দ্য গ্রেট আলেকজান্ডারের জীবনগাঁথা- পর্ব ২

I3A3nkR3ZRmP9bu72qANbsDSV1FcG0XJeKec+1WX1CzRVt4OQBbSuB1traL1bOUFTRQIf8cOCAoL58DUAG3U9P+oSwKMyqbZMZZ_fPACSH64WlCa5t9jNR9WLiESouasI7j0SxtsUgoTC2lOECSks+NZfiw6fDZw8L4Rm2FYVLPeMelz3Hs9of

ক্ষমতায় আরোহণ ও উত্থান

আলেকজান্ডারের উত্থান বুঝতে হলে আমাদের ধারণা থাকা দরকার তৎকালীন গ্রিসের নগর রাষ্ট্রগুলো সম্পর্কে। সে জামানায় গ্রিস একক কোন সাম্রাজ্যের অধীনে ছিলনা বরং বিভক্ত ছিল অনেকগুলো ছোট ছোট নগররাষ্ট্রে। পরাক্রমশালী পারস্য সাম্রাজ্যে বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর জন্য স্পার্টানরা ছাড়া বাকি সবাই জোটবদ্ধ হয়ে তখন সম্মিলিত বাহিনী গঠন করেছিল। আলেকজান্ডারের পিতা ছিলেন সেই সম্মিলিত বাহিনীর সুপ্রিম কমান্ডার। মূলত তাঁর একক সামরিক প্রচেষ্টাতেই বিবাদমান নগর রাষ্ট্রগুলোকে এক  ছাউনিতে আনা সম্ভব হয়েছিল। পারস্য জয় করা ছিল ফিলিপের একান্ত বাসনা। কিন্তু পারস্য অভিযানের আগেই ফিলিপ আততায়ীর হাতে নিহত হলেন। আলেকজান্ডারের বয়স যখন কুড়ি ছুই ছুই। পিতার স্থালাভিসিক্ত হতে সর্বাত্নক চেষ্টা চালালেন যুবক আলেকজান্ডার। সফলও হলেন তিনি। খ্রিস্টপূর্ব ৩৩৬ অব্দে বসলেন মেসিডোনিয়ার সিংহাসনে। মূলত আলেকজান্ডারের ঘটনা বহুল জীবনের বাঁক শুরু হল এখান থেকেই। মেসিডোনিয়ার মসনদে বসার পর আলেকজান্ডার আর মাত্র ১৩ বছর জীবিত ছিলেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি জয় করে নেন পারস্য, মিশর, ব্যবিলন ও ভারতের পাঞ্জাব।

এদিকে ফিলিপের মৃত্যুকে কেন্দ্র গ্রিসের নগররাষ্ট্র গুলো দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ল। তরুণ আলেকজান্ডারের নেতৃত্ব মেনে নিতে চাইলনা অনেকই। আলেকজান্ডার এবার বুঝতে পারলেন বিবাদমান নগর রাষ্ট্রগুলোকে এক শিবিরে আনতে না পারলে তাঁর পিতার পারস্য জয়ের স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই রয়ে যাবে। তাই আলেকজান্ডার অভিযান শুরু করলে প্রতিপক্ষ শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে। খুব শক্ত হাতে বিদ্রোহ দমন করে অচিরেই সম্মিলিত বাহিনী প্রস্তুত করলেন পারস্য অভিযানের উদ্দেশ্যে। আলেকজান্ডারের পদাতিক সৈন্যসংখ্যা ছিল ৫০ হাজারের মত আর অশ্বারোহী সৈন্য ছিল প্রায় ৬ হাজার। এছাড়া তাঁর ১২০ টি জাহাজে ছিল ৪০হাজারের মত নাবিক ও মাঝি মাল্লা।

পারস্য অভিযান

পারস্য অভিযানের আগে চতুর আলেকজান্ডার অভিযান চালালেন বলকান অঞ্চলে। উদ্দেশ্যে পারস্য প্রবেশের পথটা একদম পরিষ্কার করা। বলে রাখা ভাল আলেকজান্ডারের পারস্য বিজয় একদিনে কিংবা একটি যুদ্ধে সম্ভব হয়নি। আসলে সেটি হওয়ার কথাও না। কারণ পারস্য সাম্রাজ্যের মত বিশাল সাম্রাজ্যকে পদানত করা তো আর চাট্টিখানি কথা নয়। এশিয়া মাইনর অর্থাৎ বর্তমান তুরস্কে বেশ কয়েকটি যুদ্ধে পারসিয়ানদের সাথে জেতার পর আলেকজান্ডার মিশর দখলের উদ্দেশ্যে প্রায় বিনা বাঁধায় এগিয়ে যেতে থাকেন। যদিও সে যুগে মিশর আর আগের মিশর ছিলনা। অতীত জৌলুস হারিয়ে মিশর তখন পারস্য সাম্রাজ্যের সামান্য অংশ মাত্র। তবে মিশরে প্রবেশের পথে বর্তমান ফিলিস্তিনের গাজায় শক্তিশালী বাঁধার সম্মুখীন হন আলেকজান্ডার। যদিও গাজা জয় করার পর নির্বিচারে পুরুষদের হত্যা ও নারীদের বন্দীর নির্দেশ দিয়ে অত্যন্ত হঠকারিতার পরিচয় দিয়েছিলেন আলেকজান্ডার। গাজা জয়ের পর টায়ার নগর অবরোধ করেন তিনি। টায়ারের পরিণতিও হয়েছিল গাজার মতই। আলেকজান্ডার মিশরে পৌঁছালে তাঁকে মিশরের নতুন ফারাও ঘোষণা করা হয়। তারপর শুরু হয় পারস্যের বিরুদ্ধে তাঁর মূল অভিযান। বেশ কয়েকটি যুদ্ধের পর খ্রিস্টপূর্ব ৩৩১ অব্দে অবশেষে বিখ্যাত গগোমেলার যুদ্ধে পারস্যের রাজা তৃতীয় দারিয়ুস চূড়ান্তভাবে পরাজিত হন আলেকজান্ডারের কাছে। পরাজিত দারিয়ুস সাম্রাজ্য ছেড়ে পালিয়ে যান পরে তার সেনাপতিরাই তাকে হত্যা করে।

মন্তব্য করুন