝাপসা সেই দৃশ্য মনে পড়ে যখন আমার মায়ের কারনেই আপনার মা ঘর ছেড়েছিল। কিচ্ছু মনে নাই আর, আব্বা মাকে খুব মেরেছিল এইজন্য। পরে তো দেখলাম আমরা আপনাদের বাড়িতে চিরতরে উঠে এসেছি। বিশ্বাস করেন স্যার আমি আমার মায়ের সাথে অনেকবছর ধরে কথা বলি না ঠিক মতো।।“ আরো অনেক কিছু বলছিল সে নিজের কথা কিন্তু সেসব শোনায় মন নেই আমার। “কী আমার মা বাড়ি ছেড়েছিল মানে কি? মারা যায় নি উনি? কি জানো ঠিক মতো বল”ভীষন উত্তেজিত হয়ে পড়লাম আমি। আমার কন্ঠে প্রচন্ড কৌতুহল। ‘স্যার, আমি কিছুই জানি না আর, শুধু মনে আছে অনেক ছোটবেলায় আমরা আপনাদের বাসায় এসেছিলাম, বড় বাবা আমাকে খুব আদর করছিল, ‘আর তারপর একদিন দেখি আপনার মা কি নিয়ে যেন রাগারাগি করে চলে গেল।‘ আমার মা বেঁচে আছেন তাহলে!! আমার জন্মের সময় তার মৃত্যু হয় নি তাহলে!!!আল্লাহই জানে আর কি কি রহস্য যে আমাকে উন্মোচন করতে হবে। আমার মনে হয়, আমাদের প্রোপার্টির মালিক পর্যন্ত পৌছতে পারলে আমি অনেক রহস্যের জট খুলতে পারব।সাব্বির কী আমাকে মা পর্যন্ত পৌছাতে সাহায্য করতে পারবে?? আমি কী ওকে জানাবো ওর আসল পিতৃ পরিচয়! নাকি আমার মায়ের খোঁজ না পাওয়া পর্যন্ত ওকে না জানানোই ভাল হবে?গত কয়েক মাসের ঘটনা প্রবাহ আমাকে আগের চেয়ে অনেকবেশি বাস্তববাদী করে দিয়েছে, আর তাই আমি ওকে কিছু বলার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসলাম। ওকে শুধু বললাম, ঠিক আছে আমাকে ভাই ডাকতে হবে না তোমার স্যার ই ডেকো। কিন্তু সাব্বির আমাকে বন্ধু ভেবো তুমি বলে হাতে হাত চেপে শুকনো হাসি দিলাম আমি। এমন সময় ফোনের ভাইব্রেশানে সম্বিত ফিরে পেলাম আমি, ফারিয়া ফোন করেছে আমায়- ভাইয়া রুহুল আমিন সাহেবের খোঁজ পাওয়া গেছে, আর আপনাদের সব প্রোপার্টি আর কোম্পানির ফাইল ও আমি হাতে পেয়েছি। কাল সকালে অফিসে সকাল সকাল চলে আসবেন।