দ্য গ্রেট আলেকজান্ডারের জীবনগাঁথা- ৩য় ও শেষ পর্ব

I3A3nkR3ZRmP9bu72qANbsDSV1FcG0XJeKec+1WX1CzRVt4OQBbSuB1traL1bOUFTRQIf8cOCAoL58DUAG3U9P+oSwKMyqbZMZZ_fPACSH64WlCa5t9jNR9WLiESouasI7j0SxtsUgoTC2lOECSks+NZfiw6fDZw8L4Rm2FYVLPeMelz3Hs9of

আলেকজান্ডারের ভারত জয়

পারস্য বিজয়ে পর খ্রিস্টপূর্ব ৩২৭ অব্দে হিন্দুকুশ পর্বত অতিক্রম করে আলেকজান্ডার ভারতবর্ষ আক্রমণ করেন। ভারতবর্ষের ইতিহাসে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা। সে সময় উত্তর-পশ্চিম ভারত অনেকগুলো পরস্পর বিবাদমান ছোট ছোট রাজ্যে বিভক্ত ছিল । প্রথমে আলেকজান্ডার পুষ্কলাবতীর রাজা অষ্টককে, তারপর অশ্বক জাতিকে পরাজিত করেন। অন্যদিকে তক্ষশীলার রাজা তার নিকট স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেন কিন্তু ঝিলামের রাজা পুরু তাঁর বিরুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করে পরাজিত ও বন্দী হন। বন্দী পুরু ও আলেকজান্ডারের ঘটনা তো সর্বজনবিদিত। সবমিলিয়ে ভারতবর্ষে প্রায় ১৯ মাসের মত ছিলেন আলেকজান্ডার।

এদিকে দীর্ঘদিন মাতৃভূমির বাইরে যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত আলেকজান্ডারের সেনাবাহিনী আর সামনে অগ্রসর হতে চাইলনা। তাই বাধ্য হয়ে তিনি ফিরে গেলেন পাঞ্জাব থেকে। ফেরার পথে বিজিত অঞ্চলগুলোতে শাসন পাকাপোক্ত করার জন্য কিছুদিন করে অবস্থান করেন আলেকজান্ডার। পথিমধ্যে ব্যাবিলনে থাকা অবস্থায় নেবুচাদনেজারের প্রাসাদে অকস্মাৎ মৃত্যুবরণ করেন তিনি। মৃত্যুর পর আলেকজান্ডারের সাম্রাজ্য তাঁর ৭ জন সেনাপতি নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেন। ভারত পড়েছিল সেনাপতি সেলুকাসের ভাগে। তবে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের উত্থানের কারণে ভারতবর্ষে গ্রিক শাসন বেশি দিন স্থায়ী হয়নি।

আলেকজান্ডারের মৃত্যু

আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেটের মৃত্যু আজও এক বিরাট রহস্য। আমরা এমন এক সময়ের কথা বলছি যখন না ছিল আজকের মত উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা, না ছিল উন্নত মানের ফরেন্সিক টেস্ট। তাই ঠিক কি কারণে আলেকজান্ডারের মৃত্যু হয়েছিল তা বলা দুষ্কর। এই ব্যাপারে দুটি মত প্রচলিত। প্রথমটি হল ম্যালেরিয়া দ্বিতীয়টি হল বিষ প্রয়োগে মৃত্যু। তবে প্রথমটির পক্ষেই বেশি সমর্থন পাওয়া যায়। মৃত্যুর আগে আলেকজান্ডার দুই সপ্তাহের মত শয্যাশায়ী ছিলেন। অবশেষে ৩২৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দের ১০ বা ১১ জুন পরলোকগমন করেন দিগ্বিজয়ী এই মহাবীর।

যদিও আলেকজান্ডার মাত্র ৩৩ বছর বেঁচে ছিলেন, কিন্তু এর মধ্যেই বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তার মৃত্যুর সময় তিনি আসলে সাথে কী নিয়ে গেলেন? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যেতে পারে তার শেষযাত্রার অনুষ্ঠানের বর্ণনায়।

মৃত্যুশয্যায় আলেকজান্ডারের শেষ ৩ ইচ্ছা:

মৃত্যুশয্যায় আলেকজান্ডার তার জেনারেলদের ডেকে তিনটি শেষ ইচ্ছার কথা বলেছিলেন। সেগুলো হলো-

১. তার কফিন কবরস্থানে বহন করে নিয়ে যাবে তার ডাক্তারেরা।

২. তাকে বহন করার রাস্তাজুড়ে ছড়িয়ে দেয়া হবে তার অগাধ সম্পদ–টাকা, স্বর্ণ, মনি-মুক্তা–যা কিছু তিনি তার ঈর্ষণীয় সাফল্যমণ্ডিত জীবনে অর্জন করেছিলেন।

৩. তার হাত দুটো কফিনের বাইরে তালু ওপর দিকে রেখে ঝুলিয়ে দেয়া হবে।

আলেকজান্ডারের এই অদ্ভুত ইচ্ছাগুলো শুনে তার এক জেনারেল অবাক হয়ে তাকে প্রশ্ন করলে আলেকজান্ডার ব্যাখ্যা করেন যে, আমি চাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ডাক্তারেরা আমার কফিন বহন করুক, যাতে মানুষ উপলব্ধি করতে পারে যে, মৃত্যু যখন আসবে তখন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ডাক্তারেরা একসঙ্গে মিলেও সারিয়ে তুলতে পারবে না। আমি চাই আমার কবরস্থানে যাওয়ার পথ সম্পদে ছড়িয়ে থাকুক, যাতে সবাই দেখতে পায় যে এই দুনিয়ায় অর্জিত সম্পদ দুনিয়াতেই থেকে যাবে। আমি চাই আমার হাত দুটো কফিন থেকে বাইরের দিকে ঝুলে থাকুক, যাতে মানুষ শিক্ষাগ্রহণ করতে পারে যে আমরা এই দুনিয়ায় খালি হাতে এসেছিলাম, যখন সময় ফুরিয়ে যাবে তখন আবার খালি হাতেই চলে যাব।

অর্থাৎ আমরা দেখছি যে, যাওয়া এবং আসার সময়ে আমাদের হাত থাকে খালি। কিন্তু মাঝখানের সময়টাতে হাত তো খালি থাকে না। হাতে কিছু না কিছু থাকে। সেই কিছু না কিছু কি শুধু নিজের ভোগের জন্যে? নাকি সেখানে অন্যেরও পাওয়ার অধিকার আছে। পরম করুণাময় বলেন যে, অবশ্যই তা আছে। আমার যা-কিছু, যতটুকুই আছে, তা থেকেই দেয়ার নির্দেশ তিনি আমাদেরকে দিয়েছেন। বলা হয়েছে, যদি আমাদের কাছে একটি খেজুরও থাকে, তাহলে তার একটি অংশ অন্যকে দিয়ে খেতে। কারণ দেয়ার মধ্যে রয়েছে আনন্দ। দেয়ার গল্প শোনার মধ্যেও আমরা খুঁজে পাই সুখ।

আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট মৃত্যশয্যায় উপলব্ধি করেছিলেন জীবনের সবচেয়ে ধ্রুব সত্য- পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হচ্ছে সময়, এবং জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে- মানুষের জন্য কিছু করা।

মন্তব্য করুন