চিনির পুতুল (পর্ব- ৩)

90 doshok 2

৯০ দশকের কিছু হারিয়ে যাওয়া বিশেষ খাবার বা স্ট্রিটফুড,খেলনা এবং আরও কিছু নির্দিষ্ট জিনিস নিয়ে আমাদের এই বিশেষ আয়োজন “চিনির পুতুল”। ৯০ দশকে যাদের শৈশব কেটেছে তাদের অনেকেই এসকল এসকল মধুর স্মৃতির কথা মনে করে মাঝে মাঝে নস্টালজিক হয়ে যায়।

চলুন আপনাদের নিয়ে যাওয়া যাক সেই সকল দিনে।

আজকের পর্বঃ কটকটি

৯০ দশকের সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার এই কটকটি। বিকালে এলাকার ফেরিওয়ালা নিয়ে আসতো তার ঝুড়ি ভরা বিভিন্ন পরিমাণের এবং বিভিন্ন সাইজের কটকটি। ১-১০ টাকার মধ্যেই পাওয়া যেত অনেকখানি কটকটি। বাচ্চারা কেউ কেউ মায়ের থেকে বিকেল হলেই অনেক বায়না ধরে ২/৪ টাকা চেয়ে নিয়ে এসে খুব সখ করে কিনত এই কটকটি। অনেক ফেরিওয়ালা আবার নানারকম জিনিসপত্রের বিনিময়ে দিত কটকটি। যেমন- ভাঙ্গা কাঁচের বোতল, টিন এর কৌটা, পুরানো জামা-কাপড় ইত্যাদি। বাচ্চারা বাসার পুরানো জিনিস নিয়ে এসে তার বিনিময়ে পেত অনেক রকমের এবং সাইজের কটকটি।

কটকটি একটি অনেক যুগ ধরে চলে আসা খাবার। চারকোনা বিস্কুট আকৃতির শুকনো মিষ্টান্নজাতীয় গুড়মাখা খাবার। স্বাদে অনন্য এই খাবারের নাম কটকটি। বাংলার প্রাচীন রাজধানী পুণ্ড্রবর্ধন বা মহাস্থানগড় ঘুরতে এসে এই কটকটির স্বাদ নিতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন দেশি-বিদেশি পর্যটক ও দর্শনার্থীরা। বগুড়ার দইয়ের মতোই পর্যটকদের মাধ্যমে এ খাবারের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশেও। প্রায় দেড় শ বছর ধরে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে মহাস্থানগড়ের এই কটকটি।

মহাস্থানগড় ঘিরে গড়ে উঠেছে কটকটির বিশাল বাজার। এর মধ্যে গড়ের নিচে এবং বাসস্ট্যান্ডে প্রায় ২৫টি বড় দোকানে প্রতিদিন হরেক স্বাদের কটকটির বিশাল পসরা নিয়ে বসেন দোকানিরা। শুক্রবার দর্শনার্থীর ভিড়ের কারণে মহাস্থানগড়ের ওপরে ও নিচে কটকটির দোকান বসে ১০০টি। পর্যটন মৌসুমে এসব দোকানে গড়ে প্রতিদিন ১৫০ মণ কটকটি বিক্রি হয়। বছরজুড়ে প্রতিদিন বিক্রি হয় গড়ে ১০০ মণ। স্বাদ ও মানভেদে প্রতি কেজি কটকটির দাম গড়ে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। প্রতি মণ কটকটির দাম গড়ে চার হাজার টাকা। মহাস্থানগড়ে প্রতিদিন চার লাখ টাকার কটকটি বেচাবিক্রি হয়।

প্রতিবছর বৈশাখের শেষ বৃহস্পতিবার মহাস্থানগড়ে দিনব্যাপী মেলা বসে। এ মেলায় কটকটির দোকান সাজিয়ে বসেন শতাধিক দোকানি।

দোকানিরা জানালেন, আগের দিনে কটকটি বেশ শক্ত ছিল। এখন কটকটি তৈরির পদ্ধতিতে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগায় এবং খামিরে ডালডার ব্যবহারের কারণে কটকটি আগের চেয়ে অনেকটাই নরম। খেতে গিয়েও এখন আগের মতো তেমন কটকট শব্দ হয় না।

মহাস্থানগড়ে কটকটির সবচেয়ে পুরোনো দোকান লাল মিয়া কটকটি ঘর। এর প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ লাল মিয়া প্রামাণিকের বয়স এখন ৮৩ বছর। মাত্র ১২ বছর বয়সে বাবার হাত ধরে মহাস্থানগড়ে কটকটি ব্যবসায় আসেন তিনি। শুরুতে গড় এলাকায় কটকটি ফেরি করে বিক্রি করতেন। এখন গড়ের নিচেই বিশাল শোরুমে কটকটি সাজিয়ে বসেন।

প্রবীণ এই দোকানি কটকটির ইতিহাস জানাতে গিয়ে বলেন, দাদা জোহর মাহমুদ এবং বাবা মোহাম্মদ আলী প্রামাণিক গড়ে ১০০ বছর কটকটির ব্যবসা করেছেন। প্রায় ৭০ বছর ধরে তিনি নিজে এ ব্যবসার সঙ্গে রয়েছেন। সেই হিসাবে মহাস্থানগড়ের কটকটির ইতিহাস কমপক্ষে ১৭০ বছরের পুরোনো।

মহাস্থানগড়কে ঘিরে কটকটির প্রায় ১০০টি দোকান বসেছে।

মন্তব্য করুন