মহারাণি,
শীতের হিম হিম করা এই সকালে আপনি এখনো ঘুমাচ্ছেন। আর আমি মর্নিং ওয়াকের নামে ছাদে, ইদানীং আমার একা থাকতেই ভাল লাগে। ইচ্ছে করে চুপ করে বসে কেবল আপনার কথা ভাবি। কী নিদারুণ বিরহের কাব্য লিখবেন বলে স্রস্টা আমাকে তোমাকে দিয়েছিলেন। আমি তোমাকে ছুঁতে পারবো না, কাছে যেতে পারবো না, হুট করে দেখা হয়ে গেলে দুজ’ন মিষ্টি করে কেবল হাসতে পারব, একটা দুইটা কুশল। কিন্তু অতোটুকুকে কী আর আমার পোষায়। তোমার অন্তর আত্মার সব কুশল যে আমাকে জানতে হবে, তোমার চোখের ভাষার অক্ষমতা যে আমাকে হৃদয় দিয়ে বুঝতে হবে। কী সুন্দর দায়িত্ব নিয়ে তুমি অন্য সবার চাহিদা সামলাচ্ছ! অথচ আমার চাহিদার খবর ও রাখছো না। আমার চাহিদা তো শুধু তুমি। তোমার কাছে কোন অভিযোগ জানানো যাবে না, তাহলেই বলবে এত অভিযোগ নিয়ে কথা কেন বলো! আচ্ছা বলতো আমি কথা না বললে তুমি ভাল থাকবে? এক বেলা অফ লাইন পেলে কেন ধমকে উঠ! রাগ করে ব্লক করে দিলে একটু একটু পর কেন চেক করো আনব্লক করেছি কিনা! তুমি বলবে আমি জানি তুমি ব্লক খুলবে। মহারাণি, তোমাকে জানতেই হবে আমাকে, এছাড়া কোন উপায় নেই আমার-আমাদের। সারাজীবন মানুষ চিনতে ভুল হয়েছে আমার, তোমাকে কী করে চিনেছিলাম বলত! কেনই বা আমার মত অভাজনকে এত এত বেশি ভালবাসা তুমি দিতে গেলে! আর সবার মত আমাকে কষ্ট তুমি দিতেই পারতে, আর সবার মত নিষ্ঠুর পৃথিবীর কঠোরতা আমাকে তো তুমি আরেকটু বোঝাতেই পারতে, কিন্তু কত উদারতায় তুমি আমাকে আর আমার পর্বতসম অক্ষমতাকে তুমি মেনে নিয়েছ।
হুট করে নিজের খোলস ভেংগে যখন তুমি নিজের জন্য আমার কাছ থেকে কিছু চাও, সেটা কমিটমেন্ট, স্বীকৃতি কিংবা খুব খুব প্রেসিয়াস কিছু যা তোমার জন্য আরাধ্য। আমি দিতে পারি না। আমি মৌন হয়ে যাই, তুমি কষ্ট পাও। মাঝে মাঝে মিথ্যে মিথ্যে কালক্ষেপন করি। তোমাকে বাচ্চাদের মত ভুলিয়ে রাখতে চাই নানা কথায়। আমি তোমার চাওয়া গুলো পূরণ করতে পারছিনা। মেঘনীল যে স্বপ্ন তোমার চাওয়া, তা আমি কখনোই বাস্তব করতে পারিনা। হয় না। কেবল জটিলতা বাড়বে। তুমি তো সব বোঝ। জানো ও। তুমি না আমাকে বাস্তবতা শেখাও! তুমি না আমাকে শাসন করো, তুমি না আমাকে বোঝাও। মহারাণি, আমি শুধু ভালবাসতে পারি, তোমার জন্য সাতটি অমরাবতী আমি আনতেই পারি। কিন্তু আমার কোন চিহ্ন আমি জীবনভর বয়ে নেয়ার জন্য তোমাকে দিতে পারিনা। তুমি তো মহারাণি, সব বুঝ। এত অবুঝ কেন হও মাঝে মাঝে। জানি আজকের চিঠি পড়ে বলবে- “বাহ! ম্যাচিওরড হচ্ছো দিনে দিনে। ” তোমার জন্য হতে হচ্ছে, তোমাকে আগলে রাখব কথা দিয়েছি যে।
মহারাণি, এসব কথা থাক, তোমার সামনে দাঁড়ানো হবে না আর, তোমাকে আমি নত মুখে জানাতে পারবো না কী তীব্র ভাল আমি তোমাকে বেসেছি, আমার অক্ষমতার আর বাস্তবতার লজ্জা আমাকে তোমার সামনে হয়ত কখনোই আসতে দিবে না। কিংবা ভয় পাবো, মহারাণির ভালবাসা আমি ঠিক সামলাতে পারবো কিন্তু তার ক্রেজিনেস সামলাতে ভয় পাই।
মহারাণি, মাঝে মাঝে তুমি যখন বল আমরা প্যারালাল ওয়ার্ল্ডে বিলঙ করি, আমার মনে হয় আসলেই তাই।। আমাদের ওয়ার্ল্ড চিরজীবনের জন্যই প্যারালাল, কখনো একটা অন্যটাকে অতিক্রম করবে না, কিন্তু পাশাপাশি ইক্সিস্ট করবে। তুমি তোমার রিয়েলিটিতে খুশি খুশি চেহারা নিয়ে আমাকে বুকে ধারন করে বাচঁবে আজীবন। আমি অন্য কোন দায়িত্ববোধে খুব খুব ম্যাচিওরড আচরন করতে করতে একসময় মরে যাবো। আমাদের কখনো ঘর হবে না। আমাদের কখনো একসাথে ক্যারাভ্যানে ঘোরা হবে না। সারারাত জেগে প্রিয় গান ও শোনা হবে না। বাচ্চাদের স্কুলে নিয়ে যাওয়ার তাড়া নেই, বাজার করার ঝামেলা নেই, তোমাকে গরমে দাঁড়িয়ে কখনো রান্না করতে হবে না আমার জন্য, ম্যারেইজ ডে জন্মদিন এসব মনে করে পার্টির আয়োজন নেই। শুধু এক আকাশ ভালবাসার বিশালতা আছে। সব সামলে আমার বুকে দীর্ঘশ্বাস ফেলার অবকাশ আছে। আমাকে ইচ্ছেমত শাসন করার একচ্ছত্র আধিপত্য আছে তোমার। তোমাকে কারন অকারনে জ্বালানোর অধিকার আছে আমার। আমার সেন্স অফ হিউমার দিয়ে সবার সামনে তোমাকে নিয়ে আমি ক্রেজিয়েস্ট জোক করতে পারি, আর সেটা শুনে তোমার চোখ রাংগানি ও আছে। ঈদের ছুটিতে সব ফেলে তোমার সাথে দেখা করার অজুহাত খুজতে পারি।
মহারাণি, আমি তোমাকে ভালবাসতে পারি অনন্ত অসীম। কোন বিশ্বযুদ্ধ আমি চাই না আর। আমি শান্তি চাই। তোমাতে ডুবে যেতে চাই। আমি তোমাকে ভালবাসি মহারাণি। ভীষণ মরণশীল আমি তোমাকে ভালবেসে অমরত্ব চাই।
ভাল রাখুন স্রষ্টা তোমাকে। উষ্ণতা জানবে।
ইতি কবি
উনার লিখা ভাল। কেমন যেম বুক মোচড় দেয়