দ্য গ্রেট আলেকজান্ডারের জীবনগাঁথা- পর্ব ১

I3A3nkR3ZRmP9bu72qANbsDSV1FcG0XJeKec+1WX1CzRVt4OQBbSuB1traL1bOUFTRQIf8cOCAoL58DUAG3U9P+oSwKMyqbZMZZ_fPACSH64WlCa5t9jNR9WLiESouasI7j0SxtsUgoTC2lOECSks+NZfiw6fDZw8L4Rm2FYVLPeMelz3Hs9of

সম্রাট আলেকজান্ডার, যাকে অনেক ইতিহাসবিদ আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট বলে সম্বোধন করেন। সেই সুদূর গ্রিস থেকে একের পর এক দেশ জয় করে তাঁর বাহিনী চলে এসেছিল ভারত অবধি। পারস্যের কাছে তিনি পরিচিত ইস্কান্দার বাদশাহ হিসাবে আর ভারতবর্ষে ইস্কান্দারের অপভ্রংশ সেকান্দার বাদশাহ হিসাবেও বহুল পরিচিত তিনি। দুই সহস্রাব্দ পেরিয়ে গেলেও আলেকজান্ডারকে নিয়ে বিশ্ববাসীর আগ্রহ একটুও কমেনি। আর কমবেই বা কেন? ৩২ বছরের সংক্ষিপ্ত জীবনে তিনি জয় করেছিলেন পৃথিবীর ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাম্রাজ্য। শুধু তাই নয় হাতেগোনা কয়েকজন অপরাজিত জেনারেলের মধ্যেও তিনি অন্যতম। আজকে আমরা কথা বলব এই  ইতিহাস সৃষ্টিকারী এই বীরযোদ্ধার জীবনগাঁথা নিয়ে।

জন্ম ও বংশ পরিচয়

আলেকজান্ডার ৩৫৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে গ্রিক মাস হেকাতোম্বাইওনের ষষ্ঠ দিনে বা ২০ অথবা ২১ শে জুলাই ম্যাসিডন রাজ্যের পেল্লা নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ম্যাসিডনের রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ ও তার চতুর্থ স্ত্রী অলিম্পিয়াসের পুত্র ছিলেন। দ্বিতীয় ফিলিপের সাত বা আটজন পত্নী থাকলেও আলেকজান্ডারের জন্মদাত্রী হওয়ার কারণে অলিম্পিয়াস ফিলিপের প্রধান পত্নী ছিলেন।

আলেকজান্ডারের জন্ম নিয়ে বেশ কিছু কল্পকথা প্রচলিত রয়েছে। গ্রিক জীবনীকার প্লুতার্কের রচনানুসারে, ফিলিপের সঙ্গে বিবাহের দিনে অলিম্পিয়াসের গর্ভে বজ্রপাত হয়। বিবাহের কয়েকদিন পর ফিলিপ একটি স্বপ্নে দেখেন যে, অলিম্পিয়াসের যোনিদ্বার সিংহের ছাপযুক্ত একটি শীলমোহর দ্বারা বন্ধ অবস্থায় রয়েছে। প্লুতার্ক এই সমস্ত অলৌকিক ঘটনার বেশ কিছু ব্যাখ্যা দেন এই ভাবে যে, অলিম্পিয়াস বিবাহের পূর্ব হতেই গর্ভবতী ছিলেন এবং আলেকজান্ডার জিউসের সন্তান ছিলেন। যদিও ঐতিহাসিক ইতিহাসবেত্তাদের মতে, উচ্চাকাঙ্খী অলিম্পিয়াস আলেকজান্ডারের ঐশ্বরিক পিতৃত্বের কাহিনী প্রচলিত করেন।আলেকজান্ডারের জন্মের দিন ফিলিপ পটিডিয়া অবরোধের পরিকল্পনা করছিলেন। সেই দিনই তিনি তার সেনাপতি পার্মেনিয়ন দ্বারা ইলিরিয়া ও পীওনিয়া রাজ্যের সেনাবাহিনীর পরাজয়ের এবং অলিম্পিক গেমসে তার অশ্বের জয়লাভের সংবাদ লাভ করেন। কথিত যে, আলেকজান্ডারের জন্মদিবসের প্রাচীন বিশ্বের অন্যতম আশ্চর্য হিসেবে পরিগণিত আর্তেমিসের মন্দির ভস্মীভূত হয়। আর্তেমিস আলেকজান্ডার জন্ম উদ্‌যাপন করতে যাওয়ায় এই ঘটনা ঘটে বলে কল্পকাহিনী প্রচলিত হয়। আলেকজান্ডারকে অতিমানবিক ও মহান কার্যের জন্য নির্দিষ্ট হিসেবে দেখানোর উদ্দেশ্যে তার সিংহাসনলাভের পর এই সমস্ত অলৌকিক কাহিনীর প্রচলন করা হয় বলে মনে করা হয়ে থাকে।

শিক্ষা

আলেকজান্ডারের জীবনে তাঁর মায়ের ভূমিকা ছিল অসামান্য। ছেলেবেলা থেকেই তিনি শিশু আলেকজান্ডারকে বুঝিয়েছিলেন পারস্য জয় করার জন্য তাঁর জন্ম হয়েছে। বলা বাহুল্য অলিম্পিয়া ছিলেন ফিলিপের সাত স্ত্রীর মধ্যে চতুর্থ। অন্যদিকে অসম্ভব বিচক্ষণ এবং বীরযোদ্ধা রাজা ফিলিপ বালক আলেকজান্ডারের শিক্ষার কোন ত্রুটি করেননি। শৈশবে আলেকজান্ডারকে লানিকে নামক একজন সেবাব্রতী পালন করেন। পরে অলিম্পিয়াসের আত্মীয় লিওনাইদাস এবং দ্বিতীয় ফিলিপের সেনাপতি লুসিম্যাকোস শিক্ষাপ্রদান করেন। অন্যান্য সম্ভ্রান্ত ম্যাসিডনীয় কিশোরদের মতই তাকে পড়া, যুদ্ধ করা, শিকার করা প্রভৃতি বিষয়ে শিক্ষাপ্রদান করা হয়।

তেরো বছর বয়স হলে দ্বিতীয় ফিলিপ আলেকজান্ডারের শিক্ষার জন্য আইসোক্রাতিস ও স্পিউসিপাস নামক দুইজন গ্রিক শিক্ষাবিদকে গণ্য করেন কিন্তু তারা এই কাজে অস্বীকৃত হন। অবশেষে দ্বিতীয় ফিলিপ গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটলকে আলেকজান্ডারের শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করেন এবং মিয়েজার মন্দিরকে শ্রেণীকক্ষ হিসেবে প্রদান করেন। আলেকজান্ডারকে শিক্ষাপ্রদান করায় দ্বিতীয় ফিলিপ অ্যারিস্টটলের শহর স্তাগেইরা পুনর্নির্মাণের ব্যবস্থা করেন। তিনি এই শহরের সকল প্রাক্তন অধিবাসী যারা দাস হিসেবে জীবনযাপন করছিলেন, তাদের ক্রয় করে মুক্ত করেন ও নির্বাসিতদের শাস্তি মওকুফ করেন।

মিয়েজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আলেকজান্ডারের সাথে প্রথম টলেমি সোতের, হেফাইস্তিওন, কাসান্দ্রোস ইত্যাদি ম্যাসিডোনিয়ার সম্ভ্রান্ত পরিবারের কিশোরেরা শিক্ষালাভ করেন, যাদের মধ্যে অধিকাংশই পরবর্তীকালে আলেকজান্ডারের বন্ধু এবং সমর অভিযানের সেনাপতি হিসেবে পরিগণিত হন। অ্যারিস্টটল তাদের চিকিৎসাবিদ্যা, দর্শন, নীতি, ধর্ম, তর্কবিদ্যা ও কলা সম্বন্ধে শিক্ষাপ্রদান করেন। তার শিক্ষায় আলেকজান্ডারের হোমারের ইলিয়াড মহাকাব্যের প্রতি প্রগাঢ় প্রেমের উন্মেষ ঘটে, যা তিনি তার ভবিষ্যতের সকল অভিযানে সঙ্গে নিয়ে যেতেন।

মন্তব্য করুন