
এ বছরের আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন বাংলাদেশের নড়াইল জেলার কিশোর সাদাত রহমান (১৭)।শিশুদের অধিকার ও নিরাপত্তার বিষয়ে অবদানের জন্য নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক সংগঠন ‘কিডস-রাইটস’ প্রতিবছর এ পুরস্কার দিয়ে থাকে।
সংগঠনটির ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, এ বছর ৪২টি দেশের ১৪২ জন প্রতিযোগীর মধ্যে এক্সপার্ট কমিটি সাদাতকে নির্বাচন করেছে।
শুক্রবার নেদারল্যান্ডের হেগে এক অনুষ্ঠানে মানবাধিকার কর্মী ও নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাই সাদাত রহমানের নাম ঘোষণা করে তার হাতে বিজয়ীর পুরস্কার তুলে দেন। অনলাইনে শিশু নির্যাতন বন্ধে সচেতনতামূলক অ্যাপ ‘সাইবার টিন’ বানানোর স্বীকৃতি হিসেবে ১৭ বছর বয়সী সাদাতকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
এএফপির খবরে বলা হয়, বাংলাদেশের ১৭ বছর বয়সী সাদত রহমান সাইবার বুলিং ও অনলাইন ক্রাইমের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত পদক্ষেপ নিয়েছে।
২০০৫ সালে রোমে অনুষ্ঠিত নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ীদের এক শীর্ষ সম্মেলন থেকে এই পুরস্কার চালু করে ‘কিডস-রাইটস’ নামের একটি সংগঠন। শিশুদের অধিকার উন্নয়ন ও নিরাপত্তায় অসাধারণ অবদানের জন্য প্রতিবছর আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়। ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সীরা ওই পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য। গত বছর সুইডেনের শিশু পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ ও ক্যামেরুনের ডিভিনা মালম যৌথভাবে মর্যাদাপূর্ণ ওই পুরস্কার পান। ২০১৩ সালে এই পুরস্কার বিজয়ী মালালা ইউসুফজাই পরের বছর জয় করেছিলেন নোবেল।
পুরস্কার বাবদ এক লাখ ইউরো জিতে নিলেও সাদাত এএফপিকে জানায়, তার অ্যাপ ডেভেলপ করার কাজেই এ অর্থ ব্য করা হবে।
১৭ বছর বয়সী সাদাত মেক্সিকান বালিকা ওর্তেগা সেটে (১২) এবং আইরিশ তরুণী সেইনা ক্যাস্টেলনকে হারায়। ওর্তেগা পানি দূষণ প্রতিরোধ এবং সেইনা অটিজম নিয়ে কাজ করছিল।
সাদাত এএফপিকে বলে, এখনই জরুরি ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। তরুণরা অনলাইনের অপরাধের ক্ষেত্রে খুবই নাজুক অবস্থায় রয়েছে। বিশেষত আমাদের সময়ে।
সাদাত নড়াইল আবদুল হাই সিটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। সাদাত রহমান ও তার দল সাইবার বুলিং ও সাইবার ক্রাইম থেকে শিশু-কিশোরদের রক্ষায় নানা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
সাদাত সম্পর্কে কিডস রাইটসের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, সাদাত একজন ‘তরুণ চেঞ্জমেকার’ ও সমাজসংস্কারক। সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়ে এক কিশোরীর (১৫) আত্মহত্যার পর কাজে নামে সাদাত। সে তার বন্ধুদের সহায়তায় ‘নড়াইল ভলেন্টিয়ারস’ নামের একটি সামাজিক সংগঠন শুরু করে। এই সংগঠন বেসরকারি সংস্থা একশনএইডের ‘ইয়ুথ ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ–২০১৯’–এ বিজয়ী হয়ে তহবিল পায়।
এই তহবিলের মাধ্যমে তারা ‘সাইবার টিনস’ মোবাইল অ্যাপ তৈরি করে। এই অ্যাপের মাধ্যমে কিশোর–কিশোরীরা জানতে পারে কীভাবে ইন্টারনেট দুনিয়ায় সুরক্ষিত থাকতে পারে। প্রায় ১ হাজার ৮০০ কিশোর–কিশোরী এই অ্যাপ ব্যবহার করছে। এই অ্যাপের মাধ্যেম ৬০টির বেশি অভিযোগের মীমাংসা হয়েছে এবং ৮ জন সাইবার অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত হয়েছে। বর্তমানে সাদাত ‘সেফ ইন্টারনেট, সেফ টিনএজার’ নামের একটি কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। সে এবং তার বন্ধুরা ইন্টারনেট নিরাপত্তা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে স্কুলে স্কুলে সেমিনার–কর্মশালা করছে।
সাদাত আরো বলে, অনলাইন বুলিংয়ের শিকার ১৫ বছর বয়সী এক কিশারীর আত্মহত্যার ঘটনার পর আমি এ কাজ শুরু করি। আমি সিদ্ধান্ত নিই তরুণদের সহায়তা দরকার এবং আমাদের এমনভাবে কাজ করা উচিত যাতে অন্য শিশুদের এ করুণ পরিণতি না হয়। অনেক ক্ষেত্রে শিশু-কিশোররা বড়দের দ্বারা যৌন নিগ্রহের শিকার হয়, যার মধ্যে রয়েছে তাদের কাছে পর্নো ছবি বা ভিডিও পাঠানো।
নিজের পুরস্কারের টাকা দিয়ে সাদাত বিশ্বব্যাপী শিশুদের সুরক্ষার একটি মডেল তৈরি করতে চায় বলে জানায়।
সাদাত রহমানকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তার প্রশংসা করেছেন নোবেলবিজয়ী আর্চ বিশপ ডেসমনড টিটু। তিনি এএফপিকে বলেন, এই অদ্ভূত সময়ে যখন মনে হচ্ছে সব কিছু সংশয়ের মধ্যে আছে, তখন একদল তরুণ অন্যদের জন্য নিজেকে নিয়োজিত করে আমাদের সবাইকে আশাবাদী করে তুলছে পৃথিবীটাকে বাসযোগ্য করে তুলতে।