মহারাণি,
সুপ্রভাত। গতকাল ওমন করে কাশছিলে কেন? ঠান্ডা লাগিয়েছ বুঝি! নিজের খেয়াল কী একটুও রাখা শিখবে না। পৃথিবীর সব অদ্ভূত রহস্যের মত একটা রহস্য হলে তুমি, কেন জানো! আমি না চাইতেই তুমি সবসময় আমার কষ্টের সময় গুলোতে অসুস্থ হয়ে থাকো, আমি আর কিছুতেই তোমাকে বলতে পারিনা আমার এক্ষুনি তোমাকে চাই। টিন এজ প্রেমিকদের মত তোমার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থেকে বলতে পারি না, বারান্দায় আসো না প্লিজ ৫ মিনিটের জন্য। তুমি আমার এসব ছেলেমানুষী একদম পছন্দ কর না। কিন্তু আমি তোমার জন্য খুব খুব ছেলে মানুষ। তোমার জন্য রঙিন কাচেঁর চুড়ি কিনে রেখেছি জানো। তোমার হাত ভরে পড়িয়ে দেব।
মহারাণি, সবার চোখ ফাকিঁ দিয়ে চলে এসো না আমার অবুঝ অরণ্যে।
মহারাণি তোমার সাথে প্রথম দেখা হওয়াটা সিনেমার চেয়ে কম সিনেমাটিক না, মনে আছে? সেদিন কিছু লোকজন গাড়ি ভাংচুর করছিল সাতরাস্তায়, আমি আমার গাড়ি নিয়ে কোনরকমে পালানোর পথ খুজছিঁ। এমন সময় এক মেয়ে এসে আমার গাড়ি থামালো, আমি ভাবলাম তুমি আমার গাড়ি ভাংতে এসেছ। পরে শুনলাম তুমি ভয়ে কিছু মনে করতে পারছ না। আমি কিছুটা দ্বিধা নিয়ে তোমাকে গাড়িতে এসে বসতে বললাম। ওমা তুমি গাড়িতে বসেই জ্ঞান হারালে। আমি তখন দিশেহারা কি করব! পানি ছিটালাম মুখে, চোখে। তুমি তখন ও বেহুশ। সাহস করে আবার মেইন রোডে গাড়ি নিয়ে গেলাম। কাছাকাছি থাকা আন্দোলনকারীদের একজন কে বললা আমার স্ত্রী অসুস্থ উনাকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে চাচ্ছি, আমার যে কী হয়েছিল আমি প্রায় কেদেঁই দিয়েছিলাম, মন গলেছিল তাদের একজন আমার সাথে ড্রাইভিং সিটের পাশে বসে এগিয়ে দিয়েছিল হাসপাতাল পর্যন্ত। ইমার্জেন্সিতে ডাক্তার বললেন তেমন কিছু না প্যানিক এটাক। তোমার মোবাইল ব্যাগ কিছুই খুজে পেলাম না আমি। অগত্যা সাথে নিয়েই বসে থাকতে হল। প্রায় ঘন্টা দেড়েক পর মহারাণি সিনেমার নায়িকাদের মত বললেন “আমি কোথায়”। আমি হেসে ফেলে তোমাকে কাহিনী বললাম। তুমি ও খুব লজ্জা পেয়ে গিয়েছিলে, আচ্ছা লজ্জা পেলে তোমাকে খুব সুন্দর লাগে বলেছি কখনো! আমি তোমার বাসার লোকজন কে খবর দিতে চাইলাম, তুমি শুধু একটু হেসে বললে থাক, তাদের আর কষ্টে ফেলে লাভ নেই। আমি নিজেই যেতে পারব। তোমার ব্যাগটি কখন যে হারিয়ে ফেলেছিলে বলতেও পারলে না। আমি তোমাকে বাসায় পৌছে দিতে চাইলাম, তুমি বারে বার না করছিলে। আচ্ছা কেন বলত, আমি দেখতে কি ডাকাতের মত! আমি একপ্রকার জোর করেই তোমাকে বাসায় পৌছে দিয়ে আসলাম। ফোন নাম্বার দিলাম। আচ্ছা তোমার কী মনে আছে, সারাটা রাস্তা তুমি হড়বড় করে কত কথা বলেছিলে, তোমার ছোটবেলার কথা, বন্ধুদের কথা। সম্ভবত প্যানিক এটাক কেটে যাওয়ার পর তোমার অমন স্বতঃস্ফূর্ততা। আর আমি মুগ্ধ হয়ে তোমাকে দেখছিলাম। এত সাবলীল কোন মেয়ে হয়! সেদিন সন্ধ্যায় তুমি আমাকে ফোন করেছিলে, অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা জানাতে। মনে আছে, আহা এত কৃতজ্ঞ তো আমি তোমাকে সারাক্ষণ জানাই তোমার অপার রহস্যের সন্ধান তুমি আমাকে দিয়েছ।
মহারাণি, সহস্র বছর সাধনার ধন, আমি এক অদ্ভুত ঘটনায় পেয়ে গেছি স্রষ্টার অপার মহীমায়। আমি তোমাকে পেয়েছি অজানা সাধনে। তোমাকে মূল্যায়নের ক্ষমতা আমার নেই। শুধু ভালবাসতে পারি পাগলের মত। আদর নিও।
ইতি
কবি