
লেখকঃ এন এন নিঝুম
আমি বাচ্চাকাচ্চা ভীষন ভয় পাই। এরা যেমন সত্যবাদী তেমনি বিচ্ছু। যাই হোক, আমার এক বন্ধু(ছেলে) র বাসায় গেছি, প্রায়ই যেতাম ওর বাসায়। ওর ৪ বছরের ছোট বোনকে কোলে নিয়ে আদর করছি, সে আহ্লাদে গদগদ হয়ে বলে- “তুমি কী ভাইয়ার গার্ল ফ্রেন্ড?” আমরা তখন প্রেম প্রেম ভাবের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, প্রেম জমে উঠেনি তখনো। লজ্জা পেয়ে বললাম, না তো আমরা শুধুই বন্ধু। সে বলে- শারমায়ো মাত, ইয়ে সাব বাহানা হ্যায়!!আমি আর লজ্জা পাবো কী, হতবাক হতে হতে হার্টফেল করার অবস্থা।
ইদানীংকালে বাচ্চারা সব পাকনা ঝুনা একেকটা আর ডোরমন আর মা-দাদীর হিন্দী সিরিয়াল প্রেমের কারনে হিন্দী এক্সপার্ট। আমার মামাতো বোন সুহা আরেক কাজিনের নিউবর্ন বাচ্চা কাদঁলেই বলতো-“আহীর বাবা রোতা নেহি”।
ইতালি গিয়েছিলাম আমার ছোট খালার বাসায় বেড়াতে, আমার আড়াই বছরের খালাতো ভাই আমাকে সারাক্ষণ থ্রেটের উপর রাখতো, তার মন মত কাজ না করলেই বলত- আপনি আমার সাথে না খেললে আপনার গায়ে হিসু করে করে দিব!! এই খালাতো ভাই আবার মহা স্মার্ট ছিল, এদের বাসায় দুইমাস বেড়িয়ে আমি সুইডেন ব্যাক করছিলাম, সেমিস্টার ধরবো বলে। হঠাৎ আমার ব্যাগে দেখি তার রাইমসের বই, তার যুক্তি ছিল-“আপনি তো পড়তেই যাচ্ছেন, আমার বইগুলাও পড়ে দিয়েন”
সুইডেনে আমার চুল বয়কাট ছিল। থাকতাম আমার বান্ধবি আর তার বোনের সাথে। বোন ছিল সিংগেল মাদার। আমার বান্ধবির পাঁচ বছরের ভাগ্নীর ধারনা হয়েছিল আমি ছেলে। তাই সে এক মাঝ রাতে, আমাকে ঘুম থেকে তুলে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল। বলেছিল-” আমি ছাই( সে চ উচ্চারণ করতে পারত না) তুমি আমাকে বিয়ে কর নিঝুম আন্টি। বিয়ের কথা বলতেই মনে পড়লো আরেক পিচ্চির কথা, আমার খালাতো বোন হৃদি তার মা কে ছোটবেলায় বলতো- তুমি আমাকে ভালবাসো? তার মা বলতো অবশ্যই। সে বলতো তাহলে আমাকে বিয়ে করে ফেলো। ওর মা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো এইসব কে শিখিয়েছে? সে বলল কেন নাটক দেখে কিচ্ছু শিখোনি মা?
আমার সেই দুষ্টু মামাতো বোন সুহা এক বিয়েতে বর দেখে সবার সামনে চিৎকার করে বলছিল- আয়হায়, সোমা আপুর বর কী কালা!!(কালো)। জানিনা বরের কী হাল হয়েছিল কিন্তু সুহার কপালে কী মার জুটেছিল তা আর না বলাই ভাল।
পরিচিত এক পিচ্চি তার গ্রাম থেকে আসা এক চাচার লুঙ্গী বাজারের মাঝে খুলে দৌড় দিয়েছিল। সেই চাচা পারতপক্ষে আর ঢাকায় আসেনি, যেন সে বুঝেই গেছে ঢাকায় গেলে তার আর কিছুই ঢাকা থাকবেনা। আমার মামাতো বোন আশা ভয়াবহ দুষ্টু ছিল, সে ছিল আমার চেয়ে বয়সে ১০ মাসের ছোট। তো একদিন আমাদের দুজনেরই চুল ছেটে দেয়া হল, আমাদের বয়স তখন ৪ এবং ৫। সে বিকালে বেড়াতে যাবার সময় দেখে তার আর ঝুটি হচ্ছেনা, সেই থেকে ভাঙা টেপ রেকর্ডারের মত কাদঁতেই থাকলো- ঝুটি ছোট করলা ক্যান, চুল লাগায় দাও, ঝুটী ছোট করলা ক্যান…।
বললাম যে পিচ্চিরা ভীষন সত্যবাদী, এমন সত্যবাদী এক পিচ্চি গেছে মামার জন্য মেয়ে দেখতে।। মেয়ে বেশ পছন্দ হওয়ায় আহ্লাদ করে তার মা বলছিল- দ্যাখো তো মা তোমার মামী পছন্দ হয়েছে? পিচ্চি বলল এইটা মামি হবে ক্যান, তাইলে বন্নি আন্টির কী হবে?? পিচ্চির সত্যবাদীতার জোড়ে সে বার বন্নী আর মাহমুদের বিয়েটা হতে বাধ্য হয়েছিল। এমনই এক পিচ্চি একবার আমাকে বাচিঁয়েছিল, এলাকায় বদরুল ভাই বহুদিন ধরেই ছোক ছোক করছিল আমার পিছে, একদিন আমি আর মেধা( ৫ বছরের ভাগ্নি) যাচ্ছি। সে মেধা কে দেখেই খাতির জমানোর চেষ্টা করলো, তাকে কোলে নিয়ে মামনি কেমন আছ? তোমার আন্টিকে বল না সে কী আমাকে আদর করে? এমন সময় মেধা হাত-পা ছুড়ে চিৎকার শুরু করলো- কি গন্ধ, কী গন্ধ, আংকেল তোমার মুখে কী গন্ধ!! এরপর থেকে আমার ত্রিসীমানায় আর বদরুল ভাই কে দেখিনি।
আমার ছোটখালা চমৎকার গান করতেন। এক পিচ্চি তাকে এক অনুষ্ঠানে রিকোয়েস্ট করে বসল একগানে- “পিংকি রাতে সাজ প্রভাতে” গানটি গাইবার। আমার খালা কিছুতেই এই গানটি শুনেছেন বলে মনে করতে পারলো না, পরে পিচ্চির মা যে গানটি শোনালেন সেটি হল- দিন কী রাতে সাঝ প্রভাতে” মিতালী মুখার্জির গাওয়া। এমন হাজারো গল্প আছে, আমাদের আব্দুল্লাহ ছোটবেলায় সোহাগ চান, বদনী ধনি… এই গানটাকে গাইতো- মনা চার পা তুলে তুলে নাচোতো দেখি!
Excellent writing