গুয়াতেমালা নগরী (আমেরিকা)

Guatemala_City_sights_(6849856438)

গুয়াতেমালা নগরী মধ্য আমেরিকার রাষ্ট্র গুয়াতেমালার রাজধানী ও বৃহত্তম শহর।এটি প্রশাসনিকভাবে দেশটির দক্ষিণ মধ্যভাগে গুয়াতেমালা জেলার গুয়াতেমালা পৌরসভাতে অবস্থিত। ভৌগোলিকভাবে এটি একটি আগ্নেয় উচ্চভূমির ভ্যালে দে লা এর্মিতা (Valle de la Ermita) নামক উপত্যকাতে সমুদ্র সমতল থেকে ১৪৯৩ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। এর জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ পার্বত্য প্রকৃতির। গুয়াতেমালা নগরী দেশটির প্রধান অর্থনৈতিক, পরিবহন ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। দেশের সিংহভাগ শিল্পোৎপাদন কারখানাগুলি এই শহরে বা এর চারপাশের শহরতলীতে অবস্থিত। এখানে প্রায় ৯ লক্ষ ৪২ হাজার লোকের বাস।বৃহত্তর গুয়াতেমালা মহানগর এলাকাতে প্রায় ২০ লক্ষ লোক বাস করে। জনসংখ্যার বিচারে এটি সমগ্র মধ্য আমেরিকার বৃহত্তম শহর। এর পূর্ণ সরকারী নাম নুয়েবা গুয়াতেমালা দে আসুনসিওন (Nueva Guatemala de la Asunción)।

গুয়াতেমালা নগরীতে ১৬৭৬ সালে (পুরাতন গুয়াতেমালা শহরে) প্রতিষ্ঠিত গুয়াতেমালার সান কার্লোস বিশ্ববিদ্যালয় দেশটির সর্বপ্রধান শিক্ষাকেন্দ্র। এখানে ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত ফ্রান্সিসকো মাররোকিন বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৮৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত জাতীয় সঙ্গীত মহাবিদ্যালয় অবস্থিত। এছাড়া কারিগরি, বাণিজ্যিক ও সামরিক শিক্ষার প্রতিষ্ঠানও আছে। এখানে বেশ কিছু পুরাতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক জাদুঘর এবং ভূগোল ও ইতিহাস সমিতির কার্যালয় আছে। জাতীয় পুরাতাত্ত্বিক জাদুঘরে মায়া সভ্যতার অনেক নিদর্শন আছে। কেন্দ্রীয় চত্ত্বরের কাছে জাতীয় সংস্কৃতি প্রাসাদ অবস্থিত।

দর্শনীয় সরকারী ভবনগুলির মধ্যে আছে জাতীয় প্রাসাদ (১৯৪৩), প্রধান ডাকঘর, পুলিশের প্রধান কার্যালয়, জাতীয় সংরক্ষণাগার, জাতীয় গ্রন্থাগার, অত্যাধুনিক নাগরিক কেন্দ্র স্থাপনা সমবায় যার কেন্দ্রে নগরভবন এবং একটি বাজার আছে।

প্রধান ধর্মীয় স্থাপনাগুলির মধ্যে আছে কেন্দ্রীয় চত্ত্বরে (Plaza Mayor প্লাসা মাইয়োর) অবস্থিত মহাগির্জা বা ক্যাথেড্রাল (১৮১৫); কিছু ক্ষয়ক্ষতির পরে ক্যাথেড্রালটিকে ১৯৭৬ সালে আংশিক পুনর্নির্মাণ করা হয়। এখানে প্রচুর ঔপনিবেশিক আমলের চিত্রকর্ম ও ধর্মীয় খোদাইয়ের কাজ আছে। আরও আছে সান ফ্রান্সিসকো , সান্তো দোমিঙ্গো ও লা মের্সেদ নামের গির্জাগুলি। সান্তো দোমিঙ্গো গির্জাটি এর পবিত্র সপ্তাহব্যাপী মিছিলের জন্য সমগ্র মধ্য আমেরিকা অঞ্চলে বিখ্যাত। লা মের্সেদ গির্জাটি ঔপনিবেশিক আমলে প্রথম নির্মিত হয় এবং ১৯১৭ সালে এটিকে পুনর্নির্মাণ করা হয়।

নগরীর অন্যান্য আগ্রহজনক স্থানের মধ্যে আছে মিনের্ভা উদ্যানে গুয়াতেমালার কংক্রিট-নির্মিত ত্রিমাত্রিক ভূ-সংস্থানিক মানচিত্র (১৯০৫); ঔপনিবেশিক আমলের জলপরিবহন প্রণালী; মধ্য আমেরিকার অলিম্পিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার জন্য নির্মিত অলিম্পিক নগরী (১৯৫০) এবং শহরের কাছেই একাধিক উল্লেখযোগ্য মায়া সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। শহরের দক্ষিণ দিকের পথ ধরে সক্রিয় পাকায়া আগ্নেয়োগিরিতে পৌঁছানো যায়।

গুয়াতেমালা নগরীর কাছে চিনাউতলা গ্রামে হস্তনির্মিত মৃৎশিল্পদ্রব্য পাওয়া যায়। মিক্সকো গ্রামে শহরকে সরবরাহ করার জন্য ফল ও সবজির চাষ হয়। আরও আছে আদিবাসী আমেরিকান শহর সান পেদ্রো ও সান হুয়ান সাকাতেপেকেস। এগুলি সবই ১৯৭৬ সালের ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়। ২০০০ সালে নিকটবর্তী পাকাইয়া আগ্নেয়গিরিটি অগ্ন্যুৎপাত শুরু করলে বেশ কিছু গ্রাম থেকে অধিবাসীদেরকে সরিয়ে নেওয়া হয়

মন্তব্য করুন