অসমাপ্ত আত্মজীবনী

attojiboni copy2

লেখকঃ শেখ মুজিবুর রহমান

প্রকাশঃ ২০১২

বাংলাদেশ ভূ-খণ্ডের স্বাধীনতা স্বপ্নদ্রষ্টা ও রূপকার ‘বঙ্গবন্ধুর’ বর্নাঢ্য জীবনে নানান প্রেক্ষাপট, ঘটনা উপলব্ধির সাবলীল বহিঃপ্রকাশের অনন্য আর অনবদ্য লেখনি “অসমাপ্ত আত্মজীবনী”, বঙ্গমাতা অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনির উৎসাহে আর বন্ধু ও সহকর্মীদের অনুরোধে ১৯৬৭ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় জেলে অন্তরীন অবস্থায় লেখা তার আত্মকাহিনীটা অসমাপ্তই রয়ে যায় তাঁর ইতিহাসের বর্বরতম হত্যাকাণ্ডে। পরবর্তীতে তাঁর সুযোগ্য কন্যাদ্বয় শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার ঐকাত্তিক প্রচেষ্টায় সংকলিত কপিটি ২০১২ সালের জুন মাসে বাংলা,আরবি, হিন্দিসহ অনেকগুলো ভাষায় একসাথে প্রকাশিত হয়।

বঙ্গবন্ধুর মত মহান একজন নেতার জীবনগাঁথার জন্য একটি বই সত্যই কম। তারপরও বঙ্গবন্ধুর নিজকলমে অত্যন্ত বিনয়ী আর সাবলীল উপস্থাপন লেখক হিসেবেও তাঁর দক্ষতাকে তুলে ধরে, বঙ্গবন্ধুর “অসমাপ্ত আত্মজীবনী” তে যে বিষয়টি আমাকে সবচেয়ে আন্দোলিত করেছে তা হলো অপরাপর লেখকদের মত নিজের কর্ম ও আদর্শকে “গ্লোরিফাই” করা নয় বরং একজন সূক্ষ্মসাহিত্যিকের সত্য সময় পরিভ্রমণের বাচনিক প্রচেষ্টা যেখানে কোন অতিরঞ্জন নেই।

মূলত ১৯৩৪ থেকে ১৯৫৫ সালের প্রেক্ষাপটে সাবলীল উপস্থাপনায় পাঠকের মানসপটে ভেসে উঠবে তৎকালীন গ্রামবাংলার চিত্র আর এক কিশোরের মুখ, যে মুখ হাজার মুখের মুখপাত্র হয়ে বলে গেছে মেহনতি মানুষের কথা, স্বাধীনতার কথা। যে কিশোর অন্যায়ের সাথে কখনো আপোষ করেনি। সুভাষ চন্দ্রবসুর ভক্ত শহীদ সহরোয়ার্দীর ভাবশিষ্য বঙ্গবন্ধু অন্যায়ের প্রতিবাদে জেল খেটেছেন অতি অল্প বয়সে তবুও মাথা নিচু করেননি। মানুষের জন্য, স্বাধীনতা আর অস্তিত্বের জন্য তিনি হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেছেন আজীবন। মানুষের জন্য, দেশের প্রয়োজনে তিনি ঘুমিয়েছেন চাকরদের কামরায়, থেকেছেন বেকার হোস্টেলে, নিজের চেয়ে ভালবেসেছেন মানুষকে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঊর্ধ্বে তিনি মনুষ্যত্বের জয়গান গেয়েছেন। অসাধারণ বর্ননার পাশাপাশি শব্দ চয়নে বইটির সাহিত্যিক মাত্রা অতিক্রম করে গেছে যেকোন পেশাদার সাহিত্যিকের লেখনীকেও। বঙ্গবন্ধুর হার না মানা দৃঢ়তা আর তোষামোদী প্রবণতাকে ঘৃণা করার আদর্শ আপনাকে শেখাবে নতুন করে দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর সাহস। কাহিনীর ঠাস বুননে আপনি সময় পরিভ্রমন করে আসবেন বৃটিশ বাংলা , পরবর্তী দেশ বিভাগ আর স্বাধীনতার স্বপ্নবোনার সময়ে তাও আবার বাংলার ইতিহাস লিখে দেয়া শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালীর হাত ধরে।

একজন আদর্শ রাষ্ট্রনায়ক, অসম্প্রদায়িক, আবেগী নেতা যিনি আজন্ম ভালবেসেছেন মানুষ আর দেশ মৃত্তিকাকে। ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত লিখেছেন, এরপর দেশের জন্য বেছে নেয়া সংগ্রামী জীবন আর অত্যাচার আর মিথ্যামামলার কড়াঘাতে অসমাপ্ত থেকে যাওয়া আত্মজীবনীর নামকরনের স্বার্থকতা সেখানেই।

নিরপেক্ষ লেখনী আর প্রবল দেশপ্রেমে ভরা সহজপাঠ্য লেখনী অতিক্রম করেছে কালের সীমানা। আর তাই বঙ্গবন্ধুর “অসমাপ্ত আত্মজীবনী” একটি অবশ্যপাঠ বলে আমি বিশ্বাস করি

-এন.এন.নিঝুম

মন্তব্য করুন