লেখক- মির্জা ফারহান
মহারাণি,
শীতের ভোরের কুয়াশায় ঢাকা শহরে নাগরিক জীবন যখন শুরু হয় নি, আমি তীব্র ভাবে যা অনুভব করছি তা হলো ডাভ শ্যম্পুর ঘ্রাণ। অসম্ভব অনিয়মের মত তোমার চুলের ঘ্রাণ পাওয়ার বদভ্যাসটাই হয়তো তোমাকে ভালবাসাচ্ছে এত বেশি। আমার তুলতুলে নরম কম্বলের মাঝে যে উষ্ণতা অনেক অনেক বেশি আরাম দিচ্ছে আমাকে, সে কিন্তু তোমার নিঃশ্বাস। আমি জানি এসবই আমার ভ্রম। কিন্তু এই ভ্রমে আমি বাচঁতে চাই আরো হাজারো বছর। আমার কাছে হাজার বছর নেই, এমন কী নেই শতবর্ষ কিংবা কয়েক যুগ, তুমি জানো ডাক্তারের বেধেঁ দেয়া সময়ে আমি এগিয়ে চলেছি, হিসেব নিকেশ করে চলেছি কতটুকু ভালবাসলে এজন্ম নয় শুধু আরো কয়েকজন্মে তোমার মন জুড়ে থাকব কেবল আমি। সময় অসময় আর আমাদের বাস্তবতায় আমি জানি মহারাণি তোমাকে আমার কখন স্পর্শ করা হবে না, কখনো কোন বিনিদ্র রাত্রি আমি তোমার সমুদ্রে ডুবে যেতে পারবো না, তোমার তীব্র সুখের অশ্রু মুছে দিয়ে বলতে পারবো না “ভালবাসি পাগলি”।
ভালবাসা বরাবরই আমার কাছে নৈবেদ্য। সে সবাইকে দেয়া যায় না, সবাই তা গ্রহণ করতে জানেও না। তুমি আমাকে গ্রহণ করেছ অসীম উদারতায়, তুমি আমার বুকে মুখ লুকিয়ে কেদেঁছ পরম সুখে, আমি সেদিন বুঝেছি যে ভালবাসার সন্ধান মানুষ জন্মান্তরে করে, সে ভালবাসায় জড়িয়ে গেছি আমি। তোমার মরিচীকায় আমি আটকে গেছি মহাকালের অসীমে।
আমার নিস্তরংগ জীবনে এমন একটা সময়ে এলে যখন আমি বা তুমি অন্য কোন বাস্তবতায় বাস করি, যেখান বিদ্রোহী হওয়া যায় না, যেখান থেকে মুক্তি ও নেয়া যাবে না। তারপর আমার জীবনের সময় ঘড়ি প্রতি সেকেন্ডে মনে করিয়ে দিচ্ছ্র আরো কিছু সেকেন্ড কমে গেলো। এত এত বাধাঁ আমার মানতে ইচ্ছা করে না, আমি অবুঝ হই। আমি তোমার কোলে শুয়ে অনন্ত নীল আকাশ দেখতে চাই, আমি নশ্বর এই পৃথিবীতে অবিনশ্বর হয়ে তোমাকে ভালবাসতে চাই। তোমার জন্য আমি দূর আকাশের তারা নই, শীতের নরম রোদ হতে চাই। আমি আরো অস্থির হয়ে যাই, আরো আবেগী হয়ে তোমাকে জড়িয়ে ধরি, তুমিও মাঝে মাঝে নিজের মিথ্যে শক্ত হতে চাওয়া খোলস ছেড়ে আমার কানে ফিসফিস করে বলো ” চলো পালিয়ে যাই এইসব নিয়ম আর অনিয়মের বেড়াজাল থেকে।”
মহারাণি আমি আর বিদ্রোহী হতে পারি না, আমি আর রাজ্য জয় করে এনে দিয়ে তোমার পায়ের নিচে রাখতে পারিনা, আমার জীবন ঘড়ি প্রতিনিয়ত আমাকে
চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। জানি তুমি এক্ষুনি আমার বুকে কিল বসিয়ে বলবে ” অনেক দিন বাচঁবে তুমি”। আচ্ছা বলতো যে পৃথিবীতে তোমাকে পাওয়ার মিনিমাম কোন সম্ভাবনা আমার নাই, সেখানে বেচেঁ থাকা কী খুব জরুরী? এমন ও তো হতে পারে, এই অবুঝ বোকা প্রেমিক স্রষ্টার অসীম দয়ায় পৌছেঁ গেল চির শান্তির বেহেশতে, স্রষ্টার মুখোমুখি হাটু গেড়ে বসে চেয়ে নিল তোমায়।
মহারাণি, দুর্ভাগ্যে আমি জন্মেছিলাম কবি হয়ে, সৌভাগ্যে পেয়েছি তোমায়। তোমাকে ভালবাসি ঠিক যতটার পর আর কোন সীমা নাই তার চেয়েও আরো অনেক অনেক বেশি। তুমি কী টের পাও? তুমি কী অনুভব করো?
আচ্ছা তোমার কী দুনিয়ার সব নিয়ম আর বাস্তবতাকে ফাকিঁ দিয়ে আমার বুকে ঝাপিয়ে পড়তে ইচ্ছা করে? ইচ্ছা হয় কী আমাকে তোমার সমুদ্রে ভাসাতে, আমার অবুঝ বন্য আবেগে কাপঁতে? তুমি মিথ্যে বললেও সত্যি টা আমি জানি।
মহারাণি, আমি কখনই তোমার জন্য রাজ্যজয় করা কোন রাজা, মহারাজা কিংবা সাম্রাজ্যের মালিক হতে চাইনি। আমার আজন্ম কবি সত্তা তোমাকে ভালবেসেছে কেবল উদারতায়, তোমাকে আমার হৃদয় আকাশের মালিকানা দিয়ে কেবল আরো ক্ষমতাবান নারী করেছে, যে চাইলে আমি হাসতে পারি কিংবা হারিয়েও যেতে পারি কিন্তু মুক্ত হতে পারিনা। তোমাদের দুনিয়ায় যেখানে প্রতিনিয়ত চলছে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব সেখানে আমার এক পৃথিবীর তুমি ই সর্বময় অধিপত্রী।
মহারানী বাস্তবতায় আমাকেও ফিরতে হয়, রবীন্দ্রনাথের মত ভালবাসার অবসরের আমার যে বড় অভাব।। তবু আমি ভালবাসি তোমাকে আমার সবটুকু দিয়ে, আমার সব বন্যতায় আমার সব মৌনতায়।
ভাল রাখুন স্রষ্টা তোমাকে।
ইতি “কবি”
এভাবেও ভালবাসা হয়, এভাবেও ভালবাসা যায়!!
খুব সুন্দর লেখনী। অপুর্ব শব্দ চয়ন। আর লেখা চাই।