প্রথম প্রেম শেষ ভালবাসা (পর্ব ৪)

ZZgQOQpIWdPUbgwNQwQ1ZGlC7bJIuWDMJq4ME22hgtFQiiU2l_FfFmhWIb+OqzFP6E7yZlEy8GK+FTEHZZApwsweKIHuByT7SQ+i39Osva7yQuvQJlM1VRPVTtZVF79Mc3CvC_WbEdawPG9Lrpw_D94jXk2Vk6GJGrmWEGoDvxXEAiIFmJzTE copy

ডাইনিং টেবিলে আমি আর রেহানা আন্টি বসে যখন কথা বলছিলাম, এতটাই মগ্ন হয়ে গিয়েছিলাম আমরা যে খেয়াল ই করিনি, খুব দ্রুত কেউ একজন আমার পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে। চমকে উঠলাম আমি আন্টির কন্ঠে উষ্মা শুনে- তুমি এখানে কী কর!!

তাইলে তুই অয়ন বাবারে সব কইয়া দিছস!!

রেহানা আন্টি বলল- ওর তো জানতে হতই , আর কতদিন তোমরা ওরে অন্ধকারে রাখবা আর আমারে কষ্ট দিবা!!

হাসেম মামা চীৎকার করে উঠে, আমি তোরে এইজন্যই এই বাড়ীতে রাখতে চাইনাই কোনদিন। হাসেম মামার চীৎকারেই কিনা জানিনা, বাবার ঘুম ভেঙ্গে যায়,’হাসেম, হাসেম! কি হয়েছে??’ রেহানা আন্টি আমাকে যেতে না করে, উনারা দু’জন এখন দৌড়ে বাবার রুমে যায়, বাবা ওয়াশ রুমে যায়। রেহানা আণ্টি তাকে হেল্প করে। আমি দুর থেকে দেখি কী সস্নেহে বাবাকে রেহানা আন্টি ওয়াশরুমে নিয়ে যায়। আমি কিছুটা এগিয়ে বাবার ঘরে উঁকি মারি, আমার সুদর্শন বাবা ওজন হারিয়ে ক্ষীনকায় হয়ে গেছে, আমাকে দেখে মিষ্টি করে হেসে কাছে ডাকলো। আমি এগিয়ে গেলে বাবা হাত বাড়িয়ে আমাকে কাছে ডেকে নিলেন- ঘুম আসছে না অয়ন?? আমি মিথ্যে করে বললাম, পানি খেতে উঠে তোমার রুমে আলো দেখে আসলাম বাবা।

বাবা বললেন অয়ন আমার তোমার সাথে অনেক কথা জমে আছে। আমি বললাম আমারো। কাল সকালে আমরা এক সাথে ব্রেকফাস্ট করবো বাবা, তখন কথা হবে। তুমি কোথাও যেও না।

সেদিন রাতে আমার আর ঘুম হলো না, খুব ভোরে আমি ছাদে গেলাম, ছাদে খুব সুন্দর বাগান, আমাদের খালি ছাদে এই প্রথম আমি এত সুন্দর বাগান দেখলাম। বহুদিন পর আমি ভোর হওয়া দেখলাম, আমার মাথায় তখন রাজ্যের প্রশ্ন। আমার মা আর আমি কী বাবার জীবনের অনাহুত অতিথি, নাকি বাবা আজীবন আমাকে করুনা করে গেছেন। আমার মায়ের মৃত্যু নিয়ে কী আসলেই কোন রহস্য আছে? আমার মায়ের কি স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে নাকি বাবা তার প্রথম প্রেম কে প্রতিষ্ঠিত করতে আমার মা কে… না না আমি আসলে কী আজেবাজে কথা ভাবছি,আমার শৈশব কৈশোরে বাবা আমাকে কী তীব্র ভালবাসায় ই না বড় করেছেন।

আমার খুব চায়ের তৃষ্ণা পাচ্ছিল, ভাবছি নিচে গিয়ে এক কাপ চা কিংবা কফি কিছু আনবো কিনা। কিন্তু নিচে যেতেও ইচ্ছা করছেনা। নিচে নামবো কি নামবো না ভাবছি এমন সময় সিগারেট হাতে সাব্বির উঠে এলো ছাদে। আমাকে দেখে সাব্বির বেশ অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো, নিচে নেমে যেতে চাইলো- আমি ডাকলাম,’ সাব্বির কী করছো আজকাল?” স্যার আমি বড় বাবার সাথে থাকি, আমার দোকান টা ভাড়া দিয়ে দিয়েছি, এম বি এ তে ভর্তি হয়েছি।

‘বাহ, তাহলে তো তুমি বেশ ব্যাস্ত, অফিসে যাওনা?’

“স্যার, বড় বাবা আমাকে অফিসে যেতে না করেছে, আম্মু বলেছে এম বি এ শেষ করলে বড় বাবাকে বলবে অফিসে জবের ব্যাবস্থা করতে’

‘ সাব্বির, তুমি কী খুব গাছ ভালবাসো তাই না??

লজ্জা পেয়ে সাব্বির বলল- স্যার আপনি বললে আমি সব টব সরিয়ে ফেলব

আরে না না , আমার তো খুব ভাল লাগছে, সুন্দর হয়েছে।

সাব্বির, তোমার বন্ধু আছে??

স্যার আমি নিচে যাই, বলে দ্রুতই নিচে নামলো সাব্বির, সম্ভবত আমার সাথে ছোটবেলায় খেলতে চাওয়ার অপরাধে প্রাপ্ত শাস্তির স্মৃতি এখনো ওর মন থেক মুছে যায় নাই। ‘সাব্বির কাউকে আমাকে এক কাপ চা পাঠাতে বলো না প্লিজ’।

আমাকে অবাক করে দিয়ে চা নিয়ে আসলেন রেহানা আন্টি, অয়ন বাবা, হাসেমকে তুমি কখনো কিছু জিজ্ঞেস করোনা, ও তোমাকে মিস গাইড করবে। 

ও আপনি বুঝি আমাকে খুব গাইড করছেন!! কেন জানিনা প্রচন্ড রাগ লাগছিল আমার ।

“আচ্ছা আপনি কী আমাকে আমার মায়ের কথা বলবেন- কিভাবে আপনি আমার মাকে সরিয়ে দিয়ে আমার বাবার জীবনে এলেন আবার’ রেহানা আন্টী বলতে শুরু করলো’ অয়ন বাবা তোমার মা কে আমি কখনোই দেখিনি, আর তোমার মায়ের ব্যাপারে আমি কিছুই জানিনা’ তোমাকে আমি যা বলেছি, সবই আমার জীবন কাহিনী সেখানে তোমার মায়ের কোন অংশ নেই বা তোমার মা ও সেখানে আমার কোন প্রতিদ্বন্দ্বী নয়’

‘তোমার বাবা তোমাকে বলেছেন ই যে তোমার মা মারা গেছেন’ ‘ আর কিছু আমি জানিনা’ বলে দ্রুত চলে গেলেন তিনি।

বাবা সবসময় দেরি করে ঘুম থেকে উঠেন, কিন্তু এখন অসুস্থতার কারনে ঘড়ি ধরা রুটিন তার, বাবার ফিজিও থেরাপিস্ট আসেন সকাল সাতটায়। আমি ছাদ থেকে দেখলাম শ্যামলা এক তরুনী থেরাপিস্ট আসলেন আমাদের গাড়ি করে, বাবাকে থেরাপি দিতে। আমি নিচে নামলাম, বাবাকে গুড মর্নিং বলতে। বাবা আমাকে দেখে তার থেরাপিস্ট সুমাইয়ার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। বাবা খুব আগ্রহ করে বললেন- দেখ সুমাইয়া আমার ছেলে-অয়ন, খুব হ্যান্ডসাম না?? আমি অসুস্থ শুনে পড়াশোনা বাদ দিয়ে চলে এসেছে। মনে হলো বাবা খুব খুশি হয়েছেন আমি চলে আসাতে।

‘গুড মর্নিং সুমাইয়া’- হাত নেড়ে বললাম আমি

অয়ন সাহেব গত সাতদিন ধরে আমি আপনার প্রশংসা শুনতে শুনতে ক্লান্ত হয়ে হয়ে পড়েছি- বলেই হা হা করে হেসে ফেলল । কী সুন্দর রিনরিনে হাসি সুমাইয়ার। আচ্ছা অয়ন সাহেব আমার ডাক নাম কনা, আপনি আমাকে কনা ও ডাকতে পারেন। আমি আংকেল কে অনেকবার বলেছি উনি কেন যেন কষ্ট করে সুমাইয়াই ডাকেন আমাকে। মেয়েদের সাথে খুব একটা না মেশায় কনার সাবলীলতায় আমি কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে গেলাম।

‘ওকে মিস কনা, আপনি বাবাকে এক্সারসাইজ করান, আমি ফ্রেশ হই’ বলে আমার রুমে চলে গেলাম। ব্রেকফাস্টে বসে দেখি আজ আমার ফেভারিট সব ব্রেকফাস্টের আয়োজন করেছেন রেহানা আন্টি, অকারনে আমার সাথে খাতির দিতে চাচ্ছেন বলে আমার মনে হল, আরো বিরক্তি বাড়লো। তবু বাবার জন্য আগ্রহ দেখে খেতে বসে বুঝলাম আমি খুব ক্ষুধার্ত ছিলাম।

“বাবা আমার কিছু কথা ছিল তোমার সাথে!”

জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে বাবা তাকালেন।

বাবা আমি মায়ের ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞাস্য ছিল।”

বাবা এবার আমাকে বললেন -আমার মনে হয় এর চেয়ে জরুরী কথা আমার তোমার সাথে আছে”

“কিন্তু বাবা আমি মনে করি মায়ের ব্যাপারে জানার অধিকার আমার আছে”

“তোমার জন্মের সময় মা হারিয়েছ, এর বেশি কিছু জানার দরকার নেই” চিবিয়ে চিবিয়ে এই কথা বললেন বাবা, তার মুখের বর্ণ তখন রক্তিম, হঠাৎই ঘামাতে শুরু করলেন বাবা, আমি ভয় পেয়ে হাসেম মামাকে ডাকলাম আর উঠে গিয়ে বাবার পাশে গিয়ে দাড়ালাম-খারাপ লাগছে বাবা?

হাসেম মামা দৌড়ে ওষুধ নিয়ে বাবার জিহবার নিচে দিলেন, স্যার আপনি শান্ত হন। ততক্ষণে দৃশ্যপটে মূল ক্রিমিনাল রেহানা আন্টি হাজির, এসেই আহ্লাদ দেখানো শুরু করলো, উফফ কি হয়েছে তোমার। প্রেশার বেড়েছে বোধ হয় আবার”। আমার দিকে তাকিয়ে একটা রাগী দৃষ্টি দিল “অয়ন, বাবার শরীর কিন্তু খুবই খারাপ, আশা করি বুঝতে পারছ” না চাইতেও আমার ঠোটেঁ একটা তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটল তার কথায়। ওষুধটা নিতেই বাবা হয়ত একটু ভাল ফিল করল। আমি বাবার কাধেঁ হাত রাখলাম-‘অয়ন, আমি চাই তুমি আমাদের ব্যাবসা টা বুঝে নাও, আমাদের জি এম তোমাকে সব বুঝিয়ে দিবেন’

‘আমি’!! একপ্রকার চীৎকার করেই উঠলাম আমি। ‘বাবা আমি ব্যাবসা বুঝিনা, আমি পারবো না’ তুমি লোক রাখো।

‘ অয়ন, এই ব্যাবসা তোমার, তোমাকেই বুঝে নিতে হবে’ বাবার গলায় আদেশ।

বাবা আমি আমার মাস্টার্স শেষ করে, পি এইচ ডিতে এনরোল করবো ভাবছি। আমার প্রিয় বিষয় কোয়ান্টাম ফিজিক্স, আমি ব্যাবসা করলে তুমি শুধু লস ই খাবে’

‘অয়ন, আমি চারুকলার ছাত্র ছিলাম, জীবনে আমি একজন আর্টিস্ট হতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ব্যাবসায়ী হিসাবেই আমি অনেক বেশি সফল’ তুমিও পারবে।বাবা বেশ রাগ্বত স্বরে বললেন।

তুমি রেডি হয়ে আসো, অফিসের কয়েকজন উপরের লেভেলের কর্মকর্তা আসবেন তোমার সাথে ফরমাল ই পরিচিত হতে। অবশ্যই তুমি স্যুট পড়ে আসবে।

অসুস্থ আর দৃঢ় গলায় বলায় বাবার কথা মেনে আমি বাবার স্টাফদের সাথে কথা বললাম।   উনাদের অনেকেই আমাদের কোম্পানিতে একদম শুরু থেকেই আছেন।

পরবর্তী কয়েকদিন বাবার ব্যাবসা বুঝে নিতে আমি রীতিমতো গলদঘর্ম হয়ে গেলাম। সকালে ব্রেকফাস্ট এর পর  থেকে শুরু, মাঝরাতে ফিরতাম আমি। আস্তে আস্তে বাবার অফিসে নিজেকে অভ্যস্ত করে নিলাম আমি। বাবা আগের চেয়ে একটু সুস্থ। ইদানীং হাটতেঁ পারছেন একটু নিজে নিজে। মাঝে মাঝে সকালে ব্রেকফাস্ট টেবিলে কনার সাথে দেখা হয়। বাবার সাথে কনার খুনসুটি গুলো ভীষন মজার ছিল, আমিও যোগ দিতাম না যে তা না। তবে কণার স্বাভাবিক স্বতঃস্ফূর্ততা দেখতেই আমার খুব ভাল লাগতো। রেহানা আন্টি পারতঃ পক্ষে আমার সামনে আর আসেন না। সাব্বিরের সাথেও আমার খুব একটা দেখা হয় না।

অতিরিক্ত ব্যাস্ততায় হাপিয়ে উঠছিলাম আমি। পালাই পালাই লাগছিল মনে। একদিন রাতে বাবাকে বললাম বাবা আমি কয়দিন ছুটি চাই, বাবা বললেন কেবল তো মাত্র গুছিয়ে এনেছ এখন ই কেন ছুটি! আমি চুপ করে আছি দেখে বললেন ঠিক আছে, কোথাও ঘুরে আসো।

বাবা আমি সাব্বির কে নিয়ে যাই! বাবা ভ্রু কুচকে কিছুক্ষণ  ভেবে বললেন, এক কাজ করো কণাকেও বলে দেখো না তোমাদের সাথে ও ওর বন্ধুদের নিয়ে যাবে কিনা, ও তো প্রায় তোমার সমবয়সী ই।   ক্ণাকে নিয়ে যাওয়ার কথায় আমার একবার মনে হলো বাবার অন্য কোন প্ল্যান নেই তো! পরক্ষণেই সে চিন্তা মন থেকে সরালাম। বাবা আমাকে জানেন, এমন কিছু ভাববেন না। এতটা অবিবেচক তিনি কখনোই হবেনা না। আমি তাই বললাম আচ্ছা জিজ্ঞেস করে দেখব।

কণাকে একবার জিজ্ঞেস করাতেই হৈ হৈ করে উঠলো। ঠিক হলো আমি, কণা, কনার বেস্ট ফ্রেন্ড সোমা  সাজেকে যাবো। আমাদের সাথে যাবে সাব্বির। সাব্বিরকে ড্রাইভার ভাবতে আমার কখনোই ভাল লাগে না। তাই আমি সাথে আমাদের পুরানো ড্রাইভার মন্টু আংকেলকেও নিলাম, অনেক টা বাবার কথা না মেনেই।

সাজেকে যাবার দিন কনা আর সোমার সাথে সোমার কাজিন ইষিতা ও এলো। সারা রাস্তা আমরা অনেক মজা করতে করতে গেলাম। অবশ্য বলা ভাল সব মজাই কনা করলো, সাথে ছোট্ট ইষিতা আমি তো বরাবরই মুখচোরা, তবু মাঝে মাঝে কথা বলে জমানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু সাব্বির একদম চুপ। সাব্বিরের এই অদ্ভুত এটিচিউড দেখে কণা হেসেই কুটিকুটি, সে সাব্বিরের নাম দিয়েছে কাষ্ঠ মানব। একটু পরপর খোঁচাচ্ছে। আমার ভীষন মজা লাগছিল।

সাজেকে আমাদের কটেজ গুলো খুব দূরে দূরে, কিন্তু বাবার নির্দেশেই কিনা জানিনা কোন বিচিত্র কারন সাব্বির আমাকে চোখে চোখে রাখতে লাগলো। আমি ব্যাপারটা ইগ্নোর করে গেলাম। কনাদের কটেজ একটু দূরে। সাজেকের কয়েকটা দিন আমরা খুব মজা করলাম, কনার সাথে বন্ধুত্বটা আমার বেশ জমে উঠলো। সোমার সাথেও বেশ সহজ এক টা সম্পর্ক হলো। সাব্বির ও আগের চেয়ে অনেক সহজ হয়েছে সবার সাথে, শুধু আমার সাথে কিছুতেই  সম্পর্ক টা আর হৃদ্য হলোনা, আমাকে দেখলেই আড়ষ্ট হয়ে যায় সে। কনার সাথে সাব্বির এখন অনেক সাবলীল। মাঝে মাঝে আমি দূর থেকে ওদের দেখি, সারাক্ষন খুনশুটি, সোমা তাদের নাম দিয়েছে টম এন্ড জেরি। সাব্বিরের মাঝে আমি যেন আমার নিজেকেই খুঁজি, ঠিক আমার মতই সে দাঁত দিয়ে নখ কাটে, আমারই মত সবসময় ডার্ক কালার পড়ে, আমার মতই সাহলে তারো চোখের দু’পাশে ভাঁজ পড়ে। আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলি সাব্বিরকে আমার ভাই বলে বুকে জড়িয়ে ধরতে না পারার হতাশায়।

ফেরার আগের দিন বিকালের দিকে আমি হাটতে বের হয়েছিলাম, সোমার একটু জ্বর এসেছিল, আর সাব্বির গাড়ির কিছু কাজ করাতে মন্টু আংকেল কে নিয়ে গ্যারেজে। আমি একাই এগুচ্ছিলাম, কনা বলল চলুন আমি ও যাই। খুব সুন্দর ছিল সেদিনের বিকাল, শেষ বিকালের নরম রোদের কনাকেও খুব সুন্দর লাগছিল, সেই প্রথম আমি খেয়াল করলাম কনা আজ শাড়ি পড়েছে, অন্য সময় তাকে আমি টপ কিংবা কুর্তি টাইপ কিছুতেই দেখি। কিছুদূর পর, কনা বলল- অয়ন সাহেব, আমাকে কেমন দেখাচ্ছে আজ?

 আমি হেসে বললাম- সুন্দর।

‘আচ্ছা, আপনি কী লাভ এট ফার্স্ট সাইটে বিশ্বাস করেন?’

আমি হেসে ফেললাম- কনা আমার জীবনে প্রেম ভালবাসা ব্যাপার গুলো নেই।

‘আপনার হাসি কিন্তু খুব সুন্দর, আপনি চাইলেই সিনেমায় নামতে পারেন’- আমি এবার অট্টহাসি দিলাম

আমি সিরিয়াস, আপনি হাসছেন কেন?

‘অয়ন সাহেব আপনাকে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা কথা আমি আজ বলতে চাই, ভেবেছিলাম ঢাকায় গিয়ে বলব। কিন্তু আপনি নিশ্চয়ই বুঝেছেন আমি স্ট্রেইট ফরোয়ার্ড মানুষ, লুতুপুতু মার্কা ন্যাকামি আমার মাঝে নেই’

কনার কথায় এবার আমার হার্টবিট মিস হলো, আশৈশব তাড়িয়ে বেড়ানোর দ্বিধা কি তবে আজ আমাকে আবার চ্যালেঞ্জ জানালো। কনা কী তবে আজ আমায় আবার অপ্রিয় সত্যের মুখে দাড় করিয়ে দিবে?

আমি বেশ দুরুদুরু মুখে কনার দিকে তাকালাম

‘অয়ন আমি আপনাকে ভালবেসে ফেলেছি, আপনার সাথে প্রথম যেদিন আমার দেখা হয়, বলতে পারেন আমি সেদিনই আমি আপনার প্রেমে পড়েছি, আপনাকে যতই দেখেছি আপনার প্রতি আমার মুগ্ধতা বেড়েছে কেবল’

‘কনা, আপনার ভুল হচ্ছে, আপনার ভালবাসা আমি গ্রহন করতে পারিনা, আপনি কেন ইনফ্যাক্ট কারো ভালবাসাই এমি গ্রহন করতে পারিনা। আপনি আমায় ক্ষমা করুন প্লিজ।’

‘কেন আমি সুন্দরি নই বলে? আমি মধ্যবিত্ত ঘরের বলে, নাকি আপনি কোথাও বাঁধা? আমি যতদূর জানি আপনি সিঙ্গেল, আপনার বাবার ও আমাকে খুব পছন্দ বলেই আমি বুঝি, আপত্তি হবার কথা না। আপনার দ্বিধা কেন তবে?’

‘ সে আমি আপনাকে বোঝাতে পারবোনা, বলতে পারেন জন্ম আমার আজন্ম পাপ’ আমি ভেজা গলায় বললাম, এমন সময় গাড়ীর হর্ণে আমাদের সম্বিত ফিরলো। সাব্বির রা ফিরেছে, রাস্তায় আমাদের দেখতে পেয়ে হর্ণ দিচ্ছিল। ওদের সাথে ফিরে আসলাম আমরা কটেজে। সন্ধ্যা প্রায় গাড় হয়ে আসছে। সেদিন সন্ধ্যায় আমি আর কটেজ থেকে বের হলাম না, ইষিতা আমাকে ডিনারের জন্য ডাকতে এসেছিল, মাথা ব্যাথার অজুহাতে এড়িয়ে গেলাম।’

সারারাত নিজের সাথে অসীম যুদ্ধ আর পরাজয়। কী নিষ্ঠুর বাস্তবতার মুখোমুখি আমি, এভাবে কেউ কখনো আমাকে চাইবে এই সম্ভাবনার ভয়ে, মেয়েদের বরাবর ই এড়িয়ে গেছি আমি। আজ এতদিন পর এভাবে এই কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি আমাকে স্রষ্ঠা করবেন কে জানতো। খুব সকালে রওনা দেয়ার কথা আমাদের। গাড়িতে আমি কোন কথাই বললাম না কারো সাথে, কানে হেড ফোন আর বইয়ের পাতায় মুখ গুঁজে দীর্ঘ ক্লান্তিকর যাত্রা শেষ করলাম আমাদের।

বাড়ী ফিরে জানিনা হঠাৎ কেন যেন জ্বরে পড়ে গেলাম আমি, তীব্র জ্বরে প্রায় দুইদিন আমি অচেতন থাকলাম, তৃতীয়দিন সকালে আমার জ্বর পুরোপুরি সারল আতংক নিয়ে, আমার বিছানার পাশে কনা বসা, আমি আবার চোখ বুঝে ফেললাম, এবার বাবার কন্ঠস্বর, অয়ন কেমন লাগছে বাবা, দেখ কনা সারারাত তোমার পাশে জেগে ছিল। উফফ, কী অদ্ভুত কথা, একটা মেয়ে কেন একটা অজানা ছেলের পাশে সারারাত থাকবে, বাবাই কেন বা এলাউ করলেন তাকে। কিন্তু আমি যা শুনলাম তা আমার ভাবনার চেয়েও ভয়াবহ।

আশৈশব জ্বরের ঘোরে প্রলাপ বকা আমি নাকি দু’দিন শুধু কনার নাম করেছি!!!

ভয়ের শীতল স্রোত বেয়ে চলল আমার মেরুদন্ড দিয়ে। না চাইতেও এক অন্ধকূপে পড়ে গেছি আমি, কিভাবে উদ্ধার পাবো? কনার মুখোমুখি দাড়িয়ে দুনিয়ার সবচেয়ে কঠিনতম সত্য আমি উন্মোচন করবো, করবোই। এবং সেটা আজই। আর বেশিদূর কনার আবেগকে প্রশ্রয় দেয়া যাবেনা। আমার পরিচয় ওকে আজ জানতে হবেই। সে বাবা কষ্ট বা ভয় যা- ই পান না কেন।

মন্তব্য (2)

এক নিঃশ্বাসে পড়লাম। চমৎকার লেখনি। ধন্যবাদ লেখিকাকে।

আপনাকেও ধন্যবাদ। আরও পর্ব আসছে। আমাদের সাথেই থাকুন।

মন্তব্য করুন