
৯০ দশকের কিছু হারিয়ে যাওয়া বিশেষ খাবার বা স্ট্রিটফুড,খেলনা এবং আরও কিছু নির্দিষ্ট জিনিস নিয়ে আমাদের এই বিশেষ আয়োজন “চিনির পুতুল”। ৯০ দশকে যাদের শৈশব কেটেছে তাদের অনেকেই এসকল এসকল মধুর স্মৃতির কথা মনে করে মাঝে মাঝে নস্টালজিক হয়ে যায়।
চলুন আপনাদের নিয়ে যাওয়া যাক সেই সকল দিনে।
আজকের পর্বঃ লাটিম
পৃথিবীর সর্বপ্রাচীন খেলাগুলোর মধ্যে একটি হলো লাটিম ঘোরানো। কমপক্ষে চার হাজার বছর আগেও মানুষের খেলার সামগ্রীর মধ্যে লাটিম ছিল বলে জানা যায়। আমাদের দেশে আগে সুতার মিস্ত্রিরাই গ্রামের কিশোরদেরকে লাটিম বানিয়ে দিতো। তারা সাধারণত পেয়ারা ও গাব গাছের ডাল দিয়ে এ লাটিম তৈরি করতো। নির্বাচিত পাট থেকে লাটিমের জন্য লতি বা ফিতা বানানো হতো।
খেলার কৌশলঃ
লৌহশলাকাকে অক্ষ বানিয়ে কাঠের বানানো গোলকটিকে খেলোয়াড় ২-৩ হাত দীর্ঘ এক টুকরো দড়ি বা সূতলি দিয়ে অক্ষশীর্ষ থেকে ক্রমশ গোলকটির নিম্নার্ধ সুষমভাবে পেঁচিয়ে হাতের প্রধানত তর্জনী ও বৃদ্ধঙ্গুল ব্যবহার ক’রে উঁচু থেকে ছুঁড়ে মাটি বা কিছুর তলে ঘুরায়।
ধরণঃ
সাধারণত তিন ধরনের লাটিম খেলা হয়। ১। বেল্লাপার ২। ঘরকোপ ৩। ঘুরতি কোপ
বেল্লাপার
বেল্লাপারে একটি দাগ কেটে সীমানা চিহ্নিত করা হয়। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় নির্ধারণী খেলায় যে লাটিম পরাজিত হয় তাকে ঘর থেকে নিজেদের লাটিম দিয়ে আঘাত করে করে প্রতিযোগীরা সীমানা পার করে দেয়। ঘুর্ণায়মান লাটিম হাতে নিয়েও প্রতিযোগী লাটিমকে আঘাত করা যায়। মাটিতে রাখা লাটিমকে আঘাত করতে ব্যর্থ হলে ঐ লাটিমের স্থানে ব্যর্থ লাটিমকে রাখা হয় এবং তাকে বেল্লা পার করা হয়। শর্ত অনুযায়ী সীমানা পার করা লাটিমকে নিজের লাটিম বা দা দিয়ে কোপ দেওয়া হয়।
ঘরকোপ
লাটিমের ফিতা ও লাটিম দিয়ে একটি বৃত্ত আঁকার পর বৃত্তের ভিতর বন্দী লাটিমগুলোকে রাখা হয়। বৃত্তের ভিতরের লাটিমগুলিকে বাইরের মুক্ত প্রতিযোগীদের লাটিম দিয়ে আঘাত বা কোপ মেরে ক্ষত করাই এই লাটিম খেলার উদ্দেশ্য।
ঘুরতি কোপ
প্রতিযোগীদের মধ্যে একজন লাটিম ঘুরিয়ে দেয় আর অন্যরা তাদের লাটিম ঘুরিয়ে ওটাকে আঘাত করার চেষ্টা করে।এভাবে সবাই একবার করে ঘোরায়।
৯০ দশকে লাটিম ঘুরানোর খেলা ও প্রতিযোগীতা গ্রামে-গঞ্জে, শহরে খুবই উদ্দীপনার সাথে উদযাপন করা হত। ৬-১৮/১৯ বছরের ছেলে-পেলেরা এই নিয়ে খুবই মেতে থাকতো। তবে কালের বিবর্তনে লাটিম খেলার চল অনেকটাই কমে গেছে। তবে বর্তমানে লাটিম নতুন সংস্করণ ফ্রিডজেড স্পিনার নামক একটি খেলনা শিশু-কিশোরদের মাঝে খুবই জনপ্রিয়, যার অনেকটাই মিল রয়েছে লাটিম এর সাথে।