বাচ্চা কাহিনী (পর্ব ২)

112-1121127_cute-kids-cartoon-kids-playing-clipart-hd

লেখক- এন.এন.নিঝুম

(১ম পর্বের পর)

তো যা বলছিলাম। সুইডেনে এক বাংলাদেশি ভাইয়ের(শাফকাত) বাসায় দাওয়াত ছিল শহরের অন্যান্য বাঙালিদের। যে ভাইয়ের বাসায় দাওয়াত ছিল তার ২.৫ বছরের ছেলে ধ্রুব, সোফার সামনে বসে আরো বাচ্চাদের সাথে খেলছিল, হঠাৎই শফিক ভাইয়ের পকেট থেকে কিছু একটা নিচে পড়ে যাওয়ায় সেটা তোলার জন্য উনি ঝুঁকে নিচু হন। এমন মুহুর্তে উনার পশ্চাৎদেশ ধ্রুবর বরাবর চলে আসলে সে অবাক হয়ে বলে উঠে- পাপা, দেখ আংকেলেরো পাছা আছে!!

সুইডেনের আরেকটি মজার কথা মনে পড়ল। আমি যাওয়ার দুই সপ্তাহ পর বাংলাদেশ থেকে এক মেয়ে আসলো- রূম্পা নাম। তাকে একদিন আমাদের বাসায় নিয়ে আসলাম। আমার বন্ধুর ভাগনি জাহারা হঠাৎ তাকে দেখেই হাসতে হাসতে খুন। আমি আর সে দুজনেই অপ্রস্তুত। জাহারার হাসি আর থামছেই না। “মা দেখ ওর নাম রূম্পা, হা হা হা, রূম্পা হা হা”। আমরা মুখ চাওয়া চাওয়ি করছি। তখন দেখি ওর মা ও হাসে, ব্যাপার কি!! উনি যা বললেন তা ভয়াবহ, সুইডিশ ভাষায় রূম্পা মানে পশ্চাৎদেশ, বাংলায় যাকে পাছা বলে তা আর কি!!

আমার বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি চাঁদপুর গেলাম কয়েকদিনের জন্য। বউ দেখতে আসছে অনেকেই। পাশের বাসার এক আন্টি আসলেন। উনাকে দেখেই আমার ননদের অতি কিউট মেয়ে প্রমিতি(৬) আমার কানে কানে বলল- মামি এই নানুর একটা মজা আছে। উনাকে তুমি যা খুশি বল উনি কিচ্ছু মনে করবেনা, রাগ ও করবেনা। আমি বুঝিনি ব্যাপারটা। সে দেখি উনাকে ইচ্ছামত বকাবকি করছে হাসিমুখে-“উফফ, প্রত্যেকদিন আসতে হবে তার, বিকাল হলেই আসে। এইসময়েই টম এন্ড জেরি হয় আর উনি এসে বসে থাকে, সিরিয়াল দেখে। আবার চা খাবে বারেবার।….” ঐ আন্টি এসব কথার জবাব না দিয়ে বলেই চললেন- ওরে আমার সোনারে, তোর নানু কই। নতুন মামিরে বল চা বানাইতে… প্রমিতি বলল দেখছ বড় মামী বলেছিলাম না।! এমন সময় আমার শাশুড়ী এসে বলল- বউ, উনি তোমার খালাম্মা হয়, কানে শুনেনা ঠিক মতো, তুমি উনার কাছে গিয়ে বসে কথা বল। আমি তখন পুরাই মাননীয় স্পিকার হয়ে গেছি😜😜😜আর প্রমিতি দেখি উনাকে বকেই যাচ্ছে…কানে শুনেনা তাও সিরিয়াল দেখতে আমাদের বাসায়ই আসতে হবে….।

আমি ছোটবেলায় মোটামুটি ভেন্দা টাইপ বাচ্চা ছিলাম। যে জায়গায় বসায় রাখতো সেখানেই নাকি বসে থাকতাম। সেই আমিও এক এডাল্ট জোক করে ফেলেছিলাম। ব্যাপারটা ১৯৮৮-৮৯ এর দিকে হবে, জীবনে প্রথমবারের মত হিন্দি সিনেমা দেখলাম- ম্যায়নে পেয়ার কিয়া। সিনেমার এক গান আমাকে মহিত করল, সেখানে নায়ক-নায়িকার এক অন্তরঙ্গ দৃশ্য দেখে আমার এতই ভাল্লাগলো যে আমি আমার আব্বুকে বলে ফেলেছিলাম- আব্বু আম্মুকে এমনে আদর করো।

আজকের(২৯/০৪/১৭) আরেক দূর্রদান্ত পিচ্চির সাথে দেখা চাঁদপুরের লঞ্চে। আমাদের পাশের কেবিনের জানালা দিয়ে মুখ বের করে আমার মেয়ে(১১ মাস)র সাথে কথা বলছিল ক্লাস টু-তে পড়ুয়া পূর্নতা। আমি দেখলাম সামনেএ দাতেঁ ক্যাভিটি( সোজা বাংলায় পোকায় খাওয়া)। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, মা তোমার দাঁত পোকায় খেল কিভাবে? তার উত্তর- জানেন ছোটবেলায় আমার দাঁত এমন ছিল না, দুধ-ভাত দিয়ে দিয়ে মা এমন করছে, উদাস কন্ঠে জানাল সে। এমন সময় মূল আসামী, পূর্নতার মায়ের আবির্ভাব। তিনি বললেন কী বললি আবার বল!! স্মার্ট পূর্নতার উত্তর- না আন্টিকে আমার ছোটবেলার গল্প বলছিলাম

আরেকবার এক ঘরোয়া জন্মদিনের অনুষ্ঠানে আরবাজ সাহেবের ছেলে ফাওয়াজ বেলুন ফাটার আওয়াজে বলে উঠল- মা, বাবা আবার পাদু দিছে, তুমি না বলছিলা সবার সামনে বাবা কে জোরে পাদু দিতে না। বলাবাহুল্য, পুরো অনুষ্ঠানে ফাওয়াজের বাবা কে আর দেখা গেলনা, তার বন্ধুরা তার নাম দিল- পাদবাজ।

আমি তখন সাভারের একটি স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ। স্কুলটি গোলাপ গ্রামের কাছে।  সকালে অফিস থেকে দেয়া গাড়ী করে নামছি, এমন সময় নার্সারির রাইয়্যান দৌড়ে এসে একটা গোলাপ ফুল দিয়ে বলল- বড় ম্যাডাম, আমার ভ্যালেন্টা হইবেন। এমনই রোমান্টিক আরেক পিচ্চি আমার এক অতীব সুন্দরী কলিগ কে বলেছিল- ইউ আর মাই ছাম্মাক ছাল্লু…

শেষমেশ আমার কাজিন আশার একটি ঘটনা বলে শেষ করছি। আমার মামী মানে আশার মায়ের লম্বা চুল ছিল, মামী শখ করে প্রথমবারের মত চুল স্টাইল করে কাটতে পার্লারে গেলেন, সংগী দস্যি আশা। আশা চুপচাপ চুল কাটা দেখছিল। মামি, খুব সুন্দরী ছিলেন। সামনের চুল কাটার পর তাকে আরো সুন্দর লাগছিল, আশা ব্যাপারটা ভালভাবে নিতে পারেনি, তার মায়ের এতসুন্দর চুল নাপতেনি কেটে নিয়েছেন- ঘোর অন্যায়, এটা তার মনে ব্যাপক কষ্ট দিল। সে সুযোগ বুঝে পার্লার ছাড়ার আগ মুহুর্তে কামড়ে সেই নাপতেনির মাংস প্রায় তুলে নিয়ে আসলো, বেচারি কে উচিৎ শিক্ষা দিয়ে আশা যে উত্তম-মধ্যম খেয়েছিল তা আর বলার না। এরপর থেকে আশা ভাল কাজ করা ছেড়ে দিয়েছে কিনা কে জানে।

মন্তব্য (1)

মন্তব্য করুন