চিঠিপত্রের মাস – ০৭

cithi potro - Copy2

চিঠির নামঃ( আমার প্রেমীষা)

লেখকঃ নাজির আহমেদ।

প্রিয় নাসরিন,

জগতের সকল সুরভিত ফুলের শুভেচ্ছা নিও, তুমি সবসময় ভালো থেকো সুস্থ থেকো এই কামনায় করি। তুমি প্রকৃতির মতোই নিবেদিত প্রাণচঞ্চল তোমার অঘোষিত প্রেমের রঙ্গমহলে আতিথ্যের সুবিশাল সমাহার ।

পরসমাচার  এই যে তোমার অঘোষিত প্রেমের রঙ্গমহলে আমিও এক নিদারুণ অতিথি। তুমি একজন মস্ত বড়ো লেখিকা ইতিমধ্যে সেলেব্রিটি। ধনদৌলত পূর্ণ বিলাসিতায় ভরা জীবন তোমার। আমিও তোমার লেখার একজন নিয়মিত পাঠক। তোমার কাছে যাওয়ার অধিকার হয়তো আমার নেই, কারণ তুমি মস্তবড়ো ধ্বনির দুলালি খানদানি পরিবারে জন্ম তোমার। তবু আমারও হক আছে তোমাকে প্রেম নিবেদন করার। আমি জানি তোমার মন আমি ছিনিয়ে নিতে পারবোনা। কিন্তু খবরের কাগজের পাতা থেকে তোমার ছবি খানি ঠিকই ছিড়ে নিয়েছি। এই পৃথিবীর আর কেউ জানুক আর না জানুক তুমি ঠিকই  জানো একাকিত্ব জিনিসটা কতটা ভয়ংকর। দিনটা যখন তার আলোর চাদর গুছিয়ে নিয়ে আঁধারের চাদরটা বিছিয়ে রাত্রি ঘনায়  সে সময় তোমার ছবিটা নিয়ে বুকে আগলে রাখি আর আদর মাখা সোহাগ গুলো মনের বাটিতে জমায়। তুমি জানো প্রিয়তমা এমন একটা সময় ছিলো সে সময়ে নির্জণ নিস্তব্ধ রাতে শিয়ালের হুক্কাহুয়া ডাক কুকুরের ভেউ নতুন পোয়াতি মায়ের ঘরে শিশুদের কান্না আমাকে ভিষণ ভয় পাইয়ে দিতো। আর এখন তোমার ছবিটায় আমাকে ভিষণ স্বস্তি যোগায়। তোমার ছবিটা আমার একাকিত্বকে দারুণ ভাবে সঙ্গ দেয়। শুধু কি তাই এই পৃথিবীর প্রকৃতির সমস্ত আলো বাতাস পানি সাগর নদী পাহাড় পর্বত বর্ণিল আকাশের ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘেদের ভেলা প্রকৃতির সমস্ত সৌন্দর্যই আজ আমাকে সঙ্গ দেয়।

জানো প্রিয়তমা আমি যখন  রেললাইনের উপরে  একা একা হেঁটে চলি তখন ওই রেললাইনের টুকরো টুকরো পাথর গুলোও আমাকে সঙ্গ দেয়। জানো পাথর গুলোর খসরমসর কান্নার আওয়াজ আমি যেনো শুনতে পাই। জানো ওই জড়বস্তু পাথর গুলোও আমাকে সান্তনা দেয়। মিষ্টিকরে ধমকের সুরে বলে হে মানব তুমি তো দেখছি আস্ত একটা নির্বোধ। আমাদেরকে পদদলিত করছো আঘাতের পর আঘাত করে চলছো আবার নিজেই ভেঙে পড়েছো কান্নায়। আসলে তোমরা মানুষ জাত টায় এ রকম কোথাও হয়তো সামান্য আঘাত পেয়েছো তাতেই ভুগছো হতাশায়। তোমরা মানুষরা না সামান্য স্বার্থে আঘাত পেলেই অন্ধ হয়ে যাও  একজন মানুষ হয়ে আর একজন মানুষকে নির্দয় ভাবে কুপিয়ে কুপিয়ে মেরে ফেলো।

তোমরা বিবেকের ঘরকে  তালাবদ্ধ করে বারেবারে ফিরিয়ে যাও আদিম সভ্যতায়।

হায় তোমরা মানুষ এতোটা নিষ্ঠুর হতেপারো কি ভাবে? তোমরা ভাবো আমরা জড়বস্তু বলে আমাদের কোনো অভিযোগ নাই। আছে আমাদেরো অভিযোগ আছে। অভিযোগ লুকিয়ে আছে ওই কারবালা ময়দানের প্রতিটি ধুলিকনায়। যে কারবালা ময়দানে নবীজি (সাঃ)এর প্রিয় দুই নাতি হাসান হুসাইন কে নির্মম নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছিলো। তুমি বিশ্বাস করো আর নাইবা করো আমি প্রকৃতির সমস্ত সৌন্দর্যের মাঝেই  তোমার পতিমার মতো ওই রুপের ঝলক দেখতে পাই। মাঝে মাঝে তুমি ভয়ানক সত্য কথাগুলো এতো সরলতা নিয়ে বলো যে আমি মুগ্ধ হয়ে যাই। তাই তো তোমাকে আমি আমার মন মন্দিরের দূর্গার আসনে বসাতে চাই। আমি আমার এই লাগামহীন ঘোড়ার মতো বেপরোয়া জীবন যাপন কে দমাতে তোমাকেই সঙ্গী  হিসেবে পেতে চাই। তোমাকে পেছনে ফেলে আমি যুদ্ধ ক্ষেত্রে ঝাপিয়ে পড়তে চাই। তুমি ইচ্ছে হলেই তোমার ওই প্রেম আবাদের জমিটা আমাকে দিতে পারো। এমনি দিতে যদি কষ্ট হয় তবে আমি তোমার ওই প্রেম আবাদের জমিটা খাইখালাসি নিতে চাই। তাতে আমার পবিত্র প্রেমীষার বীজ বপন করে পৃথিবীটা প্রেমে প্রেমে একাকার করে দিতে চাই।

ইতি,

তোমার অনুরাগী

নাজির আহমেদ।

মন্তব্য করুন