চিনির পুতুল (পর্ব- ৪)

90 doshok 2

৯০ দশকের কিছু হারিয়ে যাওয়া বিশেষ খাবার বা স্ট্রিটফুড,খেলনা এবং আরও কিছু নির্দিষ্ট জিনিস নিয়ে আমাদের এই বিশেষ আয়োজন “চিনির পুতুল”। ৯০ দশকে যাদের শৈশব কেটেছে তাদের অনেকেই এসকল এসকল মধুর স্মৃতির কথা মনে করে মাঝে মাঝে নস্টালজিক হয়ে যায়।

চলুন আপনাদের নিয়ে যাওয়া যাক সেই সকল দিনে।

আজকের পর্বঃ মাটির পুতুল ও টেপা পুতুল

মানুষ বা অন্য কোনো প্রাণীর ছোট প্রতিকৃত ত্রিমাত্রিক ডাইমেশনে তৈরি করাকে পুতুল বলে। অর্থাৎ ক্ষুদ্রায়তন মূর্তিই হচ্ছে পুতুল। আর এই পুতুল তৈরিতে উপকরণ হিসেবে মাটি ব্যবহার করা হলে তখন তাকে মাটির পুতুল বলা হয়।

পুতুল খেলনাবিশেষ। নদিয়ার কৃষ্ণনগর মাটির পুতুলের জন্য বিখ্যাত। ১৯১৫ সালে ছোটলাট লর্ড কারমাইকেল কৃষ্ণনগরের শিল্পী যদুপালের বাড়িতে একটি ছোট ছেলেকে দক্ষ হাতে মাটির পুতুল বানাতে দেখে অবাক হয়েছিলেন। সেই ছেলেটি পরবর্তীকালে মৃিশল্পী ও ভাস্কর হিসেবে আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভ করেন। তাঁর নাম গোপেশ্বর পাল। তাঁর বংশেরই একজন শিল্পী কার্তিকচন্দ্র পাল ১৯৪০ সালে রবীন্দ্রনাথের সামনে বসে কবির একটি মাটির মূর্তি তৈরি করেছিলেন।

বাংলাদেশে পুতুল নির্মাণের উপকরণ হিসেবে মাটিই প্রধান। এ দেশে মাটির পুতুলই সবচেয়ে আদিমতম পুতুল। পোড়ামাটির বিভিন্ন ধরনের পুতুল বাংলাদেশের পুতুলশিল্পের প্রতিনিধিত্ব করছে। কবে, কখন, কিভাবে মাটির পুতুল তৈরি হয়েছে সেটা জানা না গেলেও নদীমাতৃক এ দেশের মৃিশল্পীরা সহজলভ্য ও উপযুক্ত মাটি ব্যবহার করেই পুতুলশিল্পের সূচনা করেন। আর মাটির পুতুল তৈরি শিল্পীরা মূলত পাল, মালাকার প্রভৃতি বংশভুক্ত। শত শত বছর ধরে উল্লিখিত শ্রেণিভুক্ত মৃিশল্পীরা বাংলাদেশের এই প্রধানতম লোকশিল্প ‘পুতুল’ তৈরি করে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলেই মাটির পুতুল পাওয়া গেলেও  ঢাকা, রাজশাহী, ফরিদপুর, খুলনা, রাজবাড়ী, চট্টগ্রাম, টাঙ্গাইল, জামালপুর, রংপুর ও বরিশাল অঞ্চলে মাটির পুতুল সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়। মাটির পুতুল হাত অথবা ছাঁচের মাধ্যমে তৈরি করেন শিল্পীরা। বাংলাদেশের বিভিন্ন মেলা, পূজা-পার্বণ, উৎসব-অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রকম পুতুলের পসরা সাজিয়ে বসেন শিল্পীরা। পুতুল বিক্রিও হয়। পুতুল ছোট-বড় সবার আনন্দের খোরাক জোগায়। কারণ আদিমকালে ভয়-ভীতি দূর কিংবা শত্রু তাড়ানোর জন্য পুতুল তৈরি হলেও সময়ের বিবর্তনে পুতুলশিল্প এখন মানুষকে বেঁচে থাকার সাধ-আকাঙ্ক্ষা ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য দিয়ে থাকে। বাংলাদেশের হাজার হাজার পুতুলশিল্পীর মধ্যে চারুকলার শিক্ষক মরণ চাঁদ পাল পোড়ামাটির পুতুল তৈরি করে দেশে-বিদেশে অর্থ ও যশ কুড়ানোর পাশাপাশি বাংলাদেশে পুতুলশিল্পে এনেছেন এক অনন্য ধারা। তাঁর কয়েকটি পুতুল বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের গ্যালারিতে প্রদর্শিত হয়।

মাটি দিয়ে তৈরি আরেকটি উল্লেখযোগ্য পুতুল হচ্ছে টেপা পুতুল। বাংলার কুমোররা নরম এঁটেল মাটি দিয়ে হাতের নৈপুণ্য ও কারিগরি জ্ঞানের মাধ্যমে টিপে টিপে এই পুতুল তৈরি করে। হাত দিয়ে টিপে তৈরি করে বলে এ পুতুলকে টেপা পুতুল বলে। টেপা পুতুল বাংলার ঐতিহ্যেরও একটি অংশ।

বাংলার কুমোররা নরম এঁটেল মাটি দিয়ে হাতের নৈপুণ্য ও কারিগরি জ্ঞানের মাধ্যমে টিপে টিপে এই পুতুল তৈরি করে। হাত দিয়ে টিপে তৈরি করে বলে এ পুতুলকে টেপা পুতুল বলে।

টেপা পুতুল বাংলার ঐতিহ্যেরও একটি অংশ। বাংলাদেশে মূলত মেয়েরাই টেপা পুতুল তৈরি করে। তবে বর্তমানে পুরুষরাও এ কাজে জড়িত হচ্ছে। এ পুতুল বানাতে কারিগরকে নিজস্ব মেধা ও দক্ষতা প্রয়োগ করতে হয়। পুতুলের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হাতের সাহায্যেই গড়ে তোলা হয়। মাটির বুটি দিয়ে বা কাঠির রেখা টেনে এ পুতুলের অলংকার ও পোশাকের আভাস ফুটিয়ে তোলা হয়। পরে রোদে শুকাতে দেওয়া হয়। শুকানো হয়ে গেলে পোড়ানো হয় আগুনে। এভাবেই টেপা পুতুল বানানো হয়।

মন্তব্য করুন